আফতাব আহমেদঃ সম্ভাবনাময় এক ধ্রুবতারার আচমকা পতন

আফতাব আহমেদ, এক সময়ের বাংলাদেশ দলের বেস্ট ফিনিশার। বাংলাদেশকে নিজের ব্যাটিং নৈপুণ্যের মাধ্যমে বহু ম্যাচ জেতাতে ভূমিকা রেখেছেন আফতাব আহমেদ। আফতাব এর মারকুটে ব্যাটিং শৈলী মুগ্ধ করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষদের।

২০০৫ সালে কার্ডিফে প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারানো , ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো কিংবা ২০০৭ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বধ এই সবগুলো ঐতিহাসিক বিজয়েই আফতাব আহমেদের ভূমিকা ছিলো অবিস্মরণীয়।

আফতাব আহমেদঃ সম্ভাবনাময় এক ধ্রুবতারার আচমকা পতন
২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আফতাব

[ আফতাব আহমেদঃ সম্ভাবনাময় এক ধ্রুবতারার আচমকা পতন ]

আফতাবের জন্ম ও শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামে। তার প্রথম বিদ্যালয় সেন্ট মেরি স্কুল। শুরুর দিকে আফতাবের আন্তর্জাতিক খেলার প্রতি তেমন টান ছিল না, এমনকি তিনি এটাকে নির্যাতন বলেও মনে করতেন। পরিবার ও বন্ধুবান্ধব থেকে দূরে থাকতে হবে ভেবে তিনি বিকেএসপিতে ভর্তি হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার পিতা ক্রীড়ামোদী ছিলেন এবং তার ছেলেকে ক্রিকেটার বানাতে অত্যন্ত উৎসাহী ছিলেন।

আফতাব তার ক্রিকেটীয় জীবন সম্পর্কে উৎসাহী ছিলেননা এবং তার ক্রিকেট ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসার ঘটনাও রয়েছে। দলে সুযোগ না পাওয়ার কারণে তার মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমি অনেক বার ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলাম, কিন্তু কখনো দলে ঢুকতে পারিনি।” শেষ পর্যন্ত প্রতীক্ষার অবসান ঘটে এবং তিনি দলে সুযোগ পান। তার পিতা ১৯৯৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলাকালে মারা যান।

টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরু টা মোটেও ভালো হয়নি আফতাবের। নিজের টেস্ট অভিষেকের আগে দক্ষিন আফ্রিকার বিরুদ্ধে আফতাব আহমেদের হয়েছিলো টেস্ট অভিষেক।

অভিষেক রাঙাতে পারার আফতাব নিজের টেস্ট ক্যারিয়ার ও রাঙিয়ে যেতে পারেননি ক্রিকেটাঙ্গন কে বিদায় বলে দেওয়ার আগে৷ আফতাবের টেস্ট অভিষেক হয়েছিলো ২০০৪ সালের ১২ অক্টোবর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজ শহর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে।

নিজের প্রথম ইনিংসে আফতাব খেলেছিলেন ৩৯ বলে ২০ রানের একটি ছোট ইনিংস ৩ টি চারের সৌজন্যে।

এরপর ২য় ইনিংসেও পুনরাবৃত্তি করলেন ইনিংস বড় না করতে পারার আক্ষেপে পুড়ে৷ হয়তোব এখনো তাই পুড়েন! টেস্ট ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার টা উজ্জল নয় আফতাব আহমেদের।

হার্ড হিটার এই ব্যাটসম্যান সবসময় চাইতেন বাউন্ডারি হাকিঁয়ে রানের চাকা কে সচল রাখার৷ কিন্তু আফতাবের এই ধর্ম যে ছিলো হিতের বিপরীত তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারে মাত্র ১ টা টেস্ট অর্ধশত।

নিজের একমাত্র টেস্ট অর্ধশত টিও আফতাব করেছিলেন ওয়ানডে ম্যাচের ভঙ্গিমায়। তখন ২০০৫ সালে চলছিলো বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচ। সেই ম্যাচে আফতাব আহমেদ করেছিলেন ৮২ সেটিও আবার ৮২ বল মোকাবেলার মাধ্যমে। সাথে ছিলো ১৩ টি চার এবং ১ টি ছক্কার মার। অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার ক্রিজে ছিলেন ১০২ মিনিট সময়! হিটিং এবিলিটি আমাদের ও আছে এর সল্প প্রমাণ তৎকালীন সময়ে আফতাব আহমেদ রেখে গিয়েছিলেন।

আফতাব আহমেদের ১৬ টেস্টে ছোট এই ক্যারিয়ারে ৩১ ইনিংস ব্যাট করে আফতাব আউট হয়েছেন ২৮ ইনিংসে৷ কিন্তু অবাক করে দেওয়ার মতো ব্যাপার হচ্ছে ২৮ আউটের মধ্যে আফতাব ১৯ বার আউট হয়েছেন ক্যাচ তুলে। ১৯ ক্যাচের মধ্যে ৭ টি ছিলো উইকেট রক্ষকের হাতের ক্যাচ।

অবাক করা বিষয় মাত্র ২ বার আউট হয়েছিলেন বোল্ড আউট হয়ে। ২০০৪ সালে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স যেমন বিভিষিকাময় ছিলো তেমনি ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শুরু টা আফতাবের ছিলো একেবারেই নিষ্প্রভ এবং নিষ্প্রাণ।

আফতাব আহমেদঃ সম্ভাবনাময় এক ধ্রুবতারার আচমকা পতন
২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে আফতাব

ক্যারিয়ারের ১ম ম্যাচ ছিলো ২০০৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দক্ষিন আফ্রিকার বিরুদ্ধে। অভিষেক ম্যাচে কোনো রান করতে পারেননি আফতাব আহমেদ৷ অভিষেকে খালি হাতে ফিরলেও নিজেকে প্রমাণ করতে খুব বেশি সময় নেননি আফতাব। নিজের ক্যারিয়ারের ৪র্থ ওয়ানডে ম্যাচে জ্বলে উঠেছিলেন।

তবে এবার ব্যাট হাতে নয় জ্বলে উঠেছিলেন বল হাতে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ব্যাট হাতে ৪ রান করার পর বল হাতে একাই শিকার করেছিলেন ৫ উইকেট৷ ১৪৮ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নামা কিউইরা সেদিন বেঁচে ছেড়ে দে না কেঁদে বাচিঁ। ইনিংসের ৭ উইকেটের ৫ টি শিকার করেছিলেন আফতাব।

এটিই ছিলো আন্তর্জাতিক আঙ্গনে ১ম বাংলাদেশী হিসেবে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড।

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের ৩ নাম্বার ব্যাটিং পজিশনে খেলেছেন ৩৫ জন ক্রিকেটার। ৩ নাম্বার ব্যাটিং পজিশনে সবচেয়ে বেশী রান আফতাব আহমেদের ৫৪ ইনিংসে ১৩০৩ রান। টেস্ট- ১৬ ম্যাচের ৩১ ইনিংসে ব্যাট করে আফতাবের অর্জন ৫৮২ রান। যেখনে সর্বোচ্চ ৮২ রানের ইনিংস৷ আছে একটি অর্ধশত করা ইনিংস।

আফতাব আহমেদঃ সম্ভাবনাময় এক ধ্রুবতারার আচমকা পতন
২০০৭ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফতাব

ওয়ানডে- ৮৫ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে আফতাব ব্যাট করেছেন ৮৫ ইনিংসেই। রান করেছেন ১৯৫৪। সর্বোচ্চ রান ৯২। ক্যারিয়ারে হাকিঁয়েছেন ৯ টি অর্ধশত! টি২০- ক্যারিয়ারে আফতাব আহমেদ মোট টি২০ ম্যাচ খেলেছেন ১১ টি। ১১ ম্যাচে আফতাবের মোট সংগ্রহ ২২৮ রান। সংগ্রাহের তালিকায় আছে ১ টি অর্ধশত। সর্বোচ্চ রান ৬২।বর্তমানে, কোচিং পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন এক সময়ের এ হার্ড হিটিং ব্যাটার।

Leave a Comment