Site icon Sports Gurukul | ক্রীড়া গুরুকুল , GOLN

কাবাডি খেলার ইতিহাস এবং নিয়মাবলি

কাবাডি খেলার ইতিহাস এবং নিয়মাবলি নিয়ে আজকের আলোচনা। বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি। গ্রমাঞ্চলে এই কাবাডি ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও, শহরাঞ্চলে এ খেলার পরিধি তেমন একটা দেখা যায়। এ কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হলেও, অনেকে এ কাবাডি খেলার উৎপত্তি ইতিহাস এবং নিয়মাবলি জানেন না। কালক্রমে এই কাবাডি খেলার কদর হারিয়ে যেতে বসেছে। ১০ বছর আগেও স্কুল ভিত্তিক আন্তঃস্কুল বা থানা কাবাডি প্রতিযোগিতার আয়োজন চোখে পড়ত। বর্তমানে সেটাও চোখে পড়ে না।

Table of Contents

কাবাডি খেলার ইতিহাস এবং নিয়মাবলি

কাবাডি এশিয়া মহাদেশের গ্রীষ্মকালীন দেশ সমূহের একটি জনপ্রিয় খেলা। বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের একটি প্রাচীন খেলা। এই উপমহাদেশে অঞ্চল ভিত্তিক বিভিন্ন নামে এ খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। যেহেতু আঞ্চলিক খেলা, তাই কোনো বিধিবদ্ধ নিয়মকানুন ছিল না।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী হাডুডু খেলার পোশাকি নাম কাবাডি। কিছু দিন আগে পর্যন্ত হাডুডু খেলা ছিল বিনোদনের অন্যতম উৎস। হাডুডু প্রতিযোগিতার বিজয়ীদলকে পুরস্কারস্বরূপ ষাঁড়, খাসি, পিতলের কলসি কিংবা সোনা-রূপার মেডেল উপহার দেওয়া হতো। এটি একটি দলীয় খেলা এবং এ খেলায় খরচ বলতে কিছুই নেই।

ধারণা করা হয় যে প্রাগৈতিহাসিক যুগে যখন খাদ্য সংগ্রহের পাশাপাশি নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মানুষ একক ভাবে বা দলীয় ভাবে শিকার করতে এবং বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে শিখেছিল, তখন কাবাডির সূচনা। পুরো দক্ষিণ এশিয়াতে কাবাডি প্রচলিত থাকলেও এর উৎপত্তি স্থল পাঞ্জাব। কাবাডির উৎপত্তি সম্পর্কে আরেকটি মত হচ্ছে, মহাভারতে বর্ণিত অভিমন্যু কর্ত্তৃক কৌরব সৈন্যদের চক্রব্যুহ ভেদ করার ব্যর্থ চেষ্টার ঘটনা থেকে ধারণা নিয়ে এ খেলার সৃষ্টি হয়।

কাবাডি খেলার উৎপত্তি সম্পর্কে প্রচলিত আরেকটি ধারণা হচ্ছে এটি আরম্ভ হয় তামিলনাড়–তে। দুটি বাচ্চা ছেলের ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা থেকে এর ধারণা পাওয়া যায়, যদিও দম ধরে রাখার বিষয়টি তাতে পরে যুক্ত হয়। তামিল এলাকায় এ খেলাটি কাবাডি, সাডুগুডি, গুডুগুডু, পালিঞ্জাডুগুডু ও সাডুগুডাত্থি নামে পরিচিত। কাবাডি শব্দটি খুব সম্ভবত উৎপত্তি হয়েছে তামিল কাই (হাত) ও পিডি (ধরা) শব্দ থেকে।

এ খেলা ভারত ও পাকিস্তানে কাবাডি, বাংলাদেশে হাডুডু, নেপালে ডুডু, শ্রীলংকায়, গুডুগুডু, থাইলান্ডে থিকাব ও মালয়েশিয়ায় ছি গুডু গুডু নামে প্রচলিত ছিল। ব্যক্তি ও দলগত ভাবে শত্র“পক্ষের আক্রমণ প্রতিহতকরণ এবং তড়িৎ পাল্টা আক্রমণের কৌশল চর্চা করতে গিয়েই এ খেলার উদ্ভব। এ খেলায় সফলতার পূর্বশর্ত হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক ক্ষিপ্রতা, পেশীর ক্ষিপ্রতা, ফুসফুসের শক্তি ও সহনশীলতা, দ্রুত চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ও তা প্রয়োগের সামর্থ্য এবং সর্বোপরি প্রতিপক্ষের কৌশল ও মনোভাব অনুধাবনের যোগ্যতা।

কাবাডি কোর্টের স্বীকৃত মাপ হলো ছেলেদের জন্য ১২ দশমিক ৫ মি বাই ১০ মি. এবং মেয়েদের জন্য ১১ মি বাই ৮ মি.। প্রতি দলে ৭ জন খেলোয়াড় থাকে এবং খেলার সময় প্রতি অর্ধে ২০ মিনিট করে ৪০ মিনিট। মাঝখানে ৫ মিনিটের বিরতি। একজন রেফারি খেলা পরিচালনা করেন। তাকে সহায়তা করেন দুজন আম্পায়ার। একজন থাকেন যিনি পয়েন্ট গণনা করেন।

একটি ঐক্যবদ্ধ নিয়মে খেলাটি প্রচলনের জন্য ১৯৫০ সালে ভারতে জাতীয় কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৫৩ সালে এই ফেডারেশন কাবাডি খেলার নিয়মকানুন প্রণয়ন করে। কয়েক বছর বিচার বিশ্লেষণ করে ১৯৬০ সালে কিছু নিয়মকানুন সংশোধন ও সংযোজন হয়।

১৯৭৪ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম কাবাডি টেস্ট বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় কাবাডি দল ৫টি টেস্টে অংশগ্রহণ করে ৪-১ এ জয়লাভ করে। এ প্রতিযোগিতা বাংলাদেশে বিপুল উৎসাহের সৃষ্টি করে। ফিরতি টেস্ট খেলার জন্য বাংলাদেশের জাতীয় কাবাডি দল ১৯৭৯ সালে ভারতে যায়।

১৯৮৭ ভারতের ইস্পাতনগরী নামে খ্যাত মধ্য প্রদেশের ভিলাই স্টিল মিলের গেস্ট হাউজে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারত বাংলাদেশ ও নেপালের প্রতিনিধিবৃন্দ যোগদান করেন। উক্ত বৈঠকে এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। এরই সূত্র ধরে ১৯৮০ সালে প্রথম এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপ কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিযোগিতায় ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল অংশগ্রহণ করে। ভারত চ্যাম্পিয়ন ও বাংলাদেশ রানার্স-আপ হয়।

স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের খেলাধুলার গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে বিভিন্ন ফেডারেশন পুনর্গঠন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে পশ্চিম বাংলার আসানসোলে ভারতের জাতীয় কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ওই প্রতিযোগিতা পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ থেকে কাজী আনিছুর রহমান ও আমীর হামজা আসানসোলে যান। তখন থেকে ভারতীয় কাবাডি খেলার নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয়। ১৯৭৪ সাল থেকে বাংলাদেশে জাতীয় কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৮০ সালে ভারতের এনআইএস থেকে কাবাডি খেলার ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে আবদুল হক বাংলাদেশে কাবাডি খেলার কলাকৌশল ও নিয়মকানুন প্রবর্তন করেন।

বাংলাদেশের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ গেমসে কাবাডি খেলা নিয়মিত ইভেন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন থেকে কাবাডি খেলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখে। ১৯৯০ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে কাবাডি খেলাকে অন্তর্ভুক্ত করে এই খেলাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় উন্নীত করা হয়। এরপর থেকে কাবাডি খেলা নিয়মিত ইভেন্ট হিসেবে এশিয়ান গেমসে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বর্তমানে কাবাডি খেলা কয়েকটি দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, জাপান, থাইল্যান্ড, ইরান, মালয়েশিয়া ও কোরিয়া অন্যতম।

