ফুটবল বিশ্বকাপে মাঠের মজার ঘটনা

আপনার ফেসবুক আইডি তো আছে, না থাকলে তো আর এই লেখা পড়তে পারতেন না! নিশ্চয়ই আপনি ফুটবল ভক্ত, ফুটবলের বিভিন্ন পেইজেও ফলো দেওয়া আছে। বিভিন্ন সময়ে কিংবা দিনকয়েক পর পরই ‘ফানিয়েস্ট মোমেন্ট ইন ফুটবল’ ক্যাপশনে বিভিন্ন ভিডিও তো দেখে থাকবেন, হয়তো ঠোঁটের কাণায় হালকা হাসিও খেলে যাবে। তবে এমন মজার ঘটনার মতো ফুটবলে আছে আরো অনেক মজার ইতিহাস।

ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বোধহয় বাছাইপর্ব পেরোনো। বাছাইপর্ব পেরোতে দলগুলোর কত কত লড়াই-যুদ্ধ। এমনও বিশ্বকাপ হয়েছে যেখানে কোনো বাছাইপর্বই ছিল না। ফুটবল বিশ্বকাপে প্রথম আসর বসেছিল উরুগুয়েতে ১৯৩০ সালে। সেই বিশ্বকাপে কোনো বাছাইপর্ব ছিল না।

ফুটবলের নিয়ন্ত্রক স্বংস্থা ফিফা প্রায় সব দেশকেই সেখানে খেলার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু প্রচুর খরুচে আর সময় সাপেক্ষ হওয়ায় সেই বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো আগ্রহই দেখায়নি গোটা ইউরোপ। পারে ফিফা সভাপতি জুলে রিমের হস্তক্ষেপে দল নিবন্ধনের শেষদিনে ইউরোপের প্রতিনিধি হয়ে বিশ্বকাপে নাম লেখায় ফ্রান্স, বেলজিয়াম, যুগোস্লাভিয়া ও রোমানিয়া।

তখন ফুটবল বিশ্বকাপের থেকে অলিম্পিককেই বেশি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতো দেশগুলো। তাই প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপকে অতটা ‘দাম’ দেয়নি দলগুলো। প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপে একপ্রকার পিকনিক মুডেই নিয়েছিল অংশগ্রহণকারী দেশগুলো।

বিশ্বকাপকে কতটা হালকাভাবে দলগুলো নিয়েছিলে সেটা বোঝা যায় একটা ঘটনায়, একটা দলের অধিনায়ক নাকি বিশ্বকাপের মাঝপথে পরীক্ষার জন্য দেশে চলে যান! এই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক ম্যানুয়েল ফেইরা ছিলেন আইনের ছাত্র। গ্রুপপর্বের দুটি ম্যাচ খেলেই তিনি দেশে ফিরে যান পরীক্ষার কারণে। সেই বিশ্বকাপে শেষ পর্যন্ত ফাইনালে উঠে রানার্স আপ হয় তার দল।

সেই ফুটবল বিশ্বকাপেরই ঘটনা, ফাইনাল ম্যাচে ঘটে অদ্ভুত এক কান্ড। এ যেন পাড়ার ফুটবলের কোন ঘটনা। প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বাগতিক উরুগুয়ের মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা। তখনকার ফুটবল বিশ্বকাপে বর্তমানের মতো এত ‘লাক্সারি’ ছিল না। তাই সে সময় ‘অফিসিয়াল বল’ শব্দটারও কোনো অস্তিত্ব ছিল না।

দলগুলোর আনা বল থেকেই ম্যাচ হতো। ফাইনালেও তাই দুই দলই দুটো বল মাঠে নিয়ে আসে। আর তারা আশা করেছিল, রেফারি তাদের বলটি দিয়েই ফাইনাল খেলাবেন। এ নিয়ে ম্যাচ শুরুর আগে রীতিমতো ঝগড়াই বেধে যায়। পরে রেফারি দুই অর্ধে দুই দলের দুই বল ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলে শান্ত হয় দুই দল।

আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাদোনা। ফুটবল পায়ে শিল্পের পাশাপাশি বিনোদনেও ছিলেন বরাবর পটু। আর্জেন্টিনার ২০১০ বিশ্বকাপের কোচ ছিলেন ম্যারাদোনা। সেই বিশ্বকাপে অনুশীলনে নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলছেন মেসিরা।

ফুটবল বিশ্বকাপে মাঠের মজার ঘটনা
দিয়েগো ম্যারাদোনা

ম্যারাদোনার হারা দলের সবার গায়ে বিজয়ীরা বল শ্যুট করবে। ম্যাচ শেষে যখন হেরে যাওয়া দলের সবাই গোলপোস্টে যখন সতীর্থদের কিকের অপেক্ষায়, তখন দেখা গেল ম্যারাদোনা নিজেও দাঁড়িয়েছেন গোলবারের নিচে। কোচকে কি কেউ শ্যুট করতে পারে?

