পাকিস্তান ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের যদি তালিকা করা হয়, তাদের মধ্যে অবশ্যই শোয়েব মালিক [ Shoaib Malik ] এর নাম আসবে প্রথম কাতারে। শোয়েব মালিক [ Shoaib Malik ] এর জন্ম পাকিস্তানেরর শিয়ালকোট শহরে। ছোটবেলা থেকেই শোয়েব শিয়ালকোটের রাস্তায় টেপ টেনিস ক্রিকেট খেলতেন। শুরুতে শোয়েব একজন ব্যাটার হিসেবে তার ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরবর্তীতে তিনি তার বোলিংয়ের দিকে বিশেষ নজর দেন।
শোয়েব মালিক [ Shoaib Malik ] এর আন্তর্জাতিক ওয়ানডে অভিষেক হয় ১৯৯৯ সালে উইন্ডিজের বিপক্ষে এবং আন্তর্জাতিক টেস্ট অভিষেক হয় ২০০১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে। ২০০১ সালে শোয়েব-মালিকের বোলিং একশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
২০০৩ সালে, শোয়েব-মালিক ইংলিশ কাউন্টি ক্লাব গ্লুস্টারশায়ারের হয়ে চুক্তি করেন।
[ শোয়েব মালিক [ Shoaib Malik ] : ৪০ বছর বয়সী এক প্রাণবন্ত যুবক ]
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ইয়ান হার্ভির বদলে তাকে দলে নেয়া হয়। শোয়েব সেবারের কাউন্টি সিজনে টেস্ট ফরমেটে তেমন রান না করতে পারলেও, ওয়ানডে ফরমেটে নিজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন।
তিনি ১২ ওয়ানডেতে ৪৩.১২ গড়ে ৩৪৫ রান করেন এবং বল হাতে ১০টি উইকেটও নেন।
২০০৪ সালে শোয়েব-মালিকের বোলিংয়ের উপর আবারো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আইসিসি।
নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারে শোয়েব বিভিন্ন পজিশনে ব্যাট করলেও, ২০০৬ সালে যখন পাকিস্তান ক্রিকেট দল কোনো ভরসা যোগ্য ওপেনার পাচ্ছিল না, তখন শোয়েবকে ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করার সুযোগ দেয়া হয়।
![শোয়েব মালিক [ Shoaib Malik ] : ৪০ বছর বয়সী এক প্রাণবন্ত যুবক 3 শোয়েব মালিকঃ ৪০ বছর বয়সী এক প্রাণবন্ত যুবক](/wp-content/uploads/2022/02/1-300x225.jpg)
সে বছর তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সারাদিন ব্যাট করে অপরাজিত ১৪৮ রানের একটি ম্যাচ সেভিং ইনিংস খেলেন।
তবে, ইংল্যান্ডের সুইং এবং সিমিং কন্ডিশনে পাকিস্তানের অন্যান্য ব্যাটারদের তুলনায় শোয়েবের ব্যাটিং রেকর্ড দুর্বল। ইংল্যান্ডের ২০০১ এবং ২০০৬ সফরে তিনি ৮.১৬ গড়ে মাত্র ৯৮ রান করেন।
২০০৭ বিশ্বকাপের পর ইনজামাম উল হক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে গেলে, পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় শোয়েব-মালিকের উপর। মাত্র ২৫ বছর বয়সে পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় শোয়েবের উপর।
পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়ার পর পাকিস্তানের রেকর্ড মোটেও মন্দ ছিলো না।পাকিস্তানের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নেয়ার পাকিস্তান তাদের প্রথম সিরিজ খেলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এ সিরিজ পাকিস্তান ২-১ এ জেতে।
কিন্তু, ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টেস্ট সিরিজ হারে পাকিস্তান। এরপরে, ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে খেলা ওয়ানডে সিরিজও পাকিস্তান হারে ৩-২ এ।
তবে তার অধীনে পাকিস্তান ২০০৭ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনলান খেলে। এছাড়াও, ২০০৮ সালে বাংলাদেশের মাটিতে ভারত,পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজ জয় করে পাকিস্তান।
