জ্বালা গুট্টা [ Jwala Gutta ] একজন ভারতীয় পেশাদার বাঁহাতি ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ও সেই সুবাদে তারকা। জ্বলার জন্ম ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩ সালে, ভারতের মহারাষ্ট্রের, ওয়ার্ধা জেলায়। জ্বলার শৈশব ও বড় হয়ে ওঠার সময় কাটে অন্ধ্র প্রদেশের হায়দ্রাবাদে। জ্বলার বাবা “ক্রান্তি গুট্টা” একজন তেলেগু ভারতীয়, ভারতের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান এবং পারিবারিক ভাবে বামপন্থী রাজনৈতিক ভাবাদর্শের। জ্বলার মা “ইয়েলান গুট্টা” চিনা বংশোদ্ভূত, চিনের তিয়ানজিন প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। ইয়েলান গুট্টার পরিবার মহত্বা গান্ধির বিশেষ ভক্ত। ইয়েলান গুট্টার দাদু “সেং” বিশিষ্ট গান্ধিবাদী। সেই সূত্রে দাদুর সাথে গান্ধির আশ্রম দর্শনে ইয়েলান প্রথম ভারতে আসেন ১৯৭৭ সালে। সেখানে ইয়েলান মহত্বা গান্ধীর আত্মজীবনী সহ অন্যান্য লেখা চাইনিজ ভাষায় অনুবাদের কাজ শুরু করেন। সেখান থেকেই তিনি ভারতে স্থায়ী হয়ে গেছেন।
জ্বালা-গুট্টা [ Jwala-Gutta ] ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যাডমিন্টন তারকাজ্বলা গুট্টা খুব অল্প বয়সে ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু করেন। যখন তার বয়স ৬, তখন তখনই সে নিয়মিত ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু করেন। তবে তার প্রথম ঝোঁক ছিলো টেনিস খেলার প্রতি। তবে জ্বলা তার মায়ের পীড়াপীড়িতে ব্যাডমিন্টন খেলায় চলে আসেন।
জ্বলার বয়স যখন ৪ বছর, তখন তার বাবার পরিচয় ঘটে জাতীয় ব্যাডমিন্টন কোচ এস.এম. আরিফের সাথে। তখন বাবা তার মেয়ের বিষয়ে কোচের থাসে পরামর্শ করেন। ব্যাডমিন্টনের প্রশিক্ষণ শুরু করার আগে, আরিফ তাকে কয়েক বছর জিমন্যাস্টিকস ও সাঁতার শেখার পরামর্শ দেন। জ্বলা গুট্টা এর পরে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে কোচ এস.এম. আরিফের অধীনে প্রশিক্ষণ শুরু করেন।
তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে জ্বলা দারুণ কৃতিত্ব দেখান। তিনি কেরালার ত্রিশুরে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৩ গার্লস মিনি জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। জ্বলা ২০০০ সালে জুনিয়র জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ (১৭ বছর বয়সী) জিতেছিল।
২০০০ সালেই গুট্টা শ্রুতি কুরিয়েনের সাথে পার্টনারশিপ করেন। জ্বলা গুট্টা ও শ্রুতি কুরিয়েন মিলে ডাবলস জুনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ এবং সিনিয়র জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপও জিতেছিলেন। এই জুটি বেশ কয়েক বছর স্থায়ী ছিল। গুট্টা এবং শ্রুতি জুটি ২০০২ সাল থেকে থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত, ধারাবাহিকভাবে সাত বছরের জন্য মহিলা ডাবলস জাতীয় শিরোপা জিতেছিল।
জ্বলা গুট্টা চৌদ্দবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। গুট্টা তার ক্যারিয়ারের শুরুতে শ্রুতি কুরিয়েনের সাথে খেলে সফল হয়েছিলেন। তবে আরও বড় আসে অশ্বিনী পোনপ্পার সাথে যুক্ত হবার পর। অশ্বিনী পোনপ্পার সাথে পার্টনারশিপ তাকে আন্তর্জাতিক সাফল্য এনে দেয়। তাদের এই জুটি ধারাবাহিকভাবে বিডব্লিউএফ বিশ্ব র্যাঙ্কিং-এর শীর্ষ বিশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে, ২০১৫ সালে ১০।
গুট্টা হলেন ভারতীয়দের প্রথম ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় যিনি অলিম্পিকে দুটি ইভেন্টের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছেন- পোনপ্পার সাথে মহিলা ডাবলস এবং লন্ডনে ভি. দিজুর সাথে মিশ্র দ্বৈত। গুট্টা তার দক্ষ বাঁ-হাতি স্ট্রোক-প্লে-র জন্য পরিচিত এবং ফোরহ্যান্ড পরিষেবা ব্যবহার করার জন্য খুব কম দ্বৈত খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন।
