Site icon Sports Gurukul | ক্রীড়া গুরুকুল , GOLN

কুংফু খেলার আইন কানুন । খেলাধুলার আইন

আজকের আলোচনার বিষয় কুংফু খেলার আইন কানুন। জুডো ও ক্যারাটে খেলার মত কুংফু খেলাও একটি জনপ্রিয় খেলা। জুডো ও ক্যারাটের মত কুংফুও একই রকমের খেলা। ফলে যারা জুডো, কারাটে শেখেন তাদের কুংফুও শিখে রাখা দরকার। কেননা একটি খেলা অপরটির পরিপূরক। জুডো ও ক্যারাটের মত কুংফু খেলাও যুব শ্রেণীর মধ্যে তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে দিয়েছে। সারা বিশ্বের যুব সমাজ আজ জুডো-ক্যারাটে- কুংফু খেলার জন্য পাগল ।

যদিও এ খেলা সব বয়সের নারী পুরুষের জন্য অপরিহার্য। শত্রুর হাত থেকে আত্মরক্ষা করা ছাড়াও শত্রুকে ঘায়েল করতে কুংফু অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। কুংফু জানা থাকলে শত্রুকে পরাহত করে আত্মরক্ষা করা বা অত্যাচারীর হাত থেকে দুর্বলকে রক্ষা করা সম্ভব। জুডো ও ক্যারাটের মত কুংফুও কেবলমাত্র নিজেকে ও নিজের আত্মীয়-পরিজনসহ যে কোন অত্যাচারিতকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়োগ করা যায়। কুংফু শেখার আগে জুডো ক্যারাটের মত শপথ করতে হয় । শত্রুকে পরাস্ত করতে কুংফুর প্যাচগুলি ভালভাবে রপ্ত করতে হয় ।

 

 

কুংফু খেলার আইন কানুন । খেলাধুলার আইন

জুডো ক্যারাটে কুংফু খেলা শেখার আগে ব্যায়াম করে শরীরকে উপযোগী করে নিতে হয়। গরম পানিতে হাত শক্ত করা, বালির বস্তায় ঘুষি, লাথি মারা ছাড়াও আরো কিছু ব্যায়াম রয়েছে। এখানে কয়েকটি কুংফু খেলার ব্যায়াম তুলে ধরা হলো :

১নং ব্যায়াম

মাটির উপরে বসুন। হাঁটু মুড়ে পা দু’টো আস্তে আস্তে একসাথে টেনে আনুন । গোড়ালি সামনে রাখুন। ডান হাত দিয়ে ডান হাতের আঙ্গুলগুলো ও বাঁ হাত দিয়ে বা পায়ের আঙ্গুলগুলো শক্ত করে ধরুন।
এবার কোমরের উপরের অংশ থেকে মাথা পর্যন্ত বাঁকিয়ে এনে মাথাকে পায়ের কাছে ঠেকান। পা যেন মাটি থেকে উপরে না ওঠে।

২নং ব্যায়াম

সোজা হয়ে দাঁড়ান। দুই হাত কোমরে রাখুন। পা আস্তে আস্তে ফাঁক করুন দু’দিকের জানুর উপরে দু’হাত রেখে আস্তে আস্তে হাত সরিয়ে হাঁটুর কাছাকাছি নিয়ে যান এবং সেখানে ভাল করে ধরুন। দু’পায়ের ফাঁক আরো একটু বাড়ান। ফাঁক বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থায় আসবে যেন পা দু’পাশে ছড়িয়ে পড়ে মাটির উপর। আপনার শরীরটা মাঝখানে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকবে। হাত দু’টো কিন্তু হাঁটুর উপরেই থাকবে। দৃষ্টি প্রসারিত করুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন ।

মুখ দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করুন এবং নাক দিয়ে ত্যাগ করুন। এবারে বাঁ দিকের হাঁটুতে হাত রাখুন। দৃষ্টি যতদুর সম্ভব প্রসারিত করুন। তারপর ডান দিকে একই রকম হাত রাখুন। একবার ডান দিকে একবার বাঁ দিকে হাত রাখুন। এবার মাথা সোজা করুন। বাঁ দিকের হাঁটুতে দু’হাত রাখুন। তারপর দু’হাতের উপর মাথা ঠেকান। এভাবে করতে থাকুন।

৩নং ব্যয়াম

সোজা হয়ে দাঁড়ান। দু’হাত মুঠো করে কোমরের দু’পাশে রাখুন। ধীরে ধীরে হাঁটু মুড়ে ঠিক চেয়ারে বসার মত অবস্থায় শরীরটাকে আনুন। এই অবস্থায় কিছুক্ষণ থাকুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন।

 

 

৪নং ব্যায়াম

সোজা হয়ে দাঁড়ান। পায়ের গোড়ালি দু’টো V-র মত এক জায়গায় আনুন । দু’হাত দু হাটুতে রাখুন। দেহের উপরের অংশ সামনের দিকে বাঁকিয়ে আনুন। মাথাকে আনুন হাঁটুর সমান্তরালে ।

