রিকার্ডো কাকা, এক সময়ের মাঠ কাপানো ফুটবলার। ফুটবল ইতিহাসের এক অন্যতম সেরা মধ্য মাঠের খেলোয়াড় রিকার্ডো কাকা। নিজ দেশের হয়ে ২০০২ ফুটবল বিশ্বকাপও জিতেছেন রিকার্ডো কাকা যদিও সে ফুটবল বিশ্বকাপে মাত্র ২৫ মিনিট মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন কাকা।
আট বছর বয়সে একটি স্থানীয় ক্লাবের হয়ে তার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন। সে সময়ে তিনি টেনিসও খেলতেন এবং পনেরো বছর বয়সে সাও পাওলো এফ সির সাথে পেশাদারী চুক্তি করার পরই তিনি ফুটবল খেলাকে ক্যারিয়ার হিসাবে বেছে নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন।
কাকার যখন সাত বছর বয়স তখন তার পরিবার সাও পাওলো তে বসবাস শুরু করে। সেখানকার স্কুল থেকে তিনি একটি যুব ক্লাবে ভর্তি হয় এবং একটি টুর্নামেন্ট জিতে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে, মাত্র আট বছর বয়সে ‘সাও পাওলো ফুটবল ক্লাব’ তাদের যুব দলের হয়ে তাকে খেলার সুযোগ করে দেয়। ১৫ বছর বয়সে ক্লাবটির সাথে তিনি চুক্তিবদ্ধ হন এবং ঐ বছরই ক্লাবটির যুবদলকে ‘কোপা ডি জুভেনিল’ জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন কাকা।

২০০৩ সালে তিনি €৮.৫ মিলিয়নে ট্রান্সফার ফির বিনিময়ে এ সি মিলানে যোগদান করেন এবং মিলানে অবস্থানকালেই তিনি বালোঁ দর এবং ২০০৭ সালের ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার পুরস্কার লাভ করেন।
[ রিকার্ডো কাকাঃ এক হারিয়ে যাওয়া ফুটবল যুবরাজ ]
প্রথম মৌসুমেই এসি মিলানের হয়ে জেতেন সিরি এ এবং উয়েফা সুপার কাপ। প্রথম মৌসুমেই ১০ গোল করেন ৩০ ম্যাচ খেলে। নির্বাচিত হন সিরি এ’ র বর্ষসেরা প্লেয়ার। নমিনেশন পেয়েছিলেন “ব্যালন ডি”র এবং “ফিফা প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার “পুরষ্কারের জন্য। শেষ পর্যন্ত ব্যালন ডি’র – এ ১৫ তম এবং ফিফা প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ারে – ৯ম স্থান লাভ করলেও জানান দিয়েছিলেন বিশ্ব ফুটবলে তার আগমনি বার্তার।
কাকা ২০০৬ – ০৭ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে করেন সর্বোচ্চ ১০ গোল এবং ৫ এসিস্ট। ফাইনালে লিভারপুলকে ২-১ গোলে হারিয়ে নিয়েছিলেন মধুর প্রতিশোধ। মৌসুমজুড়ে দুর্দান্ত পারফরমেন্সের কারনে প্রথম বারের মত জিতেন “ব্যালন ডি’র” এবং “ফিফা প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার” এর পুরষ্কার। একই বছর তিনি জিতেন “ফিফা ক্লাব ফুটবলার অফ দ্যা ইয়ার” এবং “আইএফএফএইচএস বেস্ট প্লেমেকার ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড ” পুরষ্কারও।
মিলানের হয়ে এই সাফল্যের পর ২০০৯ সালে ট্রান্সফার ফির তৃতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড €৬৫ মিলিয়নের বিনিময়ে রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবে যোগ দেন। খেলাধুলার পাশাপাশি তিনি তার মানবসেবামূলক কাজের জন্যেও পরিচিত। ২০০৪ সালে তিনি সর্বকনিষ্ঠ মানুষ হিসাবে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির দূত হিসেবে মনোনীত হন। খেলাধূলার পাশাপাশি তিনি তার মানবসেবামূলক কাজে অবদান রাখায় ২০০৮ ও ২০০৯ সালে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় টাইম ১০০ তে জায়গা করে নেন।
২০০৯ সালে অশ্রুসিক্ত চোখে প্রিয় ক্লাব এসি মিলয়ানকে বিদায় দিয়ে তৎকালীন রেকর্ড ৬৯ মিলিয়ন ( দ্বিতীয় সর্বোচ্চ) ইউরোতে যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদে।

তবে, রিয়াল যাত্রাটা সুখকর হয়নি এই প্লেমেকারের জন্য। সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১২০ ম্যাচ খেলে ২৯ গোল আর ৩২টি এসিস্ট করেন। জিতেছিলেন, ১ টি লা লীগা, ১ টি স্প্যানিশ কাপ ও ১ টি কোপা ডেল রে শিরোপা। তিনি রিয়াল থাকাকালীন টানা তিন বার চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমি ফাইনাল থেকে বাদ পড়ে রিয়াল। ইঞ্জুরির খড়্গ, ওজিলের দুর্দান্ত ফর্ম আর কোচ হোসে মরিনহোর আস্থাভাজন না হতে পারায় ২০১৩ সালে ৪ বছরের মাথায়ই শেষ হয়ে যায় কাকার রিয়াল অধ্যায়।
২০১৩ সালে পুনরায় আবার ফেরেন প্রাক্তন ক্লাবে। তবে, এবারের মিলান অধ্যায়টা কাকার জন্য ছিল তিক্ততায় ভরপুর। এক মৌসুম খেলেই বিদায় নেন মিলান থেকে। এরপরে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বিভাগের দল অরল্যান্ডো এফসি’তে। মাঝে একবছর ধারে শৈশবের ক্লাব সাওপাওলো’র হয়ে খেললেও, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সবাইকে কাদিয়ে অরল্যান্ডো সিটির হয়ে খেলেই বুটজোড়া তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেন এই এটাকিং মিডফিল্ডার।

২০০১ ফিফা বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্ট কাকা ব্রাজিল যুব দলের হয়ে খেলেন।কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল ঘানার সাথে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে যায়।টুর্নামেন্টটিতে কাকা ১ টি গোল করেন।কয়েক মাস পরে,৩১ জানুয়ারি ২০০২ সালে বলিভিয়া এর সাথে একটি প্রীতি ম্যাচে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক করেন।তিনি ২০০২ ফিফা বিশ্বকাপজয়ী দলের একজন সম্মানিত সদস্য ছিলেন।
তবে পুরো টুর্নামেন্ট এ মাত্র ২৫ মিনিট খেলার সুযোগ পান,যার পুরোটাই ছিলো কোস্টা রিকা এর সাথে।২০০৩ কনকাকাফ গোল্ড কাপ এ কাকা ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-২৩ দলের অধিনায়কত্ব করেন।২০১৬ সালে জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলার আগে ৯২ ম্যাচে ২৯ গোল করেন এই প্লেমেকার।
আরও পড়ুন: