দ্য অ্যাশেজ [ The Ashes ] ; ইংলিশ-অজিদের মর্যাদার লড়াই: ইতিহাস আর ঐতিহ্য কিংবা মাঠের লড়াইয়ের তুমুল প্রতিযোগিতা, যেকোনো মানদণ্ডে ক্রিকেটের সেরা দ্বৈরথ দ্য অ্যাশেজ। এটা ক্রিকেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যময় আর প্রাচীন সিরিজ। যার পেছনে আছে শত শত বছরের ইতিহাস আর ঐতিহ্য। তর্ক থাকতে পারে, তবে তর্কের খন্ডনও আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্মলগ্ন থেকে আর কোনো সিরিজ কি এখনও চলছে?
![দ্য অ্যাশেজ [ The Ashes ] ইংলিশ-অজিদের মর্যাদার লড়াই 2 দ্য অ্যাশেজ](/wp-content/uploads/2021/10/অ্যাশেজ21-300x200.jpg)
সীমিত ওভারের ক্রিকেট বিশেষ করে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যুগে টেস্ট ক্রিকেটের আবেদন খানিকটা কমে গেছে! আমি বলছি না, সমালোচকদের কথা এটা। আইপিএল, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শত শত নিউজের ভিড়ে তবুও আপনি যদি অ্যাশেজের একটা খব পড়ে আনন্দ পান, আগ্রহ অনুভব করেন তবে জানবেন টেস্ট ক্রিকেট ঝিমিয়ে যায়নি। আপনারাই বাচিয়ে রেখেছেন, যার উৎস দ্য অ্যাশেজ।
[ দ্য অ্যাশেজ; ইংলিশ-অজিদের মর্যাদার লড়াই ]
মূলত অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের টেস্ট সিরিজকেই ‘অ্যাশেজ’ বলা হয়। ইংরেজি শব্দ ‘অ্যাশেজ’ এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘ছাই’ বা ‘ভস্ম‘। ছাই যুদ্ধের অতিত ইতিহাস জানতে ফিরে যেতে হবে আজ থেকে ঠিক ১৫০ বছর আগে, ঘটনাটা ১৮৮২ সালের। সে বছরের ২৮ আগস্ট ইংল্যান্ড এর ওভালে তিন দিনের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় স্বাগতিক ইংল্যান্ড। টসে জিতে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিক ইংলিশ বোলারদের তোপের মুখে মাত্র ৬৩ রানেই অল-আউট হয়ে যায় সফরকারী অস্ট্রেলিয়া।
জবাবে ইংল্যান্ড ও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি প্রথম ইনিংসে, ১০১ রানে অল-আউট হয়ে ৩৮ রানের লিড পায় ইংলিশরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১২২ রানেই গুটিয়ে যায় অজিদের ইনিংস। আর ইংলিশদের সামনে জয়ের জন্য ৮৫ রানের সহজ লক্ষ্য।
![দ্য অ্যাশেজ [ The Ashes ] ইংলিশ-অজিদের মর্যাদার লড়াই 3 দ্য অ্যাশেজ](/wp-content/uploads/2021/10/DNDCI-lXcAASLfV-195x300.jpg)
ইংলিশরা ভেবেছিল নিজেদের মাঠে নিজেদের দর্শকদের সামনে খুব সহজেই এই টার্গেট অতিক্রম করে ফেলবে। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে মাত্র ৭৭ রানে অল-আউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। আর দুর্দান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচটি ৭ রানে জিতে নেয় সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। তিন দিনের ম্যাচ শেষ হয়ে যায় মাত্র দুই দিনেই।
