মরিনহোর স্পেশাল ওয়ান হয়ে ওঠা: মরিনহোর পিতা ফেলিক্স মরিনহো ছিলেন পর্তুগিজ ফুটবল দলের গোলরক্ষক ও ফুটবল ম্যানেজার এবং মা মারিয়া জুলিয়া ছিলেন একজন বিদ্যালয় শিক্ষিকা। মরিনহোর ধনী গডফাদার ছিলেন ভিক্টোরিয়া দি সেন্তুবাল ফুটবল দলের চেয়ারম্যান, যেটি ছিল অত্র এলাকার নামী ফুটবল দল। ছোটবেলা থেকেই মরিনহো তার ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা দেখাতে শুরু করেন। এসময়, মরিনহো তার পিতার দলের ম্যাচ রিপোর্ট ও ডোসিয়ে লিখতেন।
মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা করার সময় গণিতের শিক্ষকের সাথে তার বিরোধ ঘটে এবং তিনি বিদ্যালয় ছেড়ে দেন। তবে তিনি পুনরায় বিদ্যালয়ে ফেরত আসেন এবং তার ১২তম গ্রেড সম্পন্ন করেন। এসময় মরিনহো পর্তুগালের একটি শারিরীক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু বিদ্যালয়ে গণিতের শিক্ষকের সাথে বিরোধের কারণে তার যে কিছুটার সময় নষ্ট হয়েছিল তাই সে বছর তিনি সেখানে ভর্তি হতে পারেননি।
তার মা শারীরিক শিক্ষার বদলে মরিনহোকে ব্যবস্থাপনা পড়াতে চেয়েছিলেন এবং বেসরকারী ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানে মরিনহোর জন্য আবেদন পত্রও সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু মরিনহো সেই বিষয়ে আগ্রহ পাননি এবং ভর্তির পর প্রথম দিনেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেছিলেন।

[ মরিনহোর স্পেশাল ওয়ান হয়ে ওঠা ]
এরপর মরিনহো তার পিতার সাথে ভিলা দে কোন্দে তে চলে আসেন, যেখানে ফেলিক্স মরিনহো রিও অ্যাভে এফ.সি. ক্লাবের কোচ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরের বছর মরিনহো আইএসইএফ (পর্তুগালের একটি শারীরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) এ ভর্তি হন এবং পাঁচ বছর পর তিনি শারীরিক শিক্ষায় ডিগ্রি লাভ করেন। তার ফল ছিল বেশ ভাল। তিনি স্পোর্ট মেথডলজিতে বিশেষত্ব অর্জন করেন।
পরে তিনি স্কটল্যান্ডে আসেন এবং উয়েফা ফুটবল কোচ কোর্স করেন। পরে তিনি পর্তুগালে ফিরে গিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন। জোসে মরিনহোর ফুটবল খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার বেশি দীর্ঘ বা সফল কোনটাই হয় নি। তিনি কয়েকটি ছোট ও মাঝারি পর্তুগিজ ক্লাবে কয়েকবছর খেলেছেন, যখন তিনি পড়াশোনা করতেন। তিনিবেলেনেনসেস ক্লাবে ও পরে রিও অ্যাভে এফ.সি. দলের পক্ষে খেলেছেন। এর পরে তিনি আবার লিসবনে ফেরৎ আসেন এবং বেলেনেনসেস ক্লাবে যোগ দেন।
কোনরুপ সাফল্য ছাড়া খেলোয়াড় হিসেবে তিনি সেসিমব্রা ও কমেরসিও ই ইন্ডাসট্রিয়া ক্লাবের মত ছোট দলে থেকে খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি ঘটান। বিদ্যালয়ের কোচ হবার পর তিনি এস্ত্রেলা দা আমাদোরা ক্লাবের তৎকালীন কোচ মানুয়েল ফের্নান্দেজ এর আমন্ত্রনে ক্লাবটিতে একটি চাকরি পান। তিনি তার নিজ শহরে ভিক্টোরিয়া দি সেন্তুবাল ক্লাবে যোগ দেন ১৯৯০ দশকের শুরুতে। পরে তিনি স্যার রবি রবসনের অধীনে স্পোর্টিং এবং এফসি পোর্তোর পক্ষে দোভাসির চাকরি করেন।

এ সময় তার ডাকনাম হয়ে গিয়েছিল ট্রাডুটর (অনুবাদক)। ১৯৯৬ সালে তিনি রবসনের সাথে বার্সেলোনা ক্লাবে যোগ দেন, এখানে তিনি ক্যাটালান ভাষা শেখেন। রবসন পিএসঅভি ক্লাবে চলে গেলেও মরিনহো ন্যু ক্যাম্পে থেকে যান এবং রবসনের পরবর্তী বার্সেলোনার স্পোর্টিং কোচ লুইস ভ্যান গালের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। মরিনহোর ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাসের কারণ তিনি তা মূল কাজের বাইরে বিভিন্ন কোচিং ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত মরিনহো এফসি বার্সেলোনা বি দলের কোচ নির্বাচিত হন।
মরিনহো এরপর ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসে যোগ দেন পোর্তো ক্লাবে। পোর্তো ক্লাবের তৎকালীন অবস্থা ছিল বেশ নাজুক। তারা লিগ শিরোপা তো দূরে থাকুক কোন ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দীতা করার সুযোগ না পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল। তিনি তৎকালীন ম্যানেজার অক্টাভিও মাছাদোর স্থলাভিষিক্ত হন। মরিনহো দলকে সে বছর তৃতীয় অবস্থানে উন্নীত করেন। তিনি ১৫ টি খেলার মধ্যে ১১ জয়, ২ ড্র ও ২পরাজয়ের মাধ্যমে এ অবস্থানে দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার দল পরবর্তী উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ।

আরও পড়ুন:
- ওয়েলসের ৬৪ বছর পর বিশ্বকাপে পদার্পণ
- মরিনহোর স্পেশাল ওয়ান হয়ে ওঠা
- মার্সেলোর অশ্রুশিক্ত বিদায়
- হ্যালান্ডের কাছে গোল করা খুব সহজ !
- রিকুয়েলমে; কোচের প্রভাবে যার ফুটবল ক্যারিয়ারের বলি!
- ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৫০, কেন খেলেনি ভারত?
- ফুটবল বিশ্বকাপে মাঠের মজার ঘটনা
- ফুটবল বিশ্বকাপের শুরু যেভাবে [ The way the football world cup started ]
- ফুটবলের যত কুসংস্কার [ The superstition in Football ]
- স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল : ফুটবল দিয়েই মুক্তিযুদ্ধ [ Shadhin Bangla Football Team, 1971]
- ফুটবল বিশ্বে স্বপ্নপূরণ এবং স্বপ্নভঙ্গের এক সপ্তাহ
- ফুটবল বিশ্বে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মুসলিমদের প্রতি সম্মান
- বৃষ্টির দিনের মন মাতানো ফুটবল
- ফুটবলকে বিদায় জানালেন কার্লোস তেভেজ
- রোনালদিনহো গাউচোঃ ফুটবল পায়ে ম্যাজিক দেখানো এক যাদুকর