৫নং ব্যায়াম

সোজা হয়ে দাঁড়ান। গোড়ালিদ্বয় V-র মত আনুন। মাথার উপরে দু’হাত তুলুন। বাঁ হাতের আঙ্গুলগুলো ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে আটকে দিন। এবার ঐ একত্র করা অবস্থায় হাত দু’টোকে ধীরে ধীরে নামিয়ে মাথার পিছনে ঘাড়ের উপরে আনুন। শ্বাস- প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন। এবার দু’পা ফাঁক করুন। দু’হাত পূর্বের অবস্থায় রেখে পায়ের ফাঁক বাড়ান । ফাঁক যত বেশি করা যায়, করুন।

৬নং ব্যায়াম

সোজা হয়ে দাঁড়ান। হাত দু’টো রাখুন জানুর উপর। মেরুদন্ড সোজা রাখুন। দু’পা প্রসারিত করুন। দু’হাত রাখুন হাঁটুর উপর। শরীরটা ঠিক মাঝখানে অবস্থান করুন। পা দু’টো সমান্তরালভাবে থাকলেও মাটির সঙ্গে ঠেকাবেন না। দু’হাত পায়ের গোড়ালির দিকে যতটা সম্ভব প্রসারিত করে ধরে রাখুন। দেহের ভারসাম্য বজায় রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন।

৭নং ব্যায়াম

সোজা হয়ে দাঁড়ান। দু’হাত ঝুলিয়ে দিন। দু’পা এক ফুট ফাঁক করুন। মাথা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে আনুন। ডান হাত দিয়ে বাঁ পায়ের আঙ্গুল স্পর্শ করুন। তেমনি বাম হাত দিয়ে ডান পায়ের আঙ্গুল স্পর্শ করুন বা টেনে ধরুন। বিপরীত হাত পেছনে সমান্তরালভাবে রাখুন। কয়েকবার ব্যায়ামটি করুন।

৮নং ব্যায়াম

দু’পা এক সাথে যুক্ত করুন। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেহের উপরের অংশ সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে আনুন। মাথাকে হাঁটুদ্বয়ের সমান্তরালে রাখুন। দুই হাত সামনে মাটিতে রাখুন। পা যে পজিশনে আছে হাত দু’টোও একই পজিশনে থাকবে। কিছুক্ষণ এইভাবে থাকুন।

এ ছাড়াও অন্যান্য ব্যায়াম জানা থাকলে করবেন। জুডো ও ক্যারাটেতে বেশ কিছু নিয়ম তুলে ধরা হয়েছে, কুংফুর নিয়মের সাথে যার সাদৃশ্য রয়েছে।

পোশাক ও জুডো- ক্যারাটে কুংফুর পোশাক আপনি নিজের ইচ্ছেমত পরতে পারবেন না। আন্তর্জাতিক ফেডারেশনের নিয়মানুসারে পোশাক পরতে হবে পোশাকগুলির মধ্যে তিনটি অপরিহার্য হবে।

(১) ঢিলে ঢালা জামা (২) পাজামা (৩) বেল্ট বা ফিতা ।

হুংকার ফুডো-ক্যারাটে কুংফুতে আক্রমণকারী ও আক্রান্ত উভয় লড়াই করার সময় যে শব্দ করেন বা হুংকার ছাড়েন জাপানী ভাষায় তাকে বলে ‘কিয়া’। কুংফুতে হুংকারও এক প্রকার অস্ত্র।

 

কুংফু

 

কুংফু খেলা শিখতে বা প্রয়োগ করতে কিছু প্যাচ ব্যবহার করতে হয়। নিচে কুংফু খেলার কয়েকটি প্যাচ তুলে ধরা হলো :

১নং প্যাচ

শত্রু ঘুষি মারার জন্য উদ্যত হয়েছে এ অবস্থায় আপনি কি করবেন? আপনি তুরিং গতিতে পাশের দিকে সরে যান। ডান বা বাম যে দিকে সুবিধে হয়। ফলে ঘুষি বিফল হবে। সঙ্গে সঙ্গে পিছন দিকে চলে যান। আপনার শত্রুও পিছন দিকে ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু তাকে আক্রমণ করার সুযোগ কিছুতেই দেবেন না। তার আগেই শত্রুর ঘাড়ের কাছের জামাটা শক্ত করে ধরুন। অপর হাত দিয়ে শত্রুর হাতের কনুইয়ের কাছে উঁচু করে ধরুন। পা ও চালান একই সাথে। পা দিয়ে প্রচন্ড বেগে লাথি মারুন শত্রুর হাঁটুর জোড়ার পেছন দিকে। এই আঘাতে শত্রুর পা বেশ অবশ হয়ে পড়বে। ফলে সে কাহিল হয়ে যাবে । কিল, চড়, ঘুষিতে শত্রুকে নাস্তানাবুদ করুন।

২নং প্যাচ

শত্রু পিছন থেকে চুপি চুপি আপনাকে জড়িয়ে ধরেছে। এখন আপনি কি করবেন? আপনি সঙ্গে সঙ্গে বাঁ পায়ের উপর দেহের ভর রেখে এক পায়ে শক্ত হয়ে দাঁড়ান। ডান পা দিয়ে সবেগে লাথি মারুন শত্রুর হাঁটুর উপরে। শত্রু সে আঘাতের যন্ত্রনায় কঁকিয়ে উঠবে আপনাকে জড়িয়ে ধরা হাত শিথিল হয়ে পড়বে। এরপর আক্রমণ করে শত্রুকে কাহিল করে ছাড় ন।

৩নং প্যাচ

প্রবল পরাক্রান্ত শত্রু আপনার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আপনাকে ঘুষি মারার জন্য উদ্যত হলো। এ অবস্থায় আপনি কি করবেন?
পড়ান। আর সঙ্গে সঙ্গে আপনার ডান পা দিয়ে সজোরে লাথি মারুন শত্রুর হাটুতে যে মুহূর্তে সে মুখি মারার জন্য উদ্যত হয়েছে সেই মুহূর্তে আপনি চট করে সরে আমি জোরে হতে হবে। তাতেই প্রবল

৪ নং প্যাচ

যখন শত্রু আপনাকে ঘুষি মারতে উদ্যত হয়েছে, যে মুহূর্তে সে ঘুষি ছুঁড়বে সেই মুহূর্তে আপনি ঘুষিটাকে আটকান কনুইয়ের তলার অংশ দিয়ে। আপনার গায়ে ঘুষি লাগবে না। এবারে ঘুষি আটকানো হাতটাকে ঠেলে উপরের দিকে তুলুন সেই সাথে সজোরে শত্রুর হাঁটু বরাবর লাথি মারুন জোরে। এতেই শত্রু ভূপাতিত হবে।

৫নং প্যাচ

শত্রু আক্রমণোদ্যত। দ্রুত গতিতে পজিশন নিন। শত্রুর উদ্যত হাতের কবজির কাছে ধরে অপর দিকে তুলে ধরুন। হাত ধরা অবস্থায় ঘুরে যান। পা ফাঁক করে দাঁড়ান। শত্রুর অপর হাতটা অন্য হাত দিয়ে ধরুন। এবং সেটাকে টেনে বগলের নিচে আনুন। এবারে কবজি ধরা হাতটা মোচড় দিন। কিছুক্ষণ পাক দেয়ার পর এক ঝটকায় সামনের দিকে টেনে ধরুন। দেখবেন যত শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিই হোক সে কাৎ।

 

 

৬নং প্যাচ

শত্রু প্রস্তুত হচ্ছে আপনাকে আক্রমণ করতে। সে আপনার চোয়ালে ঘুষি মারতে চায়। আপনিও প্রস্তুত থাকুন। যে মুহূর্তে শত্রু ঘুষি ছুঁড়বে, সেই মুহূর্তে আপনার হাত দিয়ে বাধা দিন এবং সাথে সাথে তার কবজির কাছে ধরে ফেলুন। ধরেই সঙ্গে সঙ্গে পিছন দিকে বাঁকিয়ে ধরুন। এমনভাবে তাকে পা দিয়ে গার্ড করে রাখবেন, যেন সে ঘুরে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে না পারে। শত্রু নতি স্বীকার না করা পর্যন্ত ছাড়বেন না।

মনে রাখবেন, কুংফুর কলাকৌশলের সাথে ক্যারাটের কোন পার্থক্য নেই। তাই বলে একথা ঠিক নয় যে দু’টো খেলাই এক। কৌশলগত দিক দিয়ে জুডো-ক্যারাটে- কুংফুর যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। তবে অনেকটা একই রকম। একটা অপরটার পরিপূর বলা যায়। এসব বিদ্যা শেখার জন্য কৌশলের সাথে দৈহিক শক্তিরও প্রয়োজন। আর এই শক্তি বৃদ্ধির জন্যই প্রয়োজন নিয়মিত ব্যায়াম করার। সেই সাথে পুষ্টিকর খাদ্যও দরকার।

জুডো-ক্যারাটে-কুংফু যারা শিখবেন তাদেরকে ক্রোধ দমনের ক্ষমতা থাকতে হবে । ক্রোধ যে কোন মুহূর্তে বিপদ ডেকে আনতে পারে, পারে ভয়ানক কিছু ঘটাতে। তাছাড়া এ বিদ্যা মানবের কল্যাণের জন্য, নীপিড়নের জন্য নয় কথাটা মনে রাখতে হবে।

এ বিদ্যায় দৈহিক শক্তি, কৌশলের সাথে থাকা চাই উপস্থিত বুদ্ধি। যা বেশি করে উপকারে আসে ।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version