মার্সেলোর অশ্রুশিক্ত বিদায় : মার্সেলো ভিয়েরা, বিশ্ব ফুটবল ইতিহাসের এক অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার। মার্সেলো আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্রাজিলের পাশাপাশি ক্লাব ফুটবলে রিয়াল মাদ্রিদের হয়েও বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছেন নিজের ফুটবলীয় স্কিল।তবে, নিজের সবচেয়ে প্রিয় ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় জানালেন মার্সেলো ভিয়েরা। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সব কয়টি শিরোপাই জিতেছেন মার্সেলো। মার্সেলোর রিয়াল মাদ্রিদ থেকে বিদায়ের পর এখন তাদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় হলেন করিম বেনজেমা।
‘খেলা চালিয়ে যাব, আমার মনে হয় আমি চালিয়ে যেতে পারব। যখন ভবিষ্যত সম্পর্কে কোনো খবর থাকবে, আমি ইনস্টাগ্রামে সেটি সম্পর্কে কথা বলব।’ বিদায়বেলা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন অভিজ্ঞ ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার।
[ মার্সেলোর অশ্রুশিক্ত বিদায় ]
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা উঁচিয়ে অভিজ্ঞ ব্লাঙ্কোস তারকার আবেগঘন উদযাপনই জানিয়ে দিয়েছিল, বার্নাব্যুতে আর থাকছেন না তিনি। অবশেষে হৃদয়ভাঙা সেই সন্ধিক্ষণ আসলো। নিজের ভবিষৎ না জানালেও চোখের জলে প্রিয় ক্লাবকে মনে রাখার কথাই ঘুরেফিরে আসলো মার্সেলোর কণ্ঠে। বুট জোড়া তুলে রাখার সময় হয়নি বলেও জানালেন।
মার্সেলো ভিয়েরা ডা সিলভা জুনিয়র ব্রাজিলের রিউ দি জানেইরোতে জন্মগ্রহণ করেন। সচরাচর তিনি মার্সেলো নামেই সমধিক পরিচিত। ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়াড় মার্সেলো মূলত লেফট উইঙ্গার হিসেবে খেলছেন। এছাড়াও ক্লাব ফুটবলে তিনি রিয়াল মাদ্রিদে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
চমৎকার কৌশল পরিচালনা, দূর্দান্ত শট ও সুন্দরভাবে বল পাসের জন্য তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। সাবেক খেলোয়াড় রবার্তো কার্লোসের সাথে তাকে তুলনা করা হয়। তার সম্বন্ধে কার্লোস কলেছেন, “মার্সেলো তার উত্তরসূরী ও বিশ্বের অন্যতম লেফট ব্যাক। তার খেলোয়াড়ী দক্ষতা আমার চেয়েও বেশী”। অবিসংবাদিত ফুটবলার পাওলো মালদিনি ও দিয়েগো ম্যারাডোনার কাছ থেকেও এ অবস্থানে অংশগ্রহণ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

নয় বছর বয়সে ফুটসাল খেলায় অংশগ্রহণ করেন মার্সেলো ভিয়েরা। তেরো বছর বয়সে রিও ডি জেনেইরো’র ফ্লুমিনিজ দলে চুক্তিবদ্ধ হন। তবে, খারাপ ফলাফল প্রদর্শনের দরুন ফুটবল খেলা ছেড়ে দিতে চাইছিলেন। কিন্তু তার ক্লাব মুকুটধারী রত্ন হিসেবে বিবেচনা করে তাকে খেলা চালিয়ে যেতে পরামর্শ দেয়। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে তিনি রিয়াল মাদ্রিদ দলে যোগ দেন। তার আগমন উপলক্ষে ক্লাবের সভাপতি রামোন কালডেরন বলেছিলেন যে, তিনি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে তিনি দলে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনবেন ও দলে তরুণ খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে আসার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি এসেছেন। আমরা অত্যন্ত খুশি কারণ তিনি এমন ধরনের মুক্তো যাকে ইউরোপের অর্ধাংশ নিতে চাইছিল। অনেক দর্শকই তাকে রবার্তো কার্লোসের সাথে তুলনা করতে থাকেন ও উপযুক্ত উত্তরাধিকারীরূপে লেফট-ব্যাকে যুৎসই হিসেবে বর্ণনা করেন।