এই অবিশ্বাস্য পরাজয়ে ইংলিশ গণমাধ্যমে তখন ইংলিশ ক্রিকেটের উপর রোষানল ছড়িয়ে পড়ে। তখন ইংল্যান্ডের সবচাইতে জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘দ্যা স্পোর্টিং টাইমস’ তাদের প্রতিবেদনে লিখে, “ইংল্যান্ড ক্রিকেটের মৃত্যু নিশ্চিত। এখন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের অস্তিত্ব বলতে শুধুই ‘ছাই’। আর সেই ‘ছাই’ সঙ্গে নিয়ে আনন্দ করতে করতে দেশে ফিরে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া” এভাবেই দ্য অ্যাশেজের সৃষ্টি।
অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত পরবর্তী সিরিজের আগে সংবাদ সম্মেলনে সেই কাল্পনিক ছাই ফেরত আনার শপথ নিলেন তৎকালীন ইংল্যান্ড অধিনায়ক ‘আইভো ব্লাই’। ইংলিশ মিডিয়া সেই সফরের নামকরন করল, ‘অ্যাশেজ পুনরুদ্ধারের মিশন’। কিন্তু সিরিজ শুরু হল একেবারে যাকে বলে ফিল্মি কায়দায়। প্রথম ম্যাচেই ধরাশায়ী হল ইংল্যান্ড কিন্তু সিনেমার কাহিনীর মতই পরের দুটো ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ী হল ইংলিশরা।
![দ্য অ্যাশেজ [ The Ashes ] ইংলিশ-অজিদের মর্যাদার লড়াই 4 দ্য অ্যাশেজ](/wp-content/uploads/2021/10/অ্যাশেজ0-300x132.jpg)
আইভো ব্লাই তখন পুরোদস্তুর হিরো বনে গেছেন ইংলিশ মিডিয়ায়! এখানেই শেষ নয় বরং শুরু, মেলবোর্নে সিরিজ জয়ের পরে একদল নারী আনুষ্ঠানিকভাবে আইভো ব্লাইকে স্তুপাকারে একটি পাত্রে বেইলের (স্ট্যাম্পের উপরে ব্যবহৃত উপকরন) ছাই প্রদান করেন।আর তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় অ্যাশেজ সিরিজ!
দ্য অ্যাশেজের আছে দুর্দান্ত সব ক্রিকেটীয় গল্প। তার একটা ‘বল অব দ্য সেঞ্চুরি’। ১৯৯৩ অ্যাশেজের ম্যাচে ওল্ড ট্রাফোর্ডে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় স্বাগতিক ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া দলে সুযোগ পান আনকোরা লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন! আনকোরা বলছি কারণ ওটাই তার প্রথম অ্যাশেজ ম্যাচ। তখন টেস্টের ৩য় দিন, ব্যাটিং করছিলেন তখনকার সময়ে স্পিন বল সবচেয়ে যে কজন ব্যাটসম্যান ভালো খেলতেন তাদের একজন ইংলিশ ওপেনার মাইক গ্যাটিং।
বোলিং এ আসলেন শেন ওয়ার্ন। অ্যাশেজে নিজের প্রথম ডেলিভারিতেই সবাইকে তাক লাগিয়ে বোল্ড করলেন গ্যাটিং কে। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে করা বলটি লেগ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে পড়ে টার্ন করে ষ্ট্যাম্পে আঘাত হানে।
ঘটনার আকস্মিকতায় ব্যাটসম্যান গ্যাটিং এতোটাই বিস্মিত হয়েছিলেন যে বলটি সত্যিই স্ট্যাম্পে আঘাত হেনেছে কিনা জানতে আম্পায়ারের শরণাপন্ন হন। এমনকি আম্পায়ার, উইকেটকিপার এমনকি স্বয়ং ওয়ার্নও অবাক হয়েছিলেন। ওয়ার্নের সেই বলটি ‘বল অব দ্য সেঞ্চুরি’ বা ‘শতাব্দীর সেরা বল’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের ভক্তদের কাছে দ্য অ্যাশেজ শুধুই একটি সিরিজ নয়, এটা অহংকারের প্রতীক, এটা সন্মানের ধারক। ওই ছাইয়ের পাত্র তাদের কাছে শুধুই একটি ট্রফি নয়, এটা দুই দলের ক্রিকেট মুকুটের সবথেকে সুন্দরতম রত্ন। আর তাইতো ওই ছাই থেকে অমূল্য রতনের খোঁজে বারবার মহারনে মুখোমুখি হয় দুই দল।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমাদের “যোগাযোগ” আর্টিকেলটি ভিজিট করুন।
আরও পড়ুন: