টেবিল টেনিস খেলার আইন কানুন নিয়ে আজ আমাদের আলোচনা। বাংলাদেশ টেবিল টেনিস সামগ্রিকভাবে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে সুপরিচিত না হলেও দেশের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ খেলা অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে সাধারণ ক্রীড়ামোদী মহলেও এ খেলার জনপ্রিয়তা ও আগ্রহ নেহায়েত কম নয়। কম জায়গার প্রয়োজন হয় (একটি রুম হলেই যথেষ্ট) বলে এটি পরিবারিক খেলা হিসেবেও বেশ সমাদৃত। মাত্র দুইজন খেলোয়াড় এবং একটা খেলার টেবিল ব্যাট-বল-নেট হলেই এ খেলা শুরু করা যায়।
অন্যান্য জনপ্রিয় খেলার মত টেবিল টেনিস খেলার জন্মও ইংরেজদের হাতে। ১৮৮১ সালে এ খেলার জন্ম। জন্মের পর থেকে টেবিল টেনিস বেশ দ্রুত জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। ১৯০৫-১৯১০ সালের মধ্যে ইউরোপের অনেকগুলো দেশে টেবিল টেনিস খেলা ছড়িয়ে পড়ে ও জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরবর্তীতে এশিয়ার চীন, জাপান, কোরিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এ খেলা যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।
১৯২৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল টেবিল টেনিস ফেডারেশন (ITTF) গঠিত হয়। ১৯২৮ সালে বিশ্ব টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অলিম্পিকেও টেবিল টেনিস অন্তর্ভুক্ত হয়। নিচে ITTF এর রাস অনুসারে টেবিল টেনিসের আইন-কানুন তুলে ধরা হলোঃ
Table of Contents
টেবিল টেনিস খেলার আইন কানুন । খেলাধুলার আইন
টেবিল
(১) টেবিলের উপরিভাগ খেলার উপরিভাগ হিসেবে পরিচিত হবে। তবে এ উপরিভাগ হতে হবে আয়তক্ষেত্র এবং এর দৈর্ঘ্য হবে ২.৭৪ মিটার এবং গ্রন্থ হবে ১.৫২৫ মিটার। এছাড়া মাটি থেকে টেবিলের উচ্চতা হবে ৭৬ সেন্টিমিটার এবং তা সমান্তরাল ভলে অবস্থান করবে।
(২)খেলার উপরিভাগ টেবিলের দৈর্ঘ্যে সংগে সংযুক্ত করতে হবে। কিন্তু টেবিলের দুই পাশের উপরে ও নিচের দৈর্ঘ্য খেলার সংগে সংযুক্ত করতে হবে না।
(৩) টেবিলের উপরিভাগ যে কোন পদার্থ দ্বারা তৈরি হতে পারবে। এবং লক্ষ্য রাখতে হবে বলটি যেন ৩০ সেন্টিমিটার উঁচু থেকে ফেললে যেনো কমপক্ষে ২৩ সেন্টিমিটার উপরে লাফিয়ে পড়ে।
(8) টেবিলের উপরিভাগের রং হবে গাঢ় কিন্তু সাইড লাইন হবে সাদা ২ সেন্টিমিটার পুরু রং এর। এছাড়া টেবিলের দৈর্ঘ্য হবে ২.৭৪ মিটার এবং গ্রন্থ হবে ১.৫২৫ মিটার ।
(৫) টেবিলের উপরিভাগ লম্বালম্বি সমান দু’ভাগে ভাগ করা হবে একটি রেখা দ্বারা । এ রেখা টেবিলের সমান্তরালে একটি নেট টানা থাকবে। যা কোর্টকে দুই ভাগে বিভক্ত করবে।
(৬) দ্বৈতের জন্য প্রতিটি কোর্টকে সমান দু’ভাগে ভাগ করতে হবে। একটি সাদা সেন্টার লাইন দিয়ে। যা ৩ সেন্টিমিটার চওড়া হবে এবং সমান্তরাল হবে। কেন্দ্রীয় লাইন প্রত্যেক খেলোয়াড়ের ডান হাফ কোর্টের মধ্যে ফেলতে হবে।
নেট
নেট টেবিলের উপরিভাগ থেকে ১৫ ২৫ সেন্টিমিটার উচুতে আটকানো থাকবে এবং বাইরের দু’প্রান্ত সাইড লাইন থেকে তা ১৫ ২৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব থেকে তা কার্যকর থাকবে।
(১) নেটের উপরিভাগের পুরো দৈর্ঘ্য ১৫-২৫ সেন্টিমিটার খেলার উপরিভাগ হিসেবে গণ্য হবে।
(২) মেটের নিচের অংশের পুরো দৈর্ঘ্য খেলার অংশ থেকে যতদূর সম্ভব নি রাখতে হবে । এবং দু প্রান্ত সমান্তরাল করে টানানো থাকবে।
বল
(১) বল হবে গোলাকার এবং এর পরিধি হবে ৩৮ সেন্টিমিটার।
(২) বলের ওজন হবে ২৫ গ্রাম।
(৩) বলটি তৈরি হতে হবে সেলুলয়েড অথবা অনুরূপ প্লাষ্টিক ধাতুর এবং এর রং হতে হবে সাদা অথবা হলুদ ।
র্যাকেট
(১) র্যাকেট যে কোন আয়তন আকার এবং ওজনের হতে পারে। কিন্তু হতে হবে শক্ত চ্যপ্টা এবং বিস্তৃত ।
(২) অন্ততপক্ষে ব্লেডের পুরুত্ব ৮৫ শতাংশ এবং প্রাকৃতিক কাঠের তৈরি হতে হবে।
(৩) ব্র্যাকেটের উভয় দিকে কোন সাধারণ প্রবার দিয়ে ঢাকা থাকতে পারে। রাবার ২ মিলিমিটারের কম পুরু হবে না এবং রাবারে কিছুটা ফোসকা উঠা থাকবে। র্যাকেটের মাঝখানে বা ভিতরের দিকে ফোসকা ওঠা রাবার দিয়ে দুই পাশ সেলুলার রাবার দ্বারা এবং চারদিকে সাধারণ রাবার দ্বারা ঘেরা থাকবে। উভয় দিকে আবরণীর পুরুত্ব থাকবে এবং তা ৪ মিলিমিটারের বেশি উঠতে পারবে না।
(৪) সাধারণ রাবারে একটি সিঙ্গেল নন সেলুলার রাবার এর একটি আস্তরণ থাকে প্রাকৃতিক অথবা সিনথেটিক।
সংজ্ঞা সমূহ
(১) বল যখন খেলার মধ্যে থাকে তাকে র্যালী বলা হয়।
(২) যে র্যালীতে স্কোর হয় না তাকে লেট বলে।
(৩) যে র্যালীতে স্কোর হয় তাকে পয়েন্ট বলে।
(৪) যে হাত র্যাকেট বহন করে তাকে র্যাকেট হ্যান্ড বলে ।
(৫) যে র্যাকট বহন করে না তাকে ফ্রি হ্যান্ড বলে ।
(৬) র্যালীকালীন সময়ে প্রথমে যে খেলোয়াড় প্রথম বল হিট করেন তাকে সার্ভার বলা হয়।
(৭) র্যালীকালীন যে খেলোয়াড় সার্ভিস প্রতিহত করেন তাকে রিসিভার বলা হয়।
(৮) ম্যাচটিকে যিনি নিয়ন্ত্রন করেন তাকে আম্পায়ার বলা হয়।
(৯) খেলাকালীন সময়ে নির্ধারিত আম্পায়ারকে যিনি সহযোগিতা করেন তাকে সহকারী আম্পায়ার বলা হয়।
শুদ্ধভাবে বল ফিরিয়ে দেয়া
সার্ভিসের পরে এবং ফেরৎ পাঠানোর পরে বল সোজা নেটের উপর দিয়ে বা দ্রুত নেট ঘুরে আসে এবং প্রত্যক্ষভাবে বিপক্ষের নেট স্পর্শ করলে তাকে শুদ্ধভাবে বল ফিরিয়ে দেয়া বলে।
খেলার নিয়ম
(১) সিঙ্গেলস খেলায় সার্ভার প্রথমে বল সার্ভিস করবেন এবং রিসিভার শুদ্ধভাবে তা ফিরিয়ে দেবেন। অতঃপর সার্ভার ও রিসিবভার পর্যায়ক্রমে একের পাঠনো বল অন্যজন ফিরিয়ে দেবেন ।
(২) ডাবলস খেলায় সার্ভার প্রথমে একটি শুদ্ধ সার্ভিস করবেন এবং রিসিভার তা শুদ্ধভাবে ফিরিয়ে দেবেন। পরে সার্ভিসকারী এবং সার্ভিসকারীর সঙ্গী তা শুদ্ধভাবে ফিরিয়ে দেবেন। পরে রিসিভারকারীর সঙ্গীও তা শুদ্ধভাবে ফিরিয়ে দেবেন। এভাবে খেলা চলতে থাকবে।
খেলার ভিতরে
(১) বল থেমে যাবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত খেলা চলতে থাকবে।
(২) যতক্ষণ পর্যন্ত সার্ভিসের প্রয়োজন না পড়বে ততক্ষণ পর্যন্ত বল খেলার মধ্যে থাকবে।
(৩) অন্যথায় এ র্যালীতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে লেট অথবা পয়েন্ট।
লেট
র্যালী পরিনত হয় লেট এ। অর্থাৎ বলটির আদান প্রদান একটি লেট হয়
(১) যদি সার্ভিস করা বলটি নেটের উপর দিয়ে যাবার সময় নেট স্পর্শ করে বা নেট অতিক্রম না করে এবং সার্ভিসকারী ও তার সঙ্গী কোন প্রকার ভুল করে ।
(২) যদি সার্ভিস গ্রহণকারী বা তার সঙ্গী সার্ভিস গ্রহণের জন্য প্রস্তুত না থাকে অর্থাৎ সার্ভিস গ্রহণকারী বা তার সঙ্গী অপ্রস্তুত থাকে ।
(৩) বাইরে থেকে কোন রিনের ব্যাঘাত সৃষ্টির ফলে যদি নির্ভুল সার্ভিস এবং তা সঠিকভাবে ফিরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয় এবং খেলোয়াড় যদি খেলার আইন অমান্য করে।
পয়েন্ট
র্যালী ব্যর্থ হলে অর্থাৎ র্যালী আদান প্রদানে ব্যর্থ হলে প্রতিপক্ষ একটি পয়েন্ট লাভ করে।
(১) নির্ভুল সার্ভিস করতে ব্যর্থ হলে,
(২) সঠিকভাবে সার্ভিস ফেরৎ পাঠাতে ব্যর্থ হলে।
আরও দেখুনঃ