ব্রেন্ডন টেইলর [ Brendan Taylor ] বর্ণাঢ্য ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে এক প্রশ্নবাচক চিহ্ন !
২০০৭ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, অস্ট্রেলিয়া বনাম জিম্বাবুয়ের গ্রুপ পর্বের ম্যাচ। ব্যাটিং করছেন জিম্বাবুয়ের উইকেট কিপার ব্যাটার, ব্রেন্ডন টেইলর। শেষ ওভারে জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ১২ রান, বোলিং করবেন পেসার ন্যাথান ব্র্যাকেন এবং স্ট্রাইকে আছেন ব্রেন্ডন টেইলর। লো ফুলটস, হাটুগেড়ে সুইপ করে স্কোয়ারের পিছনে একটি বাউন্ডারি হাকালেন টেইলর। তখন প্রয়োজন ৫ বলে ৮ রান।
![ব্রেন্ডন টেইলর [ Brendan Taylor ] বর্ণাঢ্য ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে এক প্রশ্নবাচক চিহ্ন 2 ব্রেন্ডন টেইলর যার অন্যন্য নাম, ব্রেন্ডন টেলর বা ব্রেন্ডন রস মারে টেলর, ইংরেজিতে Brendan Taylor, Brendan Ross Murray Taylor - বর্ণাঢ্য ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে এক প্রশ্নবাচক চিহ্ন](http://sportsgoln.com/wp-content/uploads/2022/02/6-1-300x169.jpg)
ব্রেন্ডন টেইলর যার অন্যন্য নাম, ব্রেন্ডন টেলর বা ব্রেন্ডন রস মারে টেলর, ইংরেজিতে Brendan Taylor, Brendan Ross Murray Taylor
এরপর , একটি সিংগেল নিয়ে ব্যাটার এল্টন চিগাম্বুরাকে স্ট্রাইক দিলেন টেইলর। পরের ২ বলে ৩ রান নিয়ে স্ট্রাইক আবার যখন টেইলরের কাছে , ঠিক তখন জিম্বাবুয়ের জয়ের জন্য প্রয়োজন ২ বলে ৪ রান। ওভারের পঞ্চম বলে টেইলের পায়ে লেগে, লেগ বাই হয়ে জয়সূচক রান আসে জিম্বাবুয়ের এবং একটি ঐতিহাসিক জয় পায় জিম্বাবুয়ে।
জিম্বাবুয়ের সে ঐতিহাসিক জয়ে ম্যাচ সেরা হন ব্রেন্ডন টেইলর। ৪৫ বলে অপরাজিত ৬০ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলেন তিনি। জিম্বাবুয়ের হয়ে এমন অসংখ্য ইনিংস খেলেছেন, টেইলর। পৌছে নিয়ে গেছেন অংখ্য জয়ের বন্দরে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্রেন্ডন টেইলরের অভিষেক হয় ২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তবে অভিষেক মোটেও, সুখকর ছিলো না টেইলরের জন্য। অভিষেক ওয়ানডেতে চামিন্দা ভাসের বলে বোল্ড হয়ে শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের অভিষেক টেস্টেও, শুরুটা ভালো করেননি টেইলর। সেই টেস্টের ২ ইনিংস খেলে মাত্র ২৩ রান করেন টেইলর।
![ব্রেন্ডন টেইলর [ Brendan Taylor ] বর্ণাঢ্য ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে এক প্রশ্নবাচক চিহ্ন 3 ব্রেন্ডন টেইলরঃ বর্ণাঢ্য ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে এক প্রশ্নবাচক চিহ্ন](http://sportsgoln.com/wp-content/uploads/2022/02/y.jpg)
২০০৬ সালে, জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ সফরের তৃতীয় ওয়ানডেতে শেষ বলে মাশরাফি মোর্তজাকে ছক্কা হাকিয়ে জিম্বাবুয়ের সিরিজ জয় নিশ্চিত করেন। সে ম্যাচে ৭৯ বলে ৭২ রানের এক ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেন টেইলর। দলের ভেতরে এবং বাহিরে আশা যাওয়ার মধ্যে থাকা টেইলর ,সর্বপ্রথম লাইমলাইটে আসেন ২০০৭ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের হয়ে সেই ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলার কারণে।
তবে, দলে নিয়মিত উইকেটকিপার ব্যাটার টাটেন্ডা টাইবু থাকার কারণে দলে আরেক রেগুলার উইকেটকিপার ব্যাটারের তেমন একটা প্রয়োজন পড়তই না তখন। ২০০৮ সালে, বাহিরের ক্লাব ক্রিকেট খেলায় নিজ দেশের ক্রিকেট বোর্ডের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও, ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব খেলতে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান টেইলর।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের অভিষেক সেঞ্চুরি করতে টেইলরকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০০৯ সালে, বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের অভিষেক ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেন টেইলর। তবে, সে ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে বাংলাদেশের কাছে হারতে হয় ১ উইকেটে। এরপর থেকে, আর অবশ্য পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি ব্রেন্ডন টেইলরকে। একের পর এক সুবর্ণ ইনিংসের মাধ্যমে জিম্বাবুয়েকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
![ব্রেন্ডন টেইলর [ Brendan Taylor ] বর্ণাঢ্য ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে এক প্রশ্নবাচক চিহ্ন 4 ব্রেন্ডন টেইলরঃ বর্ণাঢ্য ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে এক প্রশ্নবাচক চিহ্ন](http://sportsgoln.com/wp-content/uploads/2022/02/4-1-300x225.jpg)
২০১০ সালে, ব্রেন্ডন টেইলর জিম্বাবুয়ের হয়ে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারের এক অনন্য সময় পার করে গেছেন। সে সময় ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং জিম্বাবুয়েকে নিয়ে জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিত এক ত্রিদেশীয় সিরিজে তার অনন্যসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠে জিম্বাবুয়ে। সে সিরিজে ভারতের বিপক্ষে তিনি দুই ম্যাচে ৮১ রান এবং ৭৪ রানের দুটি ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেন। এছাড়াও, সে সিরিজে পূর্ণশক্তির শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে ১টি সেঞ্চুরিও করেন তিনি। এছাড়াও, একই বছর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ১টি সেঞ্চুরিও করেন টেইলর।
২০১১ সালেও ব্যাট হাতে বেশ ভালো সময় পার করেছেন টেইলর। এ বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে ১টি সেঞ্চুরি ছাড়াও, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তিনি ব্যাক টু ব্যাক ২টি সেঞ্চুরি করেন। এছাড়াও, বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে তার হার না মানা ১৭৪ জিম্বাবুয়েকে ম্যাচটি জিততে সাহায্য করেছে যা দীর্ঘদিন পর টেস্ট ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রেখেছিলো। ২০১৩ সালে, তার নেতৃত্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে দীর্ঘদিন পর টেস্ট জিতেছে জিম্বাবুয়ে।
২০১৫ সালে , ব্যাট হাতে এক স্মরণীয় বিশ্বকাপ কাটিয়েছেন সে বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা ব্রেন্ডন টেইলর। সে বিশ্বকাপে, ২টি সেঞ্চুরি এবং ১টি ফিফটিসহ ৭২.১৬ গড়ে ৪৩৩ রান করেন।
২০১৫ সালের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নির্বাসনে যাওয়ার পর , কাউন্টি ক্রিকেটে মনোনিবেশ করেন ব্রেন্ডন টেইলর। তবে , ২০১৭ সালে জিম্বাবুয়ের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবারো ফেরেন টেইলর। ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন টেইলর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন পরবর্তী সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৭.৫২ গড়ে ১৪২৬ রান করেন টেইলর।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের পরও দাগ লেগেছে ব্রেন্ডন টেইলরের ক্যারিয়ারে। ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে সব ধরণের ক্রিকেটীয় কার্যক্রম থেকে তিনি বছরের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন তিনি। জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করার এবং নিষিদ্ধ ড্রাগ সেবনের দায়ে আইসিসি তাকে ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত করে।
নিজের পুরো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে , টেস্ট ক্রিকেটে ৩৪ ম্যাচে ৬ সেঞ্চুরি এবং ১২ ফিফটির বিনিময়ে ৩৬.২৫ গড়ে ২৩২০ রান করেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০৫ ম্যাচে ৩৫.৫৫ গড়ে , ১১ সেঞ্চুরি এবং ৩৯ ফিফটির বিনিময়ে ৬৬৮৪ রান করেন। এছাড়া, আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৪৫ ম্যাচে ২৩.৯৪ গড়ে ৬ ফিফটির বিনিময়ে করেন ৯৩৪ রান।
আরও পড়ুন:
“ব্রেন্ডন টেইলর [ Brendan Taylor ] বর্ণাঢ্য ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে এক প্রশ্নবাচক চিহ্ন”-এ 2-টি মন্তব্য