ডিয়াগো মারাডোনা আর বিখ্যাত “হ্যান্ড অব গড” [ Diego Maradona and Famous “Hand of God” ]

ডিয়াগো মারাডোনা [হ্যান্ড অব গড] : ম্যারাডোনাকে বলা হয় ফুটবল ইশ্বর। বল পায়ে তিনি এমন কিছু জাদু করে দেখিয়েছেন বারংবার যে তাকে ফুটবল ইশ্বর বলে সম্বোধন করা হয়। বল পায়ে প্রায় একা আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছেন বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপেও অবশ্য যদি কিন্তুর মাঝে বড় একটা প্রশ্নে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল ম্যারাডোনার ব্যাক্তিত্ব নিয়ে। যখন লিখাটি লিখঠি তখন তিনি বেঁচে নেই তবুও আলোচনা হোক একটুখানি অন্য। বল পায়ে দাঁপিয়ে বেড়ানোর রাজগল্পের পেছনের গল্পগুলো বলে দেয়- ম্যারাডোনা শুধুই সেরা ফুটবলার নন, তিনি ইতিহাসের সবথেকে প্রভাবশালী ফুটবলর।

ডিয়াগো মারাডোনা আর বিখ্যাত "হ্যান্ড অব গড" [ Diego Maradona and Famous "Hand of God" ]
ডিয়াগো-মারাডোনা আর বিখ্যাত “হ্যান্ড অব গড” [ Diego Maradona and Famous “Hand of God” ]
প্রথম গল্পটা বিশ্বকাপের, ১৯৮৬ সালের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচের। যেই ম্যাচে হাত দিয়ে গোল করেছিলেন ডিয়াগো- মারাডোনা। মারাডোনার সেই গোলটি বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই সবথেকে আলোচিত ও সমালোচিত গোল। যেই গোলের ফলে মারাডোনাকে হ্যান্ড অব গড বলা হতো।

ঐ গোলটি করবার মাত্র মিনিট কয়েক পরেই ডিয়াগো-মারাডোনা যে গোলটি করেছিলেন তা শতাব্দীর সেরা গোল। ছয় জনকে কাটিয়ে করা গোলটি মারাডোনার পোস্টার গোল বলা হয় যে কারনে আর মারাডোনার গায়ে সেভাবে নেগেটিভ ট্যাগ লাগেনি সে বিশ্বকাপে।

ডিয়াগো মারাডোনা আর বিখ্যাত "হ্যান্ড অব গড" [ Diego Maradona and Famous "Hand of God" ]
ডিয়াগো-মারাডোনা ৮৬ সালে মেক্সিকোতে
দ্বিতীয় গল্পটা কোকেইনের, হ্যা বিখ্যাত নেশা জাতীয় দব্য কোকেইনের সাথে মারাডোনার সখ্যতা ছিল ফুটবলের মতই। নাপোলির হয়ে খেলার সময় নিয়মিত কোকেইন গ্রহন করতেন মারাডোনা এবং সেটি চলে গিয়েছিল মারাত্বক পর্যায়ে।

১৯৯১ সালে মারাডোনাকে নাপোলিতে থাকা অবস্থায় ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে ড্রাগ পরীক্ষা করে মারাডোনাকে বিশ্বকাপ না খেলে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছিল ম্যারাডোনা কখনো নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারতেন না। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা নাইজেরিয়ার বিপক্ষে মাস্ট উইনিং ম্যাচে গ্যালারী থেকে অশোভন আচরণ করেছিলেন। মার্কোস রোহোর শেষ গোলের পর হাত দিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে তিরোস্কার হন তিনি ।

ঐ ম্যাচের কিছুদিন আগে আইসল্যান্ড এর বিপক্ষে ম্যাচের দিন ১-১ গোলে ড্র করেছিল মেসিরা, সেদিন একটি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে উপস্থাপিকাকে রেগে অশ্লীল ভঙ্গি দেখিয়েছিলেন মারাডোনা।

Diego Maradona [ ডিয়েগো ম্যারাডোনা ]
Diego-Maradona [ ডিয়েগো-ম্যারাডোনা ]
আরেকটা ট্রাজেডি আছে তার জীবনে যেটা হয়তবা যেকোন অ্যাথলেটের জন্য সবথেকে বাজে উদাহরণ হতে পারে। নিজের বাড়ির বাইরে এক সাংবাদিককে এয়ার রাইফেল দিয়ে গুলি করেছিলেণ ডিয়াগো-মারাডোনা।