৭ জানুয়ারি, ২০০৭ তারিখে অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন যাতে তার দল ২-০ ব্যবধানে ডিপোর্টিভো লা করুনাকে পরাজিত করে। ১৪ এপ্রিল, ২০০৭ তারিখে তৎকালীন কোচ ফাবিও কাপেলো মার্সেলোকে প্রথমবারের মতো রেসিং দ্যঁ সানটেন্ডারের বিপক্ষে মাঠে নামান। ঐ খেলায় বিতর্কিতভাবে রিয়াল মাদ্রিদ ২-১ গোলে পরাজিত হয়। ২০০৭-০৮ মৌসুমে নতুন ম্যানেজার বার্নড সাস্টারের পরিচালনায় মাদ্রিদের পক্ষে লীগের প্রায় সব খেলাতেই অংশ নেন। তার সক্ষমতা, মাঠে ক্ষিপ্রগতিতে দৌঁড়ানো, আক্রমণ এবং প্রতিরক্ষার কাজে সম্পৃক্ত হয়ে রিয়াল মাদ্রিদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
ব্রাজিল দলের হয়ে ওয়েলস দলের বিরুদ্ধে তিনি অভিষিক্ত হন। টটেনহ্যাম হটসপারের হোয়াইট হার্ট লেনে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় তার দল ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল। ২০০৬-০৭ মৌসুমে রবার্তো কার্লোসের সাথে তিনিও একত্রে রিয়াল মাদ্রিদে খেলেন। ২০০৮ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অংশ নিয়ে দলকে ব্রোঞ্জপদক জয়ে সহায়তা করেন।

মে, ২০১০ সালে ফিফা বিশ্বকাপে ব্রাজিলের মূল দলের বাইরে অবস্থানকারী সাতজন সহায়তাকারী খেলোয়াড়ের একজনরূপে মনোনীত হন। ব্রাজিলীয় কোচ দুঙ্গা তাকে খেলতে আমন্ত্রণ না জানালেও নতুন ম্যানেজার মানো মেনেজেসে’র আমন্ত্রণ পান ও ১০ আগস্ট, ২০১০ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রীতিখেলায় অংশ নেন। ১১ অক্টোবর, ২০১১ তারিখে মেক্সিকো’র বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জয়ী দলের পক্ষে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান তিনি।
২০১৩ সালের কনফেডারেশন্স কাপে ব্রাজিলের পক্ষে ৫ খেলার সবগুলোতেই অংশ নেন। তন্মধ্যে চূড়ান্ত খেলায় স্পেনের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জয়ী দলেও ছিলেন ভিয়েরা। ১২ জুন, ২০১৪ তারিখে ২০১৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী খেলায় ১১ মিনিটের সময় আত্মঘাতী গোল করেন তিনি।
ক্রোয়েশিয়ার নিকিচা জেলাভিচের শট মোকাবেলা করতে গিয়ে প্রতিযোগিতার প্রথম গোল করে বসেন মার্সেলো। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ব্রাজিলের পক্ষে এটিই ছিল প্রথম আত্মঘাতী গোল। তারপরও তার দল এ খেলায় ৩-১ ব্যবধানে জয়ী হয়, যাতে নেইমার জোড়া গোল করেছিলেন।
আরও পড়ুন:
- ওয়েলসের ৬৪ বছর পর বিশ্বকাপে পদার্পণ
- মরিনহোর স্পেশাল ওয়ান হয়ে ওঠা
- মার্সেলোর অশ্রুশিক্ত বিদায়
- হ্যালান্ডের কাছে গোল করা খুব সহজ !
- রিকুয়েলমে; কোচের প্রভাবে যার ফুটবল ক্যারিয়ারের বলি!
- ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৫০, কেন খেলেনি ভারত?
- ফুটবল বিশ্বকাপে মাঠের মজার ঘটনা
- ফুটবল বিশ্বকাপের শুরু যেভাবে [ The way the football world cup started ]
- ফুটবলের যত কুসংস্কার [ The superstition in Football ]
- স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল : ফুটবল দিয়েই মুক্তিযুদ্ধ [ Shadhin Bangla Football Team, 1971]
- ফুটবল বিশ্বে স্বপ্নপূরণ এবং স্বপ্নভঙ্গের এক সপ্তাহ
- ফুটবল বিশ্বে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মুসলিমদের প্রতি সম্মান
- বৃষ্টির দিনের মন মাতানো ফুটবল
- ফুটবলকে বিদায় জানালেন কার্লোস তেভেজ
- রোনালদিনহো গাউচোঃ ফুটবল পায়ে ম্যাজিক দেখানো এক যাদুকর
“মার্সেলোর অশ্রুশিক্ত বিদায়”-এ 7-টি মন্তব্য