![শোয়েব মালিক [ Shoaib Malik ] : ৪০ বছর বয়সী এক প্রাণবন্ত যুবক 4 শোয়েব মালিকঃ ৪০ বছর বয়সী এক প্রাণবন্ত যুবক](/wp-content/uploads/2022/02/GettyImages-1228270714-e1633565825246-980x530-1-300x162.jpg)
শোয়েব পাকিস্তানের হয়ে ৩ টেস্ট, ৩৬ ওয়ানডে এবং ১৭ টি টোয়েন্টিতে অধিনায়কত্ব করেছেন। শোয়েবের অধিনায়ক থাকা অবস্থায় পাকিস্তান কোনো টেস্টে জয় লাভ না করলেও, তার অধীনে পাকিস্তান ২৪ টি ওয়ানডে এবং ১২ টি টোয়েন্টি ম্যাচ জেতে।২৭ জানুয়ারি ২০০৯ সালে, শোয়েব পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচিত করা হয় ইউনুস খানকে।
তবে, ২০১৮-১৯ সালে ততকালীন পাকিস্তানের নিয়মিত অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের অনুপস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ২০০৯ সালের পর আবারো অধিনায়কের দায়িত্ব পান শোয়েব-মালিক।
শোয়েব-মালিক পাকিস্তানের হয়ে দুটি বৈশ্বিক ট্রফি জেতেন যার মধ্যে একটি ২০০৯ আইসিসি টি টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ এবং আরেকটি ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শোয়েব-মালিকের রেকর্ড অত্যন্ত সমৃদ্ধ। আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে শোয়েব-মালিক ৩৫ ম্যাচে ৩৫.১৪ গড়ে ৩ সেঞ্চুরি এবং ৮ ফিফটির বিনিময়ে ২৭১২ রান করেন যার মধ্যে তার সর্বোচ্চ ২৪৫।
![শোয়েব মালিক [ Shoaib Malik ] : ৪০ বছর বয়সী এক প্রাণবন্ত যুবক 5 শোয়েব মালিক](/wp-content/uploads/2022/02/81108-220x300.jpg)
এছাড়াও, আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে শোয়েব ২৮৭ ম্যাচে ৯ সেঞ্চুরি এবং ৪৪ ফিফটির বিনিময়ে ৩৪.৫০ গড়ে ৭৫৩৪ রান করেন যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪৩। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতেও শোয়েবের রেকর্ড মন্দ নয়।১১৬ আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে ৩১.১৩ গড়ে ৮ ফিফটির বিনিময়ে ২৩৩৫ রান করেন।
শুধু ব্যাট হাতে নয়, শোয়েব তার দলের জন্য বল হাতেও বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছেন।আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বল হাতে সব ফরমেটে তিন ২১৮ টি উইকেট নিয়েছেন।
শোয়েব-মালিক ২০১০ সালের ১২ই এপ্রিল ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
বর্তমানে শোয়েব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব সংস্করণকেই বিদায় জানিয়েছেন। তার শেষ টি টোয়েন্টি সিরিজ ছিলো বাংলাদেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের মাটিতেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও বর্তমানে তিনি ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলে যাচ্ছেন।
বর্তমানে তিনি পাকিস্তান সুপার লীগের দল পেশাওয়ার জালমির হয়ে খেলছেন। ৪০ বছর বয়সী শোয়েব মালিকের এখনো বিশ্ব ক্রিকেট মঞ্চ এভাবে দাপিয়ে বেড়ানো, সত্যিই এক অবাক করা বিষয়।
ব্যক্তিগত তথ্য : শোয়েব মালিক আয়েশা সিদ্দিকি নামে একজনকে প্রথমে বিয়ে করেছিলেন। শোয়েব মালিক সানিয়া মির্জা’র প্রণয়ের এক পযায়ে শোয়েব মালিক আয়েশা সিদ্দিকী’র বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। সানিয়া মির্জা শোয়েব মালিক এরপর বিয়ে করেন।
আরও পড়ুন:
ক্রিকেট টুর্নামেন্টের মাঝে অধিনায়কত্বের পরিবর্তন এবারই প্রথম নয়