এসব দেশের ফেডারেশন কাবাডি খেলার উন্নতি ও প্রসারের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, কানাডার মতো দেশেও এ খেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এশিয়ান অলিম্পিক কাউন্সিল এই খেলাটিকে নিয়মিত ইভেন্ট হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে।

বর্তমানে কাবাডি খেলার প্রচার এবং প্রসারের ক্ষেত্রে ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগের কোনো বিকল্প নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত প্রো কাবাডি লীগ আয়োজনের মাধ্যমে তাদের দেশের কাবাডিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

 

 

কাবাডি খেলায় প্রচলিত সংজ্ঞা সমূহ:

আজকে আমরা কাবাডি খেলায় প্রচলিত সংজ্ঞা সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করব । এখানে কাবাডি খেলার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হলঃ

কাবাডি খেলার মাঠ এর সংজ্ঞা:

কাবাডি খেলার মাঠ বালু, কাঠের গুঁড়ো, দোয়াশ মাটি, গোবর বা সার মিশ্রিত তৈরি করা একখন্ড আয়তাকার সমতল জমিকে বুঝায়। সম্পূর্ণ খোলা জমিতে খেলার জন্য নির্ধারিত মাপ বিশিষ্ট স্থানকে খেলার মাঠ বলে। বিপক্ষের কোর্টে হানা দেবার পর স্ট্রাগল বা ধস্তাধস্তি হলে কোর্টের উভয় সাইড লাইন সংলগ্ন লবিদ্বয় খেলার মাঠের মধ্যে গণ্য হবে।

কাবাডি মাঠের বাউন্ডারি বা সীমানার সংজ্ঞা :

খেলার মাঠের চতুর্দিকে অংকিত লাইন সমূহকে বাউন্ডারি বা সীমানা বলা হয়। ৫ নং নিয়মানুসারে স্ট্র্যাগল-এর সময় লবি খেলার মাঠের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সে ক্ষেত্রে চতুসীমাও বেড়ে যায়।

কাবাডি খেলায় লবির সংজ্ঞা :

কোর্টের দৈর্ঘ্য বরাবর উভয় পাশে ১ মিটার বা ৩ ফুট ৩ ইঞ্চি মেয়ে / জুনিয়রদের জন্য ০.৭৫ মিটার বা ২ ফুট ৫ ইঞ্চি) চওড়া বিশিষ্ট আয়তাকার ক্ষেত্রকে লবি বলা হয় । একমাত্র ৫ নং নিয়ম অনুযায়ী স্ট্রাগল বা ধস্তাধস্তির সময় লবি খেলার মাঠের অন্তর্ভুক্ত হয় ।

কাবাডি খেলায় মিডল লাইন বা মধ্যরেখার সংজ্ঞা :

যে রেখা খেলার মাঠকে সমান দুইভাগে ভাগ করে তাকে মিডল লাইন বলে।

কাবাডি খেলায়র জন্য কাবাডি কোর্ট এর সংজ্ঞা ::

মধ্য রেখা দ্বারা বিভক্ত প্রত্যেক পার্শ্বের ক্ষেত্রকে কোর্ট বলে। স্ট্রাগল না হলে কোর্টের সাথে সংযুক্ত লবিদ্বয় কোর্টের অন্তর্ভুক্ত হয় না।

কাবাডি মাঠে বক লাইনের সংজ্ঞা :

মধ্যরেখা থেকে সমান দূরত্বে সমান্তরালভাবে উভয় কোর্টের অভ্যন্তরে প্রান্ত রেখা বরাবর যে লাইন টানা হয় তাকে বক লাইন বলে।

নোট

(ক) বক লাইন ৫ সে. মি. বা ২ ইঞ্চি চওড়া হবে।

(খ) বক লাইন টানার সময় মধ্যরেখার বাইরে প্রান্ত রেখা থেকে মাপ নিতে হবে এবং এই মাপের মধ্যে বক লাইনের ৫ সে. মি. বা ২ ইঞ্চি প্রসস্ততা অন্তর্ভুক্ত হবে।

(গ) কোর্টের উভয় পার্শ্বরেখা বরাবরের লবিদ্বয়কে বক লাইন বিভক্ত করবে না।

কাবাডি খেয়াল ক্যান্ট বা ডাক এর সংজ্ঞা :

বিপক্ষের কোর্টে হানা দিতে যাবার সময় মধ্যরেখা পার হওয়ার আগে আক্রমণকারী বা হানাদার খেলোয়াড় স্পষ্ট ও শ্রুতিগোচরভাবে “কাবাডি” “কাবাডি” শব্দ একদমে বা একটানা উচ্চারণ করতে থাকবে। একে ক্যান্ট বা ডাক বলে

নোট

ক্যান্ট বা ডাক বা দম রেফারি ও আম্পায়ারদের কাছে স্পষ্ট ও শ্রুতিগোচর হতে হবে । দম ভঙ্গ করা বা ভেঙ্গে ভেঙ্গে কাবাডি উচ্চারণ করা আইনসিদ্ধ নয়।

কাবাডিতে রেইডার বা আক্রমণকারীর সংজ্ঞা :

ক্যান্ট নিয়ে বিপক্ষের কোর্টে আক্রমণকারী বা হানাদারকে রেইডার বলা হয়। বিপক্ষের কোর্ট স্পর্শ করার আগেই রেইডারকে ক্যান্ট শুরু করতে হবে।

নোট

রেইডার মধ্যরেখা স্পর্শ বা অতিক্রম করার আগেই নিজের কোর্ট থেকে ক্যান্ট নেবেন।

কাবাডিতে এ্যান্টি রেইডার বা আক্রমণকারীর বিপক্ষ বা রক্ষণকারীর সংজ্ঞা :

রেইডার ক্যান্ট দিয়ে যে কোর্টে হানা দিচ্ছে ঐ কোর্টের খেলোয়াড়দেরকে এটি রেইডার বা আক্রমণকারীর বিপক্ষ বলা হয়। একে সংক্ষেপে ‘এ্যান্টি” বলে।

কাবাডিতে ক্যান্ট বা ডাক হারানোর সংজ্ঞা :

বিপক্ষের কোর্টে ক্যান্ট দিতে গিয়ে উপর্যুপরি ও পরিষ্কারভাবে কাবাডি বলা থামানো হলে অথবা নতুন করে দম নিলে দম হারানো হয়েছে বলে ধরা হবে। দম বা ডাক এক দমে বা নিঃশ্বাসে আরম্ভ করে উপর্যুপরি উচ্চারিত হয়ে একদমে বা নিঃশ্বাসে শেষ করতে হবে।

কাবাডিতে এ্যান্টিকে আউট করার সংজ্ঞা :

খেলার নিয়ম ভঙ্গ না করে কোন রেইডার বা আক্রমণকারী যদি কোন এ্যান্টিকে (প্রতিরক্ষাকারীদের খেলোয়াড়) চুঁইয়ে দিতে পারে অথবা এ্যান্টির শরীরের কোন অংশ রেইডারকে স্পর্শ করলে এবং রেইডার ক্যান্ট নিয়ে নিজের কোর্টে ফিরতে পারলে স্পর্শকারী এ্যান্টি আউট হবে।

নোট

(ক) রেইডারকে অবশ্যই ক্যান্টসহ মধ্যরেখা পার হয়ে নিজ কোর্ট স্পর্শ করতে হবে।

(খ) শরীরের অংশ বলতে পোশাক, জুতো প্রভৃতিকেও বুঝায় । ১৩। রেইডার বা আক্রমণকারীকে ধরা
প্রতিপক্ষ দলের কোন খেলোয়াড় বা খেলোয়াড়েরা যদি খেলার নিয়ম কানুন ভঙ্গ না করে রেইডার বা আক্রমণকারীকে তার ক্যান্ট শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিজের বা নিজেদের কোর্টে আটকে রাখতে পারে তবে তাকে হোল্ডিং দ্য রেইডার বা আক্রমণকারী ধরা বলা হয় ।

কাবাডিতে নিরাপদে কোর্টে পৌঁছানোর সংজ্ঞা :