গুট্টা ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের জন্য অসংখ্য পদক জিতেছেন, যার মধ্যে লন্ডনে ব্রোঞ্জ পদক 2011 BWF বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০১০ এবং ২০১৪ কমনওয়েলথ গেমসে যথাক্রমে মহিলাদের দ্বৈত ইভেন্টে একটি স্বর্ণ ও রৌপ্য জিতেছে যা শৃঙ্খলায় দেশের জন্য প্রথম ছিল।
অন্যান্য কৃতিত্বের মধ্যে রয়েছে নতুন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ২০১৪ থমাস ও উবার কাপে ঐতিহাসিক ব্রোঞ্জ পদক, একই বছরে ব্যাডমিন্টন এশিয়া চ্যাম্পিয়নশিপে একটি ব্রোঞ্জ পদক এবং অনেক বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্টে ফাইনাল ও সেমিফাইনালে উপস্থিতি, বিশেষ করে ২০০৯ সালের ফাইনালে উপস্থিতি। বিডব্লিউএফ সুপার সিরিজ মাস্টার্স ফাইনাল, ডিজুর সাথে যা ছিল দেশের জন্য যে কোনো বিষয়ে প্রথম।
তার ব্যাডমিন্টন ক্যারিয়ারের পাশাপাশি, গুট্টা খেলাধুলা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ সমতার বিষয়ে সোচ্চার রয়েছেন।
জ্বলা গুট্টা বেশ কয়েকবার তালিকাভুক্ত হয়েছেন ভারতের শীর্ষস্থানীয় সবচেয়ে অনুপ্রেরণামূলক ক্রীড়া নারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে। জ্বলা গুট্টা তার কৃতিত্বের জন্য ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্রীড়া পুরস্কার অর্জুন পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
তার ব্যাডমিন্টন ক্যারিয়ারের সময়, জ্বলা গুট্টা সহ ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় চেতন আনন্দের সাথে ডেটিং শুরু করেন। চেতন আনন্দ ১৯৯৯ জুনিয়র ন্যাশনাল ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন এবং ২০০৩, ২০০৭, ২০০৮ এবং ২০১০ সিনিয়র ন্যাশনাল ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন ছিলেন এবং অর্জুন অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত হয়েছেন। এই দম্পতি ১৭ জুলাই ২০০৫-এ বিয়ে করেন এবং ২৯ জুন ২০১১ তে এদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
গুট্টা শ্রুতি কুরিয়েন-কানেটকারকে তার ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে মহিলাদের ডাবলস প্রতিযোগিতায় অংশীদার করেছিলেন। এই জুটি তাদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট, ইন্ডিয়া এশিয়া স্যাটেলাইট টুর্নামেন্ট ২০০২-এর সেমিফাইনাল রাউন্ডে পৌঁছেছিল। তারা ২০০৪ সালে একই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল রাউন্ডেও পৌঁছেছিল এবং লে ভোলান্ট ডি’তে রানার-আপ হয়েছিল। টুর্নামেন্ট, একই বছর টুলুজ ওপেন নামে পরিচিত।
গুট্টা স্কটিশ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ২০০৪ এবং ৪০ তম পর্তুগিজ ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ ২০০৪ এর ফাইনাল রাউন্ডে পৌঁছেছিলেন। ২০০৬ সালে, তিনি শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট টুর্নামেন্ট জিতেছিলেন; যখন ২০০৭ সালে, তিনি সাইপ্রাস ব্যাডমিন্টন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট জিতেছিলেন।
একই বছর, তিনি পাকিস্তান আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্ট এবং ভারতীয় আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্টেও জিতেছিলেন। এই অর্জনগুলি ছাড়াও, গুট্টা নেপাল ইন্টারন্যাশনাল সিরিজ টুর্নামেন্ট ২০০৮ এবং ইয়োনেক্স ডাচ ওপেন গ্র্যান্ড প্রিক্স ২০০৮ মহিলাদের ডাবল বিভাগে জিতেছিলেন।
“জ্বালা গুট্টা [ Jwala Gutta ] ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যাডমিন্টন তারকা”-এ 1-টি মন্তব্য