সেই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা খুব একটা ভালো করতে পারেনি, মূল পর্বে কোয়ার্টার ফাইনালে বাদ পড়ে যায়। বাছাইপর্ব পেরিয়ে মূল পর্বে আসতেই পেরোতে হয়েছে কাঠখর। বাছাইপর্বের শেষদিকে এক বাঁচা-মরার ম্যাচে পেরুর মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। ম্যাচটি না জিততে পারলে বড়সড় বিপদ অপেক্ষা করছিল। ৯০ মিনিট শেষে ম্যাচে তখন ১-১ গোলে সমতা।

ম্যারাডোনার ইচ্ছায় প্রায় এক দশক পর জাতীয় দলে ডাক পাওয়া পালের্মো বদলি ৯৩ মিনিটে গোল করে দলের জয় নিশ্চিত তো করলেনই আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্নও বাঁচিয়েও রাখলেন। সেই ম্যারাদোনা উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে পারেননি। তাকে দেখা গেল মাঠে কাদাপানির মাঝে ডাইভ দিয়ে স্লাইড করছেন, ঠিক যেন একেবারে ছোট বাচ্চা।

ফুটবল বিশ্বকাপে বিশ্বযুদ্ধের হানা দেওয়ার ঘটনাও আছে। ঘটনাটা ১৯৩৮ সালে, তৃতীয় বিশ্বকাপের। ফ্রান্সে সেই বিশ্বকাপটি হয়েছিল বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে। সেবার বাছাইপর্ব পেরিয়ে মূলপর্বে সুযোগ করে নিয়েছিল অস্ট্রিয়া। তবে তারা বিশ্বকাপ খেলতে পারেনি এডলফ হিটলারের দখলদারির কারণে। বিশ্বকাপের আগেই অস্ট্রিয়া দখল করে নেয় হিটলারের জার্মানি। তাই আর মাঠে নামা হয়নি জার্মান প্রতিবেশিদের।

বিশ্বযুদ্ধের পরের ফুটবল বিশ্বকাপের ঘটনা, ১৯৫০ বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি ব্রাজিল-উরুগুয়ে। তখনকার নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচটি ড্র করলেই শিরোপা নিশ্চিত হতো ব্রাজিলের। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ব্রাজিল বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে এতটাই আশাবাদী ছিল যে ফাইনালের দিন ব্রাজিলীয় দৈনিকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন লিখে হেডলাইন ছাপা হয়েছিল।

্সেই পত্রিকা কিনে উরুগুয়ে অধিনায়ক নিজেদের হোটেল রুমের টয়লেটে নিয়ে সতীর্থদের বলেছিলেন পত্রিকাগুলোর কপিতে প্রস্রাব করতে! দলের আত্মবিশ্বাস তুলে ধরতেই ভ্যারেলা এমনটি বলেছিলেন। সেই আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে ফাইনালে ফাইনালে লাখো ব্রাজিলিয়ান দর্শকের সামনে এই উরুগুয়ে ২-১ গোলে ব্রাজিলকে হারিয়ে উৎসব করেছিল।

ফুটবল বিশ্বকাপে
ব্যাটেল অব সান্তিয়াগো

ব্রাজিলিয়ানরা এ ঘটনায় এতটাই মুষড়ে পড়েছিল যে ফাইনালের পর মারাকানা স্টেডিয়ামের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে দর্শকদের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। পর্তুগিজ ভাষায় এই ট্র্যাজেডি ‘মারাকানাজো’ নামে কুখ্যাত।

১৯৬২ সালে বিশ্বকাপ হয়েছিল চিলিতে, সেই বিশ্বকাপ পছন্দ হয়নি আর্জেন্টিনার। ইউরোপিয়ানরাও ছিল এই দলে। এই বিশ্বকাপ নিয়ে লাতিন দেশগুলো হুমকি দিয়ে রেখেছিল ফিফাকে, ইউরোপে আয়োজিত হলে তারা একযোগে বয়কট করবে বিশ্বকাপ।

ফিফা সেই দাবি মেনে নিয়ে তুলনামূলক নতুন শক্তি চিলিতে আয়োজন করে। ইউরোপীয় দেশগুলো তো বটেই, ফিফার এই সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি লাতিন অঞ্চলের ফুটবল শক্তিগুলোরও। নিজেদের গ্রুপপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে চিলি-ইতালি ম্যাচেই রেষারেষিটা প্রকট হয়ে ওঠে।

ম্যাচটি ছিল মারামারিতে ভরা। দর্শকেরা সেদিন ফুটবলের বদলে দেখেছিলেন কুস্তি। অনেক সময় পুলিশকে মাঠে ঢুকে থামাতে হয়েছে খেলোয়াড়দের মারামারি। ইতিহাসে সেই ম্যাচকে ‘ব্যাটেল অব সান্তিয়াগো’ বলা হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, সে ম্যাচের পরপরই ফিফা ফুটবল ম্যাচে লাল ও হলুদ কার্ডের প্রচলন করে।

 

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমাদের “যোগাযোগ” আর্টিকেলটি ভিজিট করুন।

আরও পড়ুন:

 

 

Leave a Comment