রেইডার বা আক্রমণকারী মধ্য রেখা পার হয়ে খেলার কোন আইন ভঙ্গ না করে। ক্যান্টসহ যদি নিরাপদে নিজের কোর্ট স্পর্শ করতে পারে তবে তাকে নিরাপদে কোর্টে পৌঁছানো বলা হয় ।

কাবাডি খেলায় রেইড বা হানার সংজ্ঞা :

নিয়মানুসারে ক্যান্ট নিয়ে বিপক্ষ দলের কোর্টে হানা দেয়া বা আক্রমণ করাকে রেইড বা হানা দেয়া বলে।

কাবাডি খেলায় স্পর্শ বা ছোঁয়ার সংজ্ঞা :

আক্রমণকারী হানা দিয়ে বিপক্ষকে স্পর্শ করা বা বিপক্ষের শরীর বা পোশাক আক্রমণকারীর স্পর্শে আসাকে ছোঁয়া বলা হয়।

কাবাডি খেলায় স্ট্রাগল বা ধস্তাধস্তির সংজ্ঞা :

রেইডার বিপক্ষ কোর্টে হানা দেয়ার সময় যদি কোন এ্যান্ট্রিকে স্পর্শ করে কিংবা কোন এ্যান্ট্রি যদি রেইডারকে স্পর্শ করে তাহলে স্ট্রাগল বা ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়।

নোট

ক্যান্ট নিয়ে প্রতিপক্ষের কোর্টে রেইডার প্রবেশ করার পর যতক্ষণ স্ট্রাগল হবে না। রেইডার ও এ্যান্ট্রির পারস্পরিক সংস্পর্শ হবার পর ট্রাগল শুরু হয়।

কাবাডি খেলায় সফল হানার সংজ্ঞা :

বিপক্ষ কোর্টে রেইড করার সময় যদি রেইডার অন্ততপক্ষে একবার বক লাইন অতিক্রম করে ক্যান্টসহ নিজের কোর্টে ফিরে আসতে পারে তাহলে তারে ‘সাকসেসফুল রেইড বা সফল হানা বলা হয়।

নোট

(ক) রেইডার যদি কোন এ্যান্ট্রি বা এ্যান্ট্রিবৃন্দকে স্পর্শ করে ক্যান্টসহ নিজের কোর্টে ফিরে আসতে পারে তবে তাকে বক লাইন অতিক্রম করতে হবে না।

(খ) বিপক্ষ কোর্টের রেইডারের শরীরের কোন অংশ যদি প্রান্ত রেখা ও বক লাইনের মধ্যবর্তী মাঠকে স্পর্শ করে এবং একই সময়ে তার শরীরের কোন অংশ যদি বক লাইন ও মিডল লাইনের অন্তর্গত মাঠের সংস্পর্শে না থাকে তবে রেইডার বক লাইন অতিক্রম করে ভূমি স্পর্শ করার সময় তার শরীরের কোন অংশ মিডল লাইন ও বক লাইনের মধ্যবর্তী ভূমির সংস্পর্শে থাকবে না ।

কাবাডি খেলায় লোনার সংজ্ঞা :

কোন দল তাদের বিপক্ষের সকল খেলোয়াড়কে আউট করতে পারলে তারা একটি লোনা পাবে এবং এর জন্য ২ পয়েন্ট অতিরিক্ত হিসেবে ফলাফলের সাথে যোগ করা হবে।

কাবাডি খেলায় রেইডারকে তাড়া করার সংজ্ঞা :

রেইডার বিপক্ষ কোর্টে সফলভাবে হানা দেয়ার পর নিজের কোর্টে ফিরে গেলে ৬ ৭, ৮নং নিয়ম ভঙ্গ না করে তাকে দ্রুত আক্রমণ করাকে ‘চেজিং দা রেইডার’ বা রেইডারকে তাড়া করা বুঝায়।

নোট

স্ট্রাগল হলে রেইডারের নিজের কোর্টে ফেরার সময় চেজ বা তাড়া’ করা যাবে না।

 

 

 

 

কাবাডি খেলার মাঠের বিস্তারিত:

কাবাডি খেলার মাঠ হবে সমতল, নরম এবং গোবর মেশানো মাটি ও কাঠের গুঁড়োর সংমিশ্রনে তৈরি। প্রথমে নির্ধারিত স্থানের মাটি দেড় ফুট থেকে দুই ফুট গভীর করে খুঁড়ে ফেলতে হবে। এর পর ৬ ইঞ্চি থেকে ৯ ইঞ্চি পর্যন্ত পাথর বা ইটের খোয়া বিছিয়ে দিতে হবে । তারপর ভিটি বালু ও দোয়াশ মাটি মিশিয়ে গর্ত পুরু করে ভরতে হবে এবং ঘনঘন পানি ছিটিয়ে হালকা রোলার দিয়ে মাটি সমান করতে হবে।

এ সময় আলগা মাটি শক্ত করার জন্য গোবর মেশানো পানি ছিটিয়ে দেয়া যেতে পারে। এরপর ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি পরিমাণ গোবর, কাঠের গুঁড়ো ও ভিটি বালু মিশ্রিত আস্তরণ দিয়ে পানি ছিটিয়ে রোলার টেনে শক্ত করতে হবে। তারপর মাঠ কাবাডি খেলার উপযোগী হবে।

 

কাবাডি মাঠের মাপ ও নকশা:

পুরুষ, মহিলা ও জুনিয়র খেলায় কাবাডি কোর্টের মাপ হবে আলাদা আলাদা। বইয়ের ছবি অনুসারে কাবাডি কোর্টের মাপ ও নকশা হতে হবে।

 

 

কাবাডি কোর্টের বিবরণ:

কাবাডি খেলার মাঠ হবে আয়তাকার। এই আয়তাকার মাঠের মধ্যে কাবাডি কোর্ট করতে হবে। চুনের দাগ দিয়ে কোর্টের সীমা রেখা টানা যায়। নিচে কাবাডি কোর্টের পরিমাপ দেয়া হলো ঃ

পুরুষের কাবাডি কোর্ট:

পুরুষ কোর্টের দৈর্ঘ্য হবে ১২.৫০ মিটার বা ৪১ ফুট এবং প্রস্থ ১০ মিটার বা ৩২ ফুট ৯১/২ ইঞ্চি। মাঠের ঠিক মাঝখানে আড়াআড়িভাবে একটি লাইন টেনে মাঠকে সমান দু’ভাগে ভাগ করতে হবে। এই লাইনকে মিডল লাইন বা মধ্য রেখা বলা হয়।

মিডল লাইন থেকে উভয় প্রান্ত রেখার দিকে ৩.২৫ মিটার বা ১০ ফুট ৮ ইঞ্চি দূরে সমান্তরালভাবে আরো দু’টি রেখা টানতে হবে। এই রেখাকে বলে “বক লাইন”।

বক লাইন থেকে মাঠের প্রান্ত রেখা বা এন্ড লাইনের দূরত্ব হবে ৩ মিটার বা ৯ ফুট ১০ ইঞ্চি। মাঠের দু’দিকের দৈর্ঘ্য বরাবরের সাইড লাইন বা পার্শ্ব রেখা হতে ১ মিটার বা ৩ ফুট ৩ ইঞ্চি ভিতরে সমান্তরালভাবে আরো দু’টি লাইন টানা হবে এবং তা কোর্টের উভয় দিকের প্রান্ত রেখার সাথে যুক্ত হবে অর্থাৎ কোর্টের ভিতরে উভয় দিকের সাইড লাইন সংলগ্ন ১২.৫০ মিটার বা ৪১ ফুট × ১ মিটার বা ৩ ফুট ৩২ ইঞ্চি বিশিষ্ট আরো দুটি আয়তাকারক্ষেত্র তৈরি হয়।

মিডল লাইন বা মধ্যরেখা আড়াআড়িভাবে এই আয়তাকার ক্ষেত্র দু’টিকে বিভক্ত করবে। এই ক্ষেত্রগুলিকে বলা হয় লবি বা কক্ষ। উভয় সাইড লাইন বরাবর দু’টি করে লবি থাকে। প্রতিটি কোর্টের উভয় লবিসহ মোট প্রস্থ ১০ মিটার বা ৩২ ফুট ৯১/২ ইঞ্চি।

