গলফ খেলার ইতিহাস : বিশ্বে জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো গলফ। মূলত, সব বয়সী মানুষদের মধ্যে এ গলফ খেলা প্রচলিত। গল্ফের উদ্ভব নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে। কোনো ঐতিহাসিকের মতে প্রাচীন রোমান খেলা পাগানিকা, যাতে অংশগ্রহণকারীরা একটি বেঁকানো লাঠি দিয়ে চামড়ার বল মারতে হত, থেকে গল্ফের উদ্ভব। খৃষ্টপূর্ব প্রথম শতকে রোমানদের সাথে এই খেলা গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে ও আস্তে আস্তে আজকের গল্ফের চেহারা নেয়।
এক পক্ষ বলছে, বল ও স্টিকের এই খেলাটির প্রচলন হয় রোমান খেলা ‘পাগানিকা’ থেকে। অন্য একটি পক্ষ বলছে, অষ্টম ও চতুর্দশ শতাব্দীতে চীনে প্রচলিত ছিল ‘চুইওয়ান’ নামের একটি খেলা। এই ‘চুইওয়ান’ থেকেই প্রচলিত হয় গলফ খেলাটি। তবে অধিকাংশের মতে, গলফ খেলার প্রচলন শুরু হয় স্কটল্যান্ডে এবং সময়টি ছিল দ্বাদশ শতাব্দী।

সেখানে মেষ পালকরা কাজের ফাঁকে সময় কাটানোর জন্য পাথর ও লাঠি দিয়ে এই ধরনের খেলা খেলতো। তারা যেই মাঠে মেষ চড়াতো সেই মাঠে খরগোশের গর্ত ছিল। তারা সময় কাটানোর জন্য বর্তমান সময়ের বলের পরিবর্তে পাথর ব্যবহার করতো। আর হাতের কাছে ছিল লাঠি। এই লাঠি দিয়ে পাথরকে আঘাত করে তারা খরগোশের গর্তে ফেলতো। এতেই তারা বিনোদন পেত। আর সেই খেলাটিই কালের বিবর্তনে বর্তমান সময়ের গলফ খেলা।
গলফ খেলার ইতিহাস এবং সরঞ্জামাদি
গলফ হলো বল ও স্টিক এর সূক্ষ্ম দক্ষতার একটি খেলা। এই খেলার মূল লক্ষ্য স্টিক দিয়ে আঘাত করে বলটিকে গর্তের মধ্যে ফেলা। তবে একটি বা দুটি গর্তে নয়। পরপর ৯টি/১৮টি গর্তে বল ফেলতে হয়। তবেই নির্ধারিত হয় জয়-পরাজয়। খেলাভেদে ৯টি বা ১৮টি গর্তে বল ফেলতে হয়। যে খেলোয়ার সবচেয়ে কম শটে নির্ধারিত পরিমাণ গর্তে বল ফেলতে পারে তিনিই বিজয়ী হন।

ক্রিকেট-ফুটবল মাঠের নির্দিষ্ট সীমানা থাকলেও গলফ মাঠের কোনো সীমানা থাকে না। ক্রিকেট-ফুটবলের মতো গলফ খেলার মাঠকে মাঠ বলা হয় না। গলফ খেলার মাঠকে বলা হয় ‘কোর্স’। পরপর অনেকগুলো গর্ত ও টি নিয়ে একটি গলফ কোর্স তৈরি হয়। ‘টি’ হলো যেখান থেকে খেলোয়াড়রা প্রথমবার বলে হিট করেন সেই জায়গাটিকে বুঝায়। এই ‘টি’ মূলত একটি বস্তু। মাটি থেকে বলটি কিছুটা উপরে রাখার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

এই ‘টি’ ও ‘গর্ত’ এর মাঝে যে জায়গাটুকু রয়েছে সেটিকে বলা হয় ‘ফেরাওয়ে’ বা ‘ভালো পথ’। প্রতিটি গর্তের আশে পাশে বিভিন্ন ধরনের পতাকা দেখতে পাওয়া যায়। এগুলোকে বলা হয় ‘রাফ’, ‘হ্যাজার্ডস’ ও ‘পাটিং গ্রিন’। আর গলফ কোর্সে যে উঁচু-নিচু ঢেউ খেলানো জায়গা দেখা যায় সেটিকে বলা হয় ‘ডগলেগ’। সাধারণত এই ‘ডগলেগ’ টি এলাকা থেকে ডান বা বাঁম দিকে বেঁকে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই বাঁক একবার হয়ে থাকে। আবার অনেকক্ষেত্রে এই বাঁক দুবার হয়ে থাকে। দুবার বাঁক হলে তাকে বলে ‘ডাবললেগ’। সাধারণত গলফ কোর্সে ১৮টি গর্ত থাকে। আর যদি ৯ গর্তের কোর্স হয় তাহলে দুবার পাক দিতে হয়।
গলফ খেলতে প্রয়োজন হয় একটি দন্ডের ও একটি বলের। যে দন্ডটি দিয়ে বলকে আঘাত করা হয় সেটিকে বলা হয় ‘স্টিক’ বা ‘ক্লাব’। তবে এই স্টিক আবার বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। যেমন – ড্রাইভার, উড, পাটার। ‘টি’ এলাকা থেকে লম্বা দূরত্বে বল মারার জন্য ব্যবহার করা হয় ড্রাইভার স্টিকটিকে। এটি সবচেয়ে বড় স্টিক।

আর ফেরাওয়েতে দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করার জন্য ব্যবহার করা হয় উড স্টিক। আর সবুজ এলাকাতে বলে হিট করে গর্তে ফেলার জন্য ব্যবহার করা হয় পাটার স্টিকটিকে। একজন খেলোয়াড় তার পছন্দ অনুযায়ী স্টিক তৈরি করতে পারলেও সেগুলো গলফ খেলার নিয়ম মেনে তৈরি করতে হবে। না হলে পরবর্তীতে যদি কোনো ভুলত্রুটি ধরা পড়ে তাহলে খেলা থেকে বহিষ্কার করা হয়ে থাকে।
খেলাটি সম্পূর্ণ অপেশাদার। পেশাদার কোনো খেলোয়াড় এই খেলাটির ধারেকাছেও ভিড়তে পারে না। কোনো খেলোয়াড় যদি এই খেলাটি শেখানো বাবদ বা খেলা বাবদ কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নেন তাহলে সে আর অপেশাদার খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না। তবে গলফারদের পুরষ্কারের মূল্যের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে।
একজন গলফার প্রথমবার ‘টি’ এলাকা থেকে বল মারার পর বলটি থামার পর নির্দিষ্ট ১৮ গর্তে বল ফেলার জন্য যতবার খুশি বলে হিট করতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে সবচেয়ে কম হিটকারীই বিজয়ী হবেন। ‘টি’ এলাকা থেকে হিট করা থেকে শুরু করে পরবর্তী সকল হিটকে বলা হয় ‘লেআপ’ অ্যাপ্রোচ (লম্বা থেকে মাঝারি দূরত্ব), পিচ বা চিপ। বল যখন সবুজ এলাকায় পৌঁছে তখন তাকে বলা হয় ‘পাট’।
আরও পড়ুন:
“গলফ খেলার ইতিহাস এবং সরঞ্জামাদি”-এ 2-টি মন্তব্য