যে কারনে তাকে ২ বছর ১০ মাসের কারাদন্ড দিয়েছিল আদালত। ১৯৯৪ সালে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েূন্স আয়ার্স এ নিজের প্রাইভেসিতে সমস্যা হচ্ছে বলে গুলি করেন যে কারনে চারজন আহত হয়েছিলেন।

[ ডিয়াগো মারাডোনা আর বিখ্যাত “হ্যান্ড অব গড” [ Diego Maradona and Famous “Hand of God” ] ]

একবার এক ভক্তকে লাথি দিয়ে বসেছিলেন ডিয়াগো-মারাডোনা। মাঠে যখন তিনি নিখুত একটা শটের জন্য অপেক্ষা করছিলেণ তখন একজন ভক্ত কোন একটা পোস্টার টাঙিয়ে মারাডোনাকে বিভ্রান্ত করবার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। ম্যারাডোনা দৌড়ে গিয়ে ঐ ভক্তের হাতে লাথি মেরেছিলেন যেটা মারাডোনার মত একজন লিজেন্ড এর কাছে পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত।

লিওনেল মেসির পার্সোনালিটির নিয়েও প্রশ্ন তুলে আলোচিত ছিলেন মারাডোনা। তিনি একবার বলেছিলেন, মেসির মাঝে নেতা হবার গুণ অনেক কম। প্যারিসে ফুটবলের রাজা পেলের সাথে এক সভাতে এমন মন্তব্য করেছিলেন তিনি। পেলের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেণ, “তিনি একজন ভালো মানুষ তবে তার কোন পার্সোনালিটি নেয়। “উত্তরে পেলে বলেছিলেণ তিনি ৭০ দশকের সেই তখনকার ফুটবলারদের মত নন।

Diego Maradona [ ডিয়েগো ম্যারাডোনা ]
Diego-Maradona [ ডিয়েগো-ম্যারাডোনা ]
ড্রাগস এবং অনিয়মিত বিশৃঙ্খল জীবনযাপন এতটাই বাজে অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিল মারাডোনাকে যে তিনি ২০০৪ সালে হার্ট এর সমস্যার কারনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ১২৯ কেজি ওজন হয়েছিল তার. এরপর পাকস্থলীর অপারেশন করে ৩০ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন মারাডোনা।

নিজ দেশ আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্স এ খুব গরীব পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন। মাত্র ২১ বছর বয়সে বার্সার হয়ে খেলার সুযোগ হয় মারাডোনাকে। এরপরই শুরু হয় বিশৃঙ্খল জীবন, কোপা ডেল রের ফাইনালে তিনি যেভাবে মারামারি করেছিলেণ তা রীতিমত ছিল অবিশ্বাস্য।

সেই ফাইনালের অনেক পরে বার্সার একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ পেয়েছিল। যেখানে মারাডোনার অনেক নেগেটিভ বিষয় প্রকাশ করা হয়েছিল।

ডকুমেন্টারিটি বার্সা প্রকাশ করেছিল তাকে রেকর্ড ট্রান্সফার ফি দিয়ে নাপোলিতে বিক্রয় করবার পর। তবে সেটি আদোতেও কোন প্রভাবই ফেলতে পারেনি মারাডোনার ভক্তের জোয়ারে, তার প্রমাণ দিয়েছিল নাপোলি। ডকুমেন্টারি প্রকাশের কিছুদিন পরই নাপোলির স্টেডিয়ামে মারাডোনাকে স্বাগত জানিয়েছিল ৮৭ হাজার মানুষ।

দিনশেষে এভাবেই ডিয়াগো তবুও বেঁচে ছিলেন কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে। না ভিলেন হয়ে না, তিনি বেঁচে ছিলেন একজন আকাশী সাদার নায়ক হিসেবেই, ফুটবলের ইশ্বর হিসেবেই। যে কারেনেই আর্জেন্টিনার ২০২১ কোপা আমেরিকা জয়ের পর বলা হয়- এখানে ফুটবল ইশ্বরের আর্শীবাদ আছে। আজ তিনি নেয়, তবুও আছেন। যতদিন ফুটবল বাঁচবে ততদিন মারাডোনা বেঁচে থাকবে।

আরও পড়ুন :

 

ডিয়াগো মারাডোনা আর বিখ্যাত “হ্যান্ড অব গড” [ Diego Maradona and Famous “Hand of God” ] দেখুন ভিডিওতে:

Leave a Comment