উভয় কোর্টের প্রান্ত রেখা থেকে বাইরে ২ মিটার বা ৬ ফুট ৬৩%, ইঞ্চি দূরে ৮ মিটার বা ২৬ ফুট ৩ ইঞ্চি x ১ মিটার বা ৩ ফুট ৩ ইঞ্চি আয়তন বিশিষ্ট আরো দু’টি আয়তাকার ক্ষেত্র প্রান্তরেখার সমান্তরালে তৈরি করা হয়। একে বলা হয় ‘সিটিং ব্লক’।

 

মহিলা ও পুরুষ জুনিয়র কাবাডি কোর্ট:

কোর্টের দৈর্ঘ্য হবে ১১ মিটার বা ৩৬ ফুট ১ ইঞ্চি এবং প্রস্থ লবিসহ ৮ মিটার বা ২৬ ফুট ৩ ইঞ্চি ।

 

 

কাবাডি কোর্টে বক:

মিডল লাইন বা মধ্যরেখা থেকে সমান্তরালভাবে উভয় প্রান্তরেখার দিকে ২.৫০ মিটার বা ৮ ফুট ২১/২ ইঞ্চি দূরে আড়াআড়িভাবে উভয় দিকে কোর্টের ভিতরে ‘বক লাইন টানা হবে।

কাবাডি কোর্টে লবি:

কোর্টের ভিতরে উভয় সাইড লাইন বা পার্শ্বরেখা সংলগ্ন আয়তাকার ক্ষেত্র হচ্ছে লবি। লবি দৈর্ঘ্যে হবে ১১ মিটার বা ২৬ ফুট ১ ইঞ্চি এবং গ্রন্থে ১ মিটার বা ৩ ফুট ৩১ ইঞ্চি ।

কাবাডি কোর্টে সিটিং ব্লক:

উভয় কোর্টের প্রান্তরেখা থেকে ২ মিটার বা ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি দূরে আঁকা আয়তাকার ক্ষেত্র হচ্ছে ‘সিটিং ব্লক’। সিটিং ব্লক দৈর্ঘ্যে হবে ৬ মিটার বা ১৯ ফুট ৮১/২ ইঞ্চি এবং প্রস্থে ১ মিটার বা ৩ ফুট ৩১ ইঞ্চি ।

কাবাডিতে মহিলা জুনিয়র কোর্ট দৈর্ঘ্যে:

কোর্ট দৈর্ঘ্যে হবে ৯.৫০ মিটার বা ৩১ ফুট ২ ইঞ্চি এবং প্রস্থে ৬.৫০ মিটার বা ২১ ফুট ৪ ইঞ্চি ।

কাবাডি কোর্টে বক লাইন:

মিডল লাইন থেকে সমান্তরালভাবে উভয় প্রান্ত রেখার দিকে ২.২৫ মিটার বার ৭ ফুট ৪১/২ ইঞ্চি আড়াআড়িভাবে উভয় কোর্টের ভিতরে ‘বক লাইন’ টানা হবে।

কাবাডি কোর্টে লবি :

কোর্টের ভিতরে উভয় সাইড লাইন বা পার্শ্বরেখা সংলগ্ন আয়তাকার ক্ষেত্র হচ্ছে লবি । দৈর্ঘ্যে ৯.৫০ মিটার বা ৩১ফুট ২ ইঞ্চি প্রস্থে ০ ৭৫ মিটার বা ২ ফুট ৫১/২ ইঞ্চি হবে ।

কাবাডি কোর্টে সিটিং ব্লক :

উভয় কোর্টের প্রান্ত রেখা থেকে ২ মিটার বা ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি দূরে আঁকা আয়তক্ষেত্র। এর দৈর্ঘ্য হবে ৫ মিটার বা ১৬ ফুট ৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ১ মিটার বা ৩ ফুট ৩১৪ ইঞ্চি ।

 

নোট

(ক) কোর্টের সমস্ত দাগ পরিষ্কারভাবে টানতে হবে এবং কোন রেখাই ৫ সেন্টিমিটার বা ২ ইঞ্চির অধিক চওড়া হবে না ।

(খ) মিডল লাইন বা মধ্য রেখার দাগও ৫ সে.মি. বা ২ ইঞ্চি চওড়া হবে এবং তা উভয় কোর্টের মধ্যে গণ্য হবে ।

(গ) সাইড লাইন বা পার্শ্বরেখা এবং এন্ড লাইন বা সমাপ্তি রেখার ৫ সেঃ মিঃ বা ২ ইঞ্চি সীমা কোর্টের ভিতরে গণ্য হবে।

(ঘ) বক লাইনের দাগ টানার সময় মিডল লাইনের বাইরের প্রান্ত থেকে মাপ নিতে হবে।

(ঙ) প্রতিযোগিতামূলক খেলা পরিচালনা ও খেলার সুবিধার্থে কোর্টের সাইড লাইন এবং এন্ড লাইন থেকে বাইরে কমপক্ষে ৪ মিটার বা ১৩ ফুট ১ ইঞ্চি পরিমাণ খোলা ফাঁকা জায়গা থাকা প্রয়োজন ।

 

কাবাডি কোর্টে বসার জায়গা:

পুরুষদের জন্য বসার স্থান প্রান্তরেখা থেকে ২ মিটার বা ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি দূরে হবে। বসার স্থান ৮ মিটার বা ২৬ ফুট ২ ইঞ্চি x ১ মিটার বা ৩ ফুট ৩ ইঞ্চি আয়তন বিশিষ্ট হবে। যেখানে অতিরিক্ত খালি জায়গা থাকবে না সেখানে রেফারি বসার জায়গা নির্ধারণ করবেন।

 

 

কাবাডি খেলার নিয়ম:

আমাদের দেশে কাবাডি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা। এই খেলাটি বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে অধিকতর জনপ্রিয় হওয়ায় একে গ্রাম বাংলার খেলাও বলা হয়। কোন কোন স্থানে কাবাডিকে আবার হা-ডু-ডু খেলাও বলা হয়।

১নং নিয়ম:

খেলা শুরুর আগে দু’দলের অধিনায়কের উপস্থিতিতে রেফারি কয়েন দ্বারা টস করবেন। টস জয়ী অধিনায়ক কোর্ট পছন্দ বা বিপক্ষের কোর্টে রেইড করার যে কোন একটি বেছে নেবেন। খেলার দ্বিতীয়ার্ধে কোর্ট বদল হবে এবং যে দল প্রথমে রেইড করেনি তারা রেইড করার সুযোগ পাবে। প্রথমার্ধের খেলা শেষে উভয় দলের যে কয়জন খেলোয়াড় বেঁচেছিল কেবল তারাই খেলায় অংশ নেবে। অর্থাৎ যারা আউট হয়ে সিটিং ব্লকে বসেছিল তারা আউট খেলোয়াড় হিসেবে বসে থাকবে।

২ নং নিয়ম:

কোন খেলোয়াড় মাঠের বাউন্ডারির বাইরের ভূমি স্পর্শ করলে তাকে ‘আউট’ বলে ধরা হবে। কিন্তু স্ট্রাগলের সময় কোর্টের বাইরের ভূমি স্পর্শ করলেও যদি তার শরীরের কোন অংশ সরাসরি সীমানার মধ্যে অবস্থিত কোন খেলোয়াড়কে বা ভূমি স্পর্শ করে। তবে তিনি আউট হবেন না।

নোট

অবশ্যই সীমানার ভিতরে শরীরের সাথে সংস্পর্শ থাকতে হবে।

৩ নং নিয়ম:

খেলা চলাকালে কোন এ্যান্ট্রি সীমানার বাইরে চলে গেলে তিনি আউট হবেন। রেফারি বা আম্পায়ার তাকে তখনি কোর্টের বাইরে যেতে নির্দেশ দেবেন এবং জোরে তার নম্বর উচ্চারণ করে তাকে আউট ঘোষণা করবেন। তখন রেইড চলতে থাকলে এজন্য তিনি কোন বাঁশি বাজাবেন না।

 

 

৪নং নিয়ম:

রেইড চলাকালে যদি কোন এ্যান্ট্রির শরীরের কোন অংশ কোর্টের বাইরের ভূমি স্পর্শ করে বা বাইরে চলে যায় এবং তিনি রেইডারকে ধরে ফেলেন তবে রেইডার আউট হবেন না। কোর্টের বাইরে চলে যাবার ফলে ঐ এ্যান্ট্রি আউট হবেন।

 

৫ নং নিয়ম:

স্ট্রাগল শুরু হলে উভয় দিকের লবি খেলার মাঠের অন্তর্ভুক্ত অংশ হিসেবে গণ্য হবে। স্ট্রাগল শেষ হবার পর স্ট্রাগলে জড়িত খেলোয়াড়গণ নিজের কোর্টে প্রবেশের জন্য লবি ব্যবহার করতে পারেন।

 

৬ নং নিয়ম:

রেইডার ‘কাবাডি’ শব্দ জোরে উচ্চারণ করে ক্যান্ট দেবেন। যদি কাবাডি শব্দ উচ্চারণ না করে ক্যান্ট বা ডাক দেন তবে রেফারি বা আম্পায়ার তাকে নিজের কোর্টে পাঠিয়ে সতর্ক করে দেবেন এবং বিপক্ষকে রেইড করার সুযোগ দেবেন। এমতাবস্থায় ফেরৎ যাওয়া রেইডারকে এ্যান্ট্রি দল তাড়া করতে পারবে না।

 

৭নং নিয়ম:

রেইডার বিপক্ষের কোর্ট স্পর্শ করার আগেই ক্যান্ট বা ডাক আরম্ভ করবেন। যদি ক্যান্ট বিলম্বে শুরু করে তবে রেফারি বা আম্পায়ার রেইডারকে নিজ কোর্টে ফেরৎ পাঠাবেন এবং সতর্ক করে দেবেন। এর ফলে বিপক্ষকে রেইড করার সুযোগ দেয়া হবে। এ অবস্থায়ও বিপক্ষ দল রেইডারকে তাড়া করতে পারবে না ।

নোট

রেইডার যদি দেরিতে ক্যান্ট বা ডাক শুরু করে এবং কোন এ্যান্ট্রিকে স্পর্শ করে তাহলেও এ্যান্ট্রি আউট হবে না।

 

৮নং নিয়ম:

কোন রেইডারকে সতর্ক করে দেয়ার পরও যদি তিনি উল্লেখিত ৬ ও ৮ নং নিয়ম ভঙ্গ করেন তবে রেফারি বা আম্পায়ার বিপক্ষকে একটি পয়েন্ট দেবেন। তবে আইন অমান্যকারী রেইডার আউট হবেন না।

 

 

৯নং নিয়ম:

রেইডার বিপক্ষের কোর্টে পরপর তিনবার রেইড করবেন। পরপর তিনবার রেইড করার পরও যদি রেইডার কোন পয়েন্ট লাভ করতে না পারেন তবে বিপক্ষ একটি পয়েন্ট পাবে। ব্যর্থ রেইডের জন্য আম্পায়ার এই পয়েন্ট ঘোষণা করবেন এবং স্কোরশীটে × চিহ্ন দিয়ে ধারাবাহিক ফলাফল রক্ষা করবেন। লোনা, বিরতির পর বা অতিরিক্ত সময়ের খেলায় এই ব্যর্থ রেইড গণ্য হবে না ।

নোট

প্রত্যেক আম্পায়ার তার ডান দিকের কোর্টে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের এই নিষ্ফল রেইড গুণবেন। দু’বার ব্যর্থ রেইড হয়ে গেলে তৃতীয়বার রেইড শুরুর আগেই আম্পায়ার তৃতীয় ও শেষ রেইড করার মধ্যে যদি একবার পয়েন্ট অর্জিত হয় তবে পুনরায় নতুন করে নিষ্ফল গোনা শুরু হবে।

 

১০ নং নিয়ম:

একজন রেইডার নিরাপদে কোর্টে ফেরার পর অথবা বিপক্ষের কোর্টে ধরা পড়ে আউট হলে বিপক্ষ দল ৫ সেকেন্ডের মধ্যে রেইড করবে। এভাবে খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত রেইড চলতে থাকবে।

নোট

রেফারি ও আম্পায়ার ৫ সেকেন্ডের বিষয়টি খেয়াল রাখবেন।

 

১১নং নিয়ম:

যদি কোন রেইডার এন্ট্রি দ্বারা ধরা পড়ে স্ট্রাগল করার পর নিজের কোর্টে নিরাপদে ফিরে আসতে পারে তবে তাকে বিপক্ষ দল তাড়া করতে পারবে না

নোট

যদি কোন রেইডার কোন এ্যান্ট্রিকে ছুঁয়ে নিজের কোর্টে ফিরে আসে তবে তাকে তাড়া করা যাবে ।

 

১২ নং নিয়ম:

বিপক্ষের কোর্টে একসাথে একজন রেইডার রেইড করবেন। কখনোই একজনের অধিক হবে না। যদি একাধিক রেইডার একসাথে রেইড করে তবে রেফারি তাদের সকলকে নিজের কোর্টে ফেরৎ পাঠাবেন এবং এ কারণে তাদের রেইড করার সুযোগ বাতিল করে বিপক্ষকে রেইড করার সুযোগ দেবেন। এ অবস্থায় রেইডারগণ কোন এন্ট্রিকে ছুঁয়ে দিলে তা কার্যকরী হবে না। এ সময় রেইডারকে তাড়া করা যাবে না।

 

১৩ নং নিয়ম:

একসাথে একাধিক রেইডার বিপক্ষের কোর্টে হানা দিলে রেফারি বা আম্পায়ার সতর্ক করে দেবেন। সতর্ক করার পরও এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে রেফারি বা আম্পায়ার প্রথম প্রবেশকারী রেইডার ছাড়া বাকি সবাইকে ‘আউট’ বলে ঘোষণা করবেন। রেফারি রেইডারদেরকে সতর্ক করবেন।

 

১৪নং নিয়ম:

বিপক্ষের কোর্টে হানা দেয়ার সময় কোন রেইডার ক্যান্ট বা ডাক বন্ধ করলে তিনি আউট হবেন।

 

১৫নং নিয়ম:

রেইডার এ্যান্টির কোর্টে ধরা পড়লে এ্যান্টিগণ রেইডারকে অবৈধভাবে (নাক মুখ আটকিয়ে আহত হতে পারে এমন কৌশল অবলম্বন করে অথবা অন্যভাবে) আটকাতে পারবে না। এমন করলে রেইডার আউট হবে না বরং এ্যান্টিকে সতর্ক করে দেবেন।

 

১৬ নং নিয়ম:

কোন রেইডার কোন এ্যান্টিকে অথবা কোন এ্যান্টি কোন রেইডারকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিয়ে কোর্টের বাইরে ফেলে দিতে পারবে না। এমনি করলে রেফারি বা আম্পায়ার উক্ত খেলোয়াড়কে ‘আউট’ ঘোষণা করবেন ।

নোট

এ ব্যাপারে রেফারি বা আম্পায়ার যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করবেন। ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত তা লক্ষ্য করতে হবে।

 

১৭ নং নিয়ম:

রেইডারের সফল ছানা শেষে মধ্য রেখা পার হয়ে নিজের কোর্টে না ফেরা পর্যন্ত যদি কোন এ্যান্টি রেইডারের কোর্টে হানা দেয়ার জন্য মধ্য রেখা পার হয়ে বিপক্ষের কোর্টের ভূমি স্পর্শ করেন তবে তিনি আউট হন এবং তিনি যদি কোন রেইডারকে নিজের কোর্টে ধরে রাখতে সাহায্য করেন বা ধরেন তবে সেই রেইডার আউট হবেন না বরং যে এ্যান্ট্রি রেইডারের কোর্ট স্পর্শ করবেন তিনি আউট হবেন।

 

১৮নং নিয়ম:

নিজের পালা ছাড়া কোন রেইডার রেইড করতে গেলে রেফারি তাকে ফেরৎ পাঠাবেন এবং সতর্ক করে দেবেন। রেইডার পক্ষ একবার সতর্কিত হবার পরও যদি ইচ্ছাকৃত দ্বিতীয়বার এ রকম অপরাধ করে তবে রেফারি বিপক্ষ দলকে একটি পয়েন্ট নিতে পারেন।

নোট

এই পয়েন্টের ফলে বিপক্ষের কোন আউট খেলোয়াড় ইন হবে না।

 

 

১৯ নং নিয়ম:

একটি দল যখন বিপক্ষ দলের সব খেলোয়াড়কে আউট করতে পারবে তখন একটি লোনা পাবে। এই লোনার দুই পয়েন্ট অতিরিক্ত হিসেবে ঐ দলের মোট পয়েন্টের সাথে যুক্ত হবে। লোনার পর পুনরায় খেলা শুরু হবে এবং সকল খেলোয়াড় ১০ সেকেন্ডের মধ্যে কোর্টে প্রবেশ করবে। যে দল কোর্টে প্রবেশ করতে দেরি করবে রেফারি তার বিপক্ষ দলকে একটি পয়েন্ট দান করবেন। এরপরও কোর্টে আসতে দেরি করলে রেফারি প্রতি ৫ মিনিট অন্তর বিপক্ষ দলকে একটি করে পয়েন্ট দিতে থাকবেন খেলার শেষ সময় পর্যন্ত।

 

২০ নং নিয়ম:

রেইডারের বিপক্ষ কোর্টে বিপজ্জনকভাবে খেলা বা নিজ দলের নির্দেশ মোতাবেক খেলার জন্য রেফারি রেইডারকে সতর্ক করে দেবেন। এর পুনরাবৃত্তি ঘটলে বিপক্ষকে একটি পয়েন্ট প্রদান করবেন।

নোট

বিপক্ষ কোর্টে রেইডার হানা দেবার সময় শুধুমাত্র এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

 

২১নং নিয়ম:

একজন রেইডারের শরীর বা ধর ছাড়া অন্য কোথাও ধরা যাবে না। এই নিয়মের ব্যতিক্রম যিনি করবেন তিনি আউট হবেন। রেইডারকে ইচ্ছাকৃত বা ন্যায়ভাবে ধরা না হয় তবে আউট হবেন না ।

নোট

কোন রেইডারের কাপড় বা চুল ধরে রাখলে তিনি আউট হবেন না। পক্ষান্তরে যে এ্যান্টি কাপড় বা চুল ধরবে তিনি আউট হবেন।

 

২২নং নিয়ম:

খেলা চলাকালে কোন পক্ষের একজন বা দুইজন খেলোয়াড় অবশিষ্ট থাকে এবং অধিনায়ক যদি তাদেরকে আউট ঘোষণা করতে চান এবং পুরো দলকে কোটে নামাতে চান তবে বিপক্ষ দল আউট ঘোষণাকৃত খেলোয়াড়দের পয়েন্টসহ একটি লোনা পাবে ।

নোট

কেবলমাত্র অধিনায়ক এ ঘোষণা দিয়ে সম্পূর্ণ দল মাঠে নামাতে পারেন।

 

২৩ নং নিয়ম:

খেলোয়াড়গণ যে সিরিয়াল অনুসারে আউট হবে আবার সেই সিরিয়াল অনুসারে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের আউট হবার পরিবর্তে কোর্টে প্রবেশ করবে।

নোট

আউট হওয়া এবং পুনরায় বেঁচে যাওয়া সিরিয়াল অনুসারে হবে। সহকারি স্কোরার এ বিষয়ে লক্ষ রাখবেন এবং স্কোরশীটে আউট হওয়া বেঁচে যাওয়া খেলোয়াড়দের হিসাব রাখবেন ।

 

 

 

কাবাডি প্রতিযোগিতার নিয়ম:

১। প্রতি দলে ১২ জন করে খেলোয়াড় থাকবে। ৭ জন খেলোয়াড় কোর্টে খেলবে এবং বাকি ৫জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে কোর্টের বাইরে থাকবে।

২। পুরুষ প্রতিযোগিতার সময় প্রথম ও দ্বিতীয়ার্ধসহ মোট ৪০ মিনিট হবে। দু’অর্ধের মাঝখানে ৫ মিনিট বিরতি। মহিলা, জুনিয়র ও মেয়ে জুনিয়রদের খেলায় দু’অর্ধে সময়সীমা হবে মোট ৩০ মিনিট এবং মাঝখানে বিরতি ৫ মিনিট বিরতির পর প্রতিযোগী দল কোর্ট বদল করবে।

নোট

প্রতি অর্ধের শেষ সময়ে কোন রেইড হলে রেফারি তা সমাপ্ত করে তবে খেলা শেষ করবেন।

৩। কোন পক্ষ তার বিপক্ষের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে আউট করার সুবাদে একটি করে পয়েন্ট লাভ সমস্ত খেলোয়াড়কে আউট করতে পারলে লোনা বাবস অতিরিক্ত ২ পয়েন্ট লাভ করবে।

নোট

শেষ খেলোয়াড়কে আউট করার জন্য রেইডার হানা দিলে যদি কোন কারণে রেইডার ও এ্যান্টি দু’জনেই ফাউল করার ফলে আউট হয় তবে উভয় পক্ষ ১ পয়েন্ট করে পাবে। তবে সেই সাথে উভয় দলের একজন করে খেলোয়াড় বাঁচবে এবং কোর্টে প্রবেশ করবে। এ ক্ষেত্রে লোনা হবে না। তবে সকল খেলোয়াড় আউট হলে লোনা হবে।

৪। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে দল বেশি পয়েন্ট অর্জন করবে খেলায় তারাই জয়ী হবে।

৫। যদি দুই দল সমান পয়েন্ট লাভ করে খেলায় ‘টাইম’ হয় তবে আবার ৫ মিনিট করে অতিরিক্ত ১০ মিনিট খেলা হবে। মূল খেলা শেষে দু’দলের যে খেলোয়াড় অবশিষ্ট থাকবে কেবল তারাই অতিরিক্ত খেলায় অংশগ্রহণ করবে। অতিরিক্ত সময়ের খেলা মূল সময়ের খেলার অংশ বলে বিবেচিত হবে।

 

 

নোট

অতিরিক্ত সময়ে কোন বিরতি থাকবে না। তবে ৫ মিনিট পর উভয় দল কোর্ট বদল করবে। মূল খেলায় যে দল প্রথম রেইড করেছিল তারাই প্রথম রেইড করবে।

৬। অতিরিক্ত ১০ মিনিট খেলার পরও যদি খেলা টাই থাকে তবে এই প্রতিযোগিতায় যে দল প্রথম ‘লিডিং পয়েন্ট” সংগ্রহ করেছিল তারাই জয়ী হবে।

নোট

যে দল প্রথম পয়েন্ট সংগ্রহ করে তাকে ‘লিডিং পয়েন্ট বলে। উভয় দল এক সাথে পয়েন্ট লাভ করলে যে দল দ্বিতীয় পয়েন্ট আগে পাবে তাদের ‘লিডিং পয়েন্ট” ধরা হবে।

৭। যদি উভয় দলের কোন লিডিং পয়েন্ট না থাকে এবং অতিরিক্ত সময় খেলার 91 পরও যদি কোন পয়েন্ট সংগ্রহ করতে না পারে এবং খেলা যদি টাই থাকে তবে টস জয়ী দল জয়ী হবে।

৮। লীগ পদ্ধতির খেলায় যে দল সর্বাধিক পয়েন্ট পেয়ে জয়লাভ করবে তারা দু’টি লীগ পয়েন্ট পাবে। যে দল পরাজিত হবে তারা কোন লীগ পয়েন্ট পাবে না এবং খেলা টাই হলে উভয় দল ১ পয়েন্ট করে পাবে।

নোট

লীগে একাধিক দলের যদি পয়েন্ট সমান হয় তবে ‘নক আউট’ পদ্ধতিতে খেলার ব্যবস্থা করে ফলাফল নির্ধারণ করতে হবে।

৯। আলো স্বল্পতা, মুষলধারে বৃষ্টি বা অন্য কোন কারণে যদি খেলা বিঘ্নিত হয়। তবে পুনরায় ম্যাচ আয়োজন করতে হবে। সাময়িক স্থগিত হলেও তা পুনরায় অনুষ্ঠিত হবে।

নোট

যে কোন সঙ্গত কারণে রেফারি সর্বাধিক ২০ মিনিট খেলা স্থগিত রাখতে পারেন। কোন দল আইন ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে রেফারি ‘ব্যাড পয়েন্ট” দিতে পারেন।

 

 

১০। কোন খেলোয়াড় আহত হলে সে দলের অধিনায়ক রেফারির নিকট ‘টাইম আউটের আবেদন করবেন। তবে টাইম আউটের সময় সীমা ২ মিনিটের বেশি হবে না এবং উভয় দলের খেলোয়াড় রেফারির অনুমতি ছাড়া কোর্টের বাইরে যেতে পারবে না। আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে রেফারি একটি ব্যাড পয়েন্ট দিতে পারেন।

নোট

টাইম আউটের বাবদ অপচয়কৃত সময় অতিরিক্ত সময়ের সাথে যুক্ত হবে। তা মোট সময়ের অন্তর্ভুক্ত হবে না

১১। রেফারির অনুমতি নিয়ে সর্বাধিক ৩ জন খেলোয়াড় বদল করা যাবে। আহত হলে রেফারির অনুমতি নিয়ে তাকে বদলি করা যাবে। বদলিকৃত খেলোয়াড়কে আর সে খেলায় পুনঃ মাঠে নামানো যাবে না।

নোট

খেলায় অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়ই কেবল বদলি হতে পারে। খেলা চলাকালে কোচ বা অধিনায়ক বদলির সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ।

১২। কোন দল দুইজন খেলোয়াড় কম রেখে খেলা শুরু করতে পারে। তবে তাদের সকল খেলোয়াড় আউট হলে অনুপস্থিত খেলোয়াড়গণকে আউট বলে গণ্য করা হবে এবং বিপক্ষ দল একটি লোনা পাবে। অনুপস্থিত খেলোয়াড়গণ মাঠে হাজির হলেই রেফারির অনুমতি নিয়ে কোর্টে প্রবেশ করতে পারবে।

১৩। কোন খেলা পুনরায় অনুষ্ঠিত হলে একই খেলোয়াড় নাও খেলতে পারে।

নোট

অফিসিয়াল এন্ট্রি ফরমে নাম দেয়া খেলোয়াড়গণই কেবল পুনঃ অনুষ্ঠিত খেলায় অংশ গ্রহণ করতে পারবে।

 

 

১৪ । খেলোয়াড় বা অফিসিয়ালরা নেশা করে মাঠে আসতে পারবেন না। হাত ও পায়ের নখ ছোট করে কাটতে হবে। সকল খেলোয়াড়ের সামনে ও পিছনে নাম্বার থাকবে। এই নাম্বার কমপক্ষে ৪ ইঞ্চি লম্বা ও ১ ইঞ্চি চওড়া হবে। পুরুষ খেলোয়াড়রা শার্ট বা গেঞ্জি এবং মহিলারা শার্ট বা ঢিলা জামা ব্যবহার করবেন। খেলার আগে শরীরে কোন তৈলাক্ত দ্রব্য ব্যবহার করা যাবে না। খেলার সময় কোন ধাতব দ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধ। প্রয়োজনে রাবার সোল বিশিষ্ট কাপড়ের জুতো ব্যবহার করা যেতে পারে।

১৫। অধিনায়ক ছাড়া খেলা চলাকালে অন্য কোন খেলোয়াড় কোন নির্দেশ দিতে পারবেন না।

নোট

বিপক্ষ দলের কোর্ট রেইড দেয়ার সময় কেউ কোন নির্দেশ দিতে পারবেন না। এমন কি অধিনায়ক বা আউট হওয়া খেলোয়াড়ও নয়।

 

 

 

কাবাডি খেলা পরিচালনা:

কাবাডি খেলা পরিচালনা করবেন একজন রেফারি, দুইজন আম্পায়ার, একজন স্কোরার এবং দুইজন সহকারি স্কোরার।  খেলায় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। তবে দুজন আম্পায়ারের মধ্যে মত পার্থক্য দেখা দিলে রেফারি তার মত দিতে পারেন।

কাবাডিতে অখেলোয়াড়োচিত আচরণ:

নিম্ন লিখিত অখেলোয়াড়োচিত আচরণের জন্য রেফারি বা আম্পায়ার কোন খেলোয়াড় বা দলকে সতর্ক করে দেয়া, বিপক্ষকে পয়েন্ট দেয়া বা প্রতিযোগিতা থেকে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারেন।

(ক) কোন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে টুর্ণামেন্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার হুমকি বা প্ররোচনা দেয়া বা অন্যায় আবেদন করা।

(খ) খেলা পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে অশোভন মন্তব্য করা।

(গ) খেলার সিদ্ধান্ত নিজেদের অনুকূলে আনার জন্য খেলা পরিচালনাকারিদেরকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করা।

(ঘ) বিপক্ষের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করা, কটূক্তি করা বা খারাপ আচরণ করা।

(ঙ) আম্পায়ার বা রেফারির প্রতি আঙ্গুল দেখিয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিজেদের পক্ষে নিতে চেষ্টা করা।

 

কাবাডিতে ফাউল:

নিম্ন বর্ণিত অপরাধ করলে ফাউল হবে। ফাউলের জন্য রেফারি বা আম্পায়ার সতর্ক, ব্যাড পয়েন্ট, বিপক্ষকে পয়েন্ট দান অথবা খেলা থেকে বের করে দিতে পারেন। যেমনঃ

(ক) এ্যান্টি কোন রেইডারের মুখ চেপে শ্বাস রোধ করলে বা এই ধরনের অপরাধ করবে।

(খ) রেইডার আহত হতে পারে এমনভাবে ঝাপটে ধরলে ।

(গ) বিপক্ষের কোর্টে ৫ সেকেন্ডের মধ্যে হানা দিতে ব্যর্থ হলে

(ঘ) পায়ের সাহায্যে সাড়াশির মত চেপে ধরলে ।

(ঙ) কোচ বা খেলোয়াড় বাইরে থেকে নির্দেশ দিলে।

খেলা চলাকালে কোন কর্মকর্তা কোর্টের মধ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না।

নোট

অংশগ্রহণকারী দলের কোচ বা ম্যানেজার বিরতির সময় নির্দেশ দিতে পারবেন।

 

 

 

কাবাডিতে রেফারির দায়িত্ব ও কর্তব্য:

ক) খেলা শুরুর আগে রেফারি কোর্টের মধ্যে মধ্য রেখার উপর দাঁড়িয়ে দুদলের অধিনায়ককে ডেকে তাদের সামনে টস করবেন।

(খ) অংশগ্রহণকারী দল প্রতিযোগিতার ১৪ নং নিয়ম যথাযথভাবে পালন করছে কিনা তা খেলা শুরুর আগে দেখে নেবেন।

(গ) খেলা শুরুর পূর্বে তিনি স্কোরারের সাথে ঘড়ি মিলিয়ে নেবেন। কেননা রেফারির ঘড়ি ছড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।

(ঘ) খেলার সম্পূর্ণ সময়ের হিসাব রাখবেন এবং বাঁশি বাজিয়ে খেলা আরম্ভ বিরতি ও সমাপ্তি ঘোষণা করবেন।

(ঙ) খেলার প্রথমার্ধে এবং শেষে তিনি উভয় দলের পয়েন্ট ঘোষণা করবেন এবং বিজয়ী দলের নাম জানিয়ে দেবেন।

(চ) তিনি আহত খেলোয়াড়ের পরিবর্তে বদলি খেলোয়াড়ের নাম ঘোষণা করবেন । তবে একবার বদলি হওয়া খেলোয়াড় পুনরায় বদলি হতে পারবে না।

(ছ) তিনি দ্বিতীয়ার্ধের সময় ৫ মিনিট প্রতি মিনিটে সময় বলে দেবেন।

(জ) খেলা চলাকালে কোন খেলোয়াড় সীমানার বাইরে চলে গেলে তিনি তার নম্বর ঘোষণা করে তাকে “আউট” দেবেন। এজন্য তিনি বাঁশি ব্যবহার করবেন না।

 

কাবাডিতে আম্পায়ারের দায়িত্ত্ব ও কর্তব্য:

খেলায় দুইজন আম্পায়ার থাকবেন। রেফারি কর্তৃক খেলা শুরুর পর আম্পায়ারদ্বয় খেলা পরিচালনা করবেন এবং খেলার বা প্রতিযোগিতার নিয়মানুসারে তারা যে কোন সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন। রেফারি খেলার সমাপ্তি ঘোষণা না করা পর্যন্ত আম্পায়াররা খেলা পরিচালনার দায়িতে থাকবেন।

 

কাবাডিতে স্কোরারের দায়িত্ব ও কর্তব্য:

(ক) স্কোরার খেলার প্রথমার্ধ ও দ্বিতীয়ার্ধের শেষে রেফারির অনুমতি নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করবেন।

(খ) স্কোরশীটের ক্রমিক নং সমূহ খাড়াভাবে কেটে তিনি প্রত্যেক দলের পয়েন্ট ধারাবাহিকভাবে রাখবেন।

(গ) খেলা শেষে স্কোরশীট সম্পূর্ণ হলে তাতে রেফারি ও আম্পায়ারদ্বয়ের সই নেবেন ।

(ঘ) লোনা হলে তিনি সিরিয়াল নম্বরের পাশাপাশি কেটে লোনার পয়েন্ট লিপিবদ্ধ করবেন।

(ঙ) টাইম আউট হলে ঐ দলের বরাবরে বৃত্তের মধ্যে “স” লিখে রাখবেন।

(চ) খেলার পূর্বে এবং শেষ হলে তিনি স্কোরশীটে নিম্নের বিষয়গুলি লিখে রাখবেনঃ

(১) টস জয়ী দলের নাম,

(২) কোর্ট পছন্দ বা রেইড প্রদানকারী দলের নাম

(৩) খেলা আরম্ভের সময়,

(৪) টাইম আউট,

(৫) বিরতির আগে ও পরে খেলা শুরু ও শেষ হওয়ার সময়,

(৬) লিডিং পয়েন্ট বা প্রথম পয়েন্ট লাভকারী দলের নাম,

(৭) রেফারি বা আম্পায়ার অতিরিক্ত পয়েন্ট প্রদান করলে তা ধারাবাহিকভাবে ফলাফলের মধ্যে বৃত্তের চিহ্ন দিয়ে রাখবেন ।

 

কাবাডিতে সহকারি স্কোরারের দায়িত্ব ও কর্তব্য:

স্কোরারকে সহায়তা করার জন্য একজন সহকারি স্কোরার থাকবেন। তিনি নিম্ন লিখিত দায়িত্ত্ব ও কর্তব্য পালন করবেন :

(ক) আউট হওয়া খেলোয়াড়দেরকে ধারাবাহিকভাবে সিটিং ব্লকে বসিয়ে রাখা এবং একই সিরিয়াল অনুসারে কোর্টে ফেরৎ পাঠানো, বেঁচে গেলে।

(খ) বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় আউট হওয়ার ফলে যারা বাঁচবে এবং কোর্টে ফেরৎ যাবে তার হিসাব রাখা।

(গ) রেইডিং এর সময় কোন এ্যান্টি কোর্টের বাইরে গেলে তা রেফারি বা আম্পায়ারদ্বয়ের দৃষ্টিগোচর করা।

 

কাবাডিতে সময়কাল:

পুরুষদের জন্য কাবাডি খেলার সময়কাল মোট ৪৫ মিনিট। অর্থাৎ ২০ + ৫ + ২০ = ৪৫ মিনিট। প্রতি অর্ধে২০ মিনিট করে খেলা হবে এবং প্রতি অর্ধ শেষে ৫ মিনিট বিরতি দেয়া হবে। মহিলা ও জুনিয়ারদের বেলায় প্রতি অর্ধে ১৫ মিনিট করে মোট ৩০ মিনিট খেলা হবে। প্রথমার্ধ শেষে বিরতি হবে ৫ মিনিট। খেলার ফলাফল টাই হলে ৫ মিনিট করে দু’অর্ধে মোট ১০ মিনিট অতিরিক্ত সময় খেলা হবে। রেফারি খেলার শেষ ৫ মিনিট প্রতি মিনিটে সময় ঘোষণা করবেন। রেফারি সময় সংরক্ষণ করবেন এর জন্য তিনি স্টপ ওয়াচ ব্যবহার করবেন। সে ক্ষেত্রে ভাল ও নির্ভরযোগ্য স্টপ ওয়াচ ব্যবহার করা বাঞ্চনীয়।

 

কাবাডি খেলার সময় প্রটেস্ট বা প্রতিবাদ:

কাবাডি প্রতিযোগিতার খেলা পরিচালনায় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। দুইজন আম্পায়ারের মধ্যে মত পার্থক্য দেখা দিলে রেফারি তার সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। খেলার নিয়মানুসারে আম্পায়ার বা রেফারির সিদ্ধান্তের প্রটেস্ট বা প্রতিবা করার নিয়ম নেই। তবুও নিম্নোক্ত কারণ সমূহে প্রটেস্ট বা প্রতিবাদ করা যেতে পারেঃ

(ক) অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড় সম্পর্কে খেলা শুরুর আগে রেফারির নিকট প্রটেষ্ট করা যায়। রেফারি সন্তোষজনক সমাধান করতে না পারলে খেলোয়াড়কে ‘অনপ্রটেস্ট’ খেলায় অংশ গ্রহণের সুযোগ দিয়ে বিষয়টি ‘জুরি অব এ্যাপীল’ এর নিকট পাঠাতে পারেন।

(খ) আম্পায়ার বা রেফারির দেয়া কোন আইনবিরুদ্ধ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাড়াতাড়ি একজন খেলোয়াড় তার দলীয় অধিনায়কের মাধ্যমে প্রটেন্ট করতে পারে এবং প্রয়োজনবোধে খেলা শেষে ফলাফল ঘোষণার আধ ঘন্টার মধ্যে লিখিতভাবে প্রটেস্ট করা যেতে পারে। ফলাফল ঘোষণার সময় স্কোরশীটে সময় লিপিবদ্ধ থাকবে।

(গ) খেলার নিয়ম প্রয়োগের বিষয়ে কোন প্রটেক্ট থাকলে তা অধিনায়ক মৌখিকভাবে রেফারিকে জানাবেন। রেফারি তার সিদ্ধান্ত দিতে পারেন অথবা “জুরি অব এ্যাপীল” এ পাঠাতে পারেন। রেফারি সিদ্ধান্ত দিলে তা মনঃপুত না হলে বিষয়টি জুরি অব এ্যাপীল এ দেয়া যেতে পারে। দলের ম্যানেজার নির্ধারিত ফিস দাখিল করে লিখিতভাবে এই প্রটেক্ট করবেন।

 

কাবাডি প্রতিযোগিতায় বাঁশির সংকেত:

রেফারি বা আম্পায়ার খেলা পরিচালনার জন্য বাঁশি ব্যবহার করবেন। নিম্নোক্ত সংকেত সমূহ বাঁশির সাহায্যে প্রয়োগ করা হবে ।

(ক) খেলা শুরুর পূর্বে দুটি ছোট এবং একটি লম্বা বাঁশি বাজিয়ে রেফারি অংশগ্রহণকারী দলকে সতর্ক করে দেবেন।

(খ) একটি লম্বা ও একটি ছোট বাঁশি দিয়ে খেলা শুরু হবে।

(গ) তিন বা চারটি তীক্ষ্ণ বাঁশি বাজিয়ে ফাউলের সংকেত দেবেন।

(ঘ) একটি লম্বা তীক্ষ্ণ বাঁশি দিয়ে কোন খেলোয়াড়কে আউট ঘোষণা করবেন।

(ঙ) একটি লম্বা ও একটি ছোট বাঁশি বাজিয়ে “টাইম আউট” ঘোষণা করবেন।

(চ) থেমে থেমে একটা লম্বা বাঁশি বাজিয়ে সময় শেষের সংকেত দেবেন।

 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version