জস বাটলারের সাফল্যের কারণ : জস বাটলার, সম্প্রতি সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে সফল টি টোয়েন্টি ব্যাটার। এবার, আইপিএলে জস বাটলার ব্যাট হাতে করেছেন মোট ৪টি সেঞ্চুরি। রাজস্থান রয়্যালসকে জস-বাটলার নিজের ধারাবাহিক এবং আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে তুলেছেন ফাইনালে।
জস বাটলার এ মুহুর্তে যা করছেন তাকে বলা হয় ” দ্য ফর্ম অব হিস লাইফ”। কিন্তু, প্রশ্নটা আসলে সেখানেই আসে যে একজন ব্রিটিশ ব্যাটার হয়ে সাব কন্টিনেন্টাল কন্ডিশনে আইপিএলের মতো এতো বড় টুর্নামেন্টে কিভাবে তিনি ৪টি সেঞ্চুরি হাকিয়েছেন। সাধারণত দেখা যায়, সাব কন্টিনেন্টাল কন্ডিশনে ব্রিটিশ ব্যাটাররা স্ট্রাগল করে থাকেন।
জস বাটলার যখন ব্যাটিং করেন, তখন লক্ষ্য করলে দেখা যায় তিনি লো ব্যাক লিফটে অর্থাৎ, তার ব্যাটটি তিনি লো তথা অনেক নিচের দিকে ধরেন। সাধারণ দেখা যায় যে, অস্ট্রেলিয়া ,ইংল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়েরা হাই ব্যাক লিফটে ব্যাট করে থাকেন। কিন্তু, জোস বাটলার তাদের থেকে আলাদাভাবে একটু লো ব্যাক লিফটে ব্যাট করে থাকেন যে কারণে সাব কন্টিনেন্টাল কন্ডিশনে তিনি অন্য সকল বিদেশী ব্যাটার থেকে সফল।

[ জস বাটলারের সাফল্য, মূল কারণ ]
জস বাটলার যখন ব্যাটিং করেন তখন শট খেলার ক্ষেত্রে তার ইনটেনশনটা স্ট্রেইট বা সোজা থাকে না। তিনি ব্যাট ধরেন অনেকটা ৪৫ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে এবং এ জায়গাটা তার স্ট্রং জোন। আসলে, জস-বাটলার হচ্ছেন একজন বটম হ্যান্ডেড ব্যাটার। বাটলারের বটম হ্যান্ডেড সুইং হচ্ছে তার শক্তির সবচেয়ে বড় জায়গা। তার বট হ্যান্ডেড সুইং অনেকটা প্রাকৃতিকভাবেই আসে।
বাটলারের পেশি শক্তি তার ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে স্ট্রোং জোন না। বরং তার হেড পজিশন এবং বটম হ্যান্ড ও রিস্ট তার ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তির জায়গা।

বাটলার ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে যা করেন ,তা হলো একটু সাইড অন পজিশনে ব্যাট করেন। ডানহাতি ব্যাটাররা মূলত যখন ব্যাট করেন তখন তাদের বাম চোখটা বেশি অ্যাক্টিভ থাকে কিন্তু, বাটলার তার ডান চোখটি বেশি অ্যাক্টিভ রাখার চেষ্টা করেন। অর্থাৎ, বাটলারের হেড পজিশন এবং তার আই সাইট ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে তার অনেক বড় স্ট্রং জোন।
সাম্প্রতিক সময়ে কিংবা আইপিএলে বাটলারের যে চমৎকার ফর্ম, তার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে বাটলার যে র্যাম্প শটগুলো খেলেন। এ র্যাম্প শট গুলো খেলার ক্ষেত্রে বাটলার ব্যাক ফুটের উপর ঠিকঠাক ব্যালেন্স রাখেন।
তিনি যখন ব্যাটিং স্টান্সে থাকেন, ঠিক তখনই বোলার রান আপের মধ্যে থাকলে তিনি ব্যাকফুটের উপর একটি এক্সট্রা চাপ তৈরি করেন এবং সে ব্যাকফুটের সমান্তরালি ফ্রন্ট ফুটটাও একটু পিছনে নিয়ে আসেন এবং এভাবেই তিনি র্যাম্প শটগুলো খেলেন।
বিশ্ব ক্রিকেটের বিখ্যাত ফিনিশার অ্যান্ড্রি রাসেল, এবি ডি ভিলিয়ার্স কিংবা এম এস ধোনিও যখন র্যাম্প শট খেলতে যেতেন তখন তাদেরও ব্যাকফুট একটু হলেও পরিবর্তন হতো। কিন্তু, তাদের ব্যাকফুট এবং ফ্রন্টফুটের সমান্তরলতা জস বাটলারের মতো এতোটা সমান্তরাল থাকছে না।
জস বাটলার যখন র্যাম্প শট গুলো খেলেন, তখন লক্ষ্য করলে দেখা যায় জস-বাটলারের ব্যাকফুটটা অনেক স্ট্রং বেস নেয়া থাকে যার কারণে তিনি তার খেলা শট গুলোতে এক্সট্রা পাওয়ার যোগ করতে পারেন।
এছাড়া, জস বাটলারের ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে তার ব্যাটিং গ্রিপের পরিবর্তনটা। তিনি ব্যাটিং গ্রিপটা পরিবর্তন করেন বোলারের ধরণ এবং বোলিংয়ের ধরনের উপর ভিত্তি করে।

যখন ফুলার লেন্থ কিংবা ইয়র্কার লেন্থের বল থাকে তখন তিনি ব্যাটের গ্রিপটা একটু উপরের দিকে নিয়ে আসেন। ওপেন করে রাখার ফলে একটু লো ডাউন হয়ে তিনি নিখুত ভাবে শট খেলতে পারেন। অর্থাৎ, ইয়র্কার কিংবা ফুলার লেন্থের বল এলেই তিনি ব্যাটের ফেস ওপেন করে শটগুলো খেলছেন।
আমরা বিভিন্ন সময়ের শ্রীলঙ্কান ব্যাটার তিলাকারত্নে দিলশানকে স্কুপ শট খেলতে দেখেছি। কিন্তু, জস-বাটলার স্কুপ শট খেলার ক্ষেত্রে শুধু বলের পেসটাকে ব্যবহার করেন এবং এটি সঠিকভাবে করার জন্য তিনি নিয়মিত ড্রিলও করে থাকেন।
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে , ১৪০+ গতির বলগুলোতে জস বাটলারের টি টোয়েন্টি স্ট্রাইক রেট ২০০ এর উপরে। এ বিষযয়ে গত টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একটি স্ট্যাটও দেখানো হয়েছিল। অর্থাৎ, আপনি বাটলারকে যত পেসে বল করবেন, তিনি সেই পেসে ছক্কা হাকাতে আরো বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন।
জস বাটলারের ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে তাকে আটকানোর মাধ্যম হলো ইয়র্কার এবং তুলনামুলক কম গতিতে বল করা। যদিও, ইয়র্কারের ক্ষেত্রে তিনি আলাদা এক স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করে থাকেন তবুও ইয়র্কার বল হচ্ছে জোস বাটলের একটি দুর্বল পয়েন্ট।
আরও পড়ুন: