ক্রিকেটের আম্পায়ার বা ক্রিকেট খেলার ৩ নম্বর আইন

ক্রিকেটের আম্পায়ার বা ক্রিকেট খেলার ৩ নম্বর আইন নিয়ে আমাদের আলোচনা। এই পর্বটি আমাদের খেলাধুলার নিয়মিত বা আইন নিয়ে নিয়মিত আয়োজনের অংশ।

 

ক্রিকেটের আম্পায়ার । ক্রিকেট খেলার ৩ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন

 

Table of Contents

ক্রিকেটের আম্পায়ার

 

১। নিয়োগ

খেলা নিয়ন্ত্রন করতে, ইনিংসের জন্য টস করার আগে দুই প্রান্তের জন্য দু’জন আম্পায়ারকে নিয়োগ করতে হবে যারা আইনের প্রয়োজন সাপেক্ষে চরম নিরপেক্ষতা অবলম্বন করবেন।

 

২। আম্পায়ার বদল

দুই অধিনায়কের সম্মতি ব্যতীত কোন আম্পায়ার খেলা চলার সময় বদল করা যাবে না।

 

৩৷ বিশেষ শর্ত সমূহ

ইনিংসের জন্য টস করার আগে দুই আম্পায়ারকে খেলা চালানোর ব্যাপারে প্রভাবকারী কোন বিশেষ শর্তে দুই দলের অধিনায়কের সঙ্গে মতৈক্যে উপনীত হতে হবে।

 

৪। উইকেট দু’টি

আম্পায়ারদ্বয় খেলা আরম্ভের আগে উইকেট দুটি ঠিকমত পোঁতা আছে কিনা সে বিষয়ে নিজেদের সন্তুষ্ট হতে হবে।

 

৫। ‘ক্লক’ বা ‘ওয়াচ’

আম্পায়ারদ্বয় বড় ঘড়ি না হাত ঘড়ি কোন ঘড়ির সময় অনুসারে ম্যাচ চলবে সে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে একমত হয়ে খেলা শুরুর আগেই দুই অধিনায়ককে তা জানিয়ে দেবেন।

 

৬। খেলা পরিচালনা এবং উপকরণ

আম্পায়ার খেলার আগে এবং খেলা চলার সময় খেলা পরিচালনা এবং উপকরণগুলি সম্পূর্ণ নির্ভুলভাবে আইন অনুযায়ী আছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হবেন।

 

৭। সংগত এবং অসংগত খেলা

আম্পায়াররাই সংগত খেলা ও অসংগত খেলা বিষয়ের একমাত্র বিচারক।

 

৮। মাঠের উপযুক্ততা, আবহাওয়া এবং আলো

(ক) খেলার জন্য মাঠের উপযুক্ততা, আবহাওয়া এবং আলোর বিষয়ে আম্পায়াররাই একমাত্র বিচারক।

(অ) তথাপি আম্পায়াররা খেলা বন্ধ করা বা না করা, খেলা শুরু করা বা না করার কোন বিরতি বা ছেদের পর খেলা আবার শুরু করার বিষয়ে কোন মীমাংসায় উপনিত হবার আগে দুই অধিনায়কের (উইকেটে অবস্থানকারী ব্যাটসম্যানদ্বয় তাঁদের অধিনায়কের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন) মতামত সম্বন্ধে নিশ্চিত হবেন, যে তাঁরা খেলা তৎকালীন অবস্থায় আরম্ভ করতে বা চালাতে ইচ্ছুক কিনা। যদি তাঁরা ইচ্ছুক থাকেন, তবে তাঁদের ইচ্ছাই পূরণ করতে হবে।

(আ) উপরন্তু, আম্পায়াররা খেলা চলার সময় আলো যদি অনুপযুক্ত মনে করেন, তবে ব্যাটিং দলেরই খেলা চালানোর বিষয় মনোনয়নের অধিকার থাকবে। অনুপযুক্ত আলোতে খেলা চলতে থাকবে এটা মেনে নেয়ার পর ব্যাটিং দলের অধিনায়ক (বা ব্যাটসম্যান যে উইকেটে রয়েছেন) আম্পায়ারের কাছে আলোর আবেদন করতে পারেন, তবে তাঁরা শুধু তখনই আবেদন গ্রাহ্য করবেন যখন তাদের মতে খেলা চালিয়ে যাবার চুক্তি হবার পর আলোর অবনতি ঘটেছে।

(খ) খেলা সাময়িকভাবে স্থগিত থাকার পর আম্পায়াররা খেলোয়াড়দের বা কর্তৃপক্ষদের কাউকে সঙ্গে না নিয়ে নিজেদের উদ্যেগে যে মুহূর্তে অবস্থার কোন উন্নতি ঘটবে তখনই পরীক্ষা করবেন এবং পরীক্ষা করা মাঝে মাঝে চালিয়ে যাবেন। যখনই আম্পায়াররা মনে করবেন যে খেলা আরম্ভ করা সম্ভব তখনই তারা খেলোয়াড়দের খেলা পুনরায় শুরু করার জন্য ডাকবেন।

 

ক্রিকেটের আম্পায়ার । ক্রিকেট খেলার ৩ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন

 

৯। ব্যতিক্রমের ক্ষেত্র

আম্পায়াররা আবহাওয়া, মাঠ বা আলো ছাড়া অন্য কোন বিশেষ অবস্থায়, খেলা বন্ধ বা পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে পারেন এরকম সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে ক্ষেত্র অনুযায়ী তারা দুই অধিনায়কের (উইকেটে ব্যাটসম্যানদ্বয় তাঁদের অধিনায়কের প্রতিনিধি স্বরূপ) মতামত সম্বন্ধে নিশ্চত হবেন যে, তারা সে অবস্থায় খেলা চালাতে ইচ্ছুক কিনা, যদি তাঁরা ইচ্ছুক হন তবে তাঁদের ইচ্ছা পূরণ করা হবে।

 

১০। আম্পায়ারদের দাঁড়াবার স্থান (অবস্থান)

আম্পায়াররা মাঠের মধ্যে সেখানেই দাঁড়াবেন যেখান থেকে তারা তাদের পক্ষে কোন ঘটনার ওপর সিদ্ধান্ত নেবার পক্ষে সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান বলে বিবেচনা করবেন। এই প্রসঙ্গে বিবেচনাধীনে রেখে বোলার প্রান্তের আম্পায়ার এমন জায়গায় দাঁড়াবেন যেখান থেকে তিনি বোলারের রান আপ বা স্ট্রাইকারের দৃষ্টিতে কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি না করেন। স্ট্রাইকার প্রান্তের আম্পায়ার পীচের লেগের দিকে বদলে অফের দিকে দাঁড়াবার জন্য বেছে নিতে পারেন, তবে তিনি যেন সেই ইচ্ছা ফিল্ডিং দলের অধিনায়ককে এবং স্ট্রাইকারকে জানিয়ে দেন।

 

১১। আম্পায়ারদের প্রাপ্ত বদল

উভয় আম্পায়ার তাদের প্রান্ত বদল করবেন যখন প্রত্যেক দল একটি করে ইনিংসের খেলা শেষ করেছে।

 

১২। বিতর্কিত বিষয়

সমস্ত বিতর্কিত বিষয় আম্পায়ারদের দ্বারা নির্ধারিত হবে এবং যদি তারা ভিন্নমত পোষণ করেন, তবে ঠিক যে অবস্থা আগে ছিল তাই বজায় থাকবে।

 

১৩। সংকেত সমূহ

নিম্নোক্ত সংকেত পদ্ধতি আম্পায়াররা ব্যবহার করবেন এবং খেলা এগনোর আগে অবধি যতক্ষণ না একজন স্কোয়ার আম্পায়ারের সংকেতের প্রাপ্তি স্বীকার না করছেন। ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।

 

ক্রিকেটের আম্পায়ার । ক্রিকেট খেলার ৩ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন

 

বাউন্ডারি –

একটি বাহু তুলে এ পাশ থেকে ওপাশে নাড়ানোর দ্বারা।

 

ওভার বাউন্ডারি-

দুই বাহু মাথার উপর উত্তোলনের দ্বারা।

 

বাই-

হাতের মুঠো খুলে মাথার উপর উত্তোলনের দ্বারা।

 

ডেড বল-

কোমরের তলায় দুহাতের কবজি বারবার এধার-ওধার করার দ্বারা অতিক্রম করে।

 

লেগ বাই-

একটি পা তুলে তার হাঁটুতে হাত ঠেকানোর দ্বারা।

 

নো বল-

একটি হাত সমান্তরালভাবে পাশে প্রসারণের দ্বারা।

 

আউট-

তর্জনী মাথার উপরে উত্তোলনের দ্বারা। যদি আউট না হয় তবে আম্পায়ার “নটআউট” বলবেন।

 

শর্ট রান-

একটি বাহুর কনুই উপর দিকে ভেঙ্গে এবং নিকটের কাঁধ আঙ্গুলের ডগা দিয়ে স্পর্শ করার দ্বারা।

 

ওয়াইড-

দুই বাহু সমান্তরালভাবে প্রমাণের দ্বারা।

 

ক্রিকেটের আম্পায়ার । ক্রিকেট খেলার ৩ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন

 

১৪। স্কোরের বিশুদ্ধতা

ম্যাচ চলার সময়ে ও তার শেষ পর্যন্ত স্কোরের বিশুদ্ধতার জন্য আম্পায়াররা নিজেরা সন্তুষ্ট জন্য দায়িত্বশীল থাকবেন।

 

টীকা

(অ) আম্পায়ারের উপস্থিতি

কোন দিনের খেলা শুরু হবার অন্তত ৩০ মিনিট আগেই আম্পায়াররা মাঠে উপস্থিত থাকবেন এবং মাঠের পরিচালক বা তার সমকক্ষ কোন ব্যক্তির কাছে হাজিরা দেবেন ।

 

(আ) আম্পায়ার ও স্কোরারের মধ্যে পরামর্শ

সন্দেহজনক বিষয়গুলির জন্য আম্পায়ার ও স্কোরারের মধ্যে পরামর্শ আবশ্যক।

 

(ই) মাঠের উপযুক্ততা

যখন মাঠ ভেজা বা এমন পিচ্ছিল থাকে যাতে বোলাররা যথোপযুক্ত ফুটহোল্ড থেকে বঞ্চিত হন। দূরের ফিল্ডার ছাড়া অন্যান্য ফিন্ডসম্যানদের সাবলীলভাবে চলাফেরা করতে বা ব্যাটসম্যানদের স্ট্রোক নিতে, বা দুইটি উইকেটের মধ্যে রান নিতে অসুবিধা হয়, তখনই আম্পায়াররা মাঠ খেলার অনুপযুক্ত বলে বিবেচনা করবেন। তবে শুধুমাত্র ভিজে বা পিচ্ছিল ঘাস এবং বলের জন্য খেলা বন্ধ করা যাবে না।

 

(ঈ) আবহাওয়া ও আলোর উপযুক্ততা

আম্পায়াররা তখনই খেলা বন্ধ করবেন যখন বুঝবেন অবস্থা এত খারাপ যে খেলা চালানো অযৌক্তিক অথবা বিপদজনক।

 

ক্রিকেটের আম্পায়ার । ক্রিকেট খেলার ৩ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন

 

যৌথ সিদ্ধান্ত ও দায়িত্ব

(১) টস করার আগে “কোন বিশেষ নিয়ম” সেই চিহ্নিত ম্যাচে থাকলে সেগুলি আম্পায়ার অবহিত হবেন এবং দুই অধিনায়কের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে একমত হবেন।

(২) উইকেট ঠিকমত পোঁতা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আম্পায়াররা নিজেরা সন্তুষ্ট হবেন।

(৩) তাঁরা কোন ঘড়ি খেলার সময়সূচী অনুসরণ করবেন আগে ঠিক করে একমত হবেন।

(৪) মাঠ, আবহাওয়া ও আলোর উপযুক্ততা বিষয় আম্পায়ারদ্বয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন এবং সেই পরিস্থিতিতে খেলা শুরু বা বন্ধ করার পূর্ণ দায়িত্বও তাঁদের থাকবে।

(৫) অনিবার্য কোন কারণে খেলা বন্ধ করা বা পুনরায় শুরু করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও তাঁরা নেবেন।

(৬) ইনিংসের জন্য টসের আগে বা খেলা চলাকালীন সমস্ত মতপার্থক্য তারাই সমাধান করবেন।

(৭) নতুন বলের মনোনয়ন ও পুরাতন বলের অনুপোযুক্ততার বিষয়ে আম্পায়ারদ্বয় একমত হবেন। তবে নতুন বলের ব্যবহারের সময় সংশ্লিষ্ট ফিল্ডিং দলের অধিনায়কের অনুমোদন প্রয়োজন ।

(৮) খেলা বা খেলার মধ্যে আচরণ বিধিসম্মত বা বিধিবর্হিভূত হচ্ছে কিনা যে বিষয়ে আম্পায়ারদ্বয় একমাত্র বিচারক ও প্রয়োজনস্থলে যৌথ সিদ্ধান্ত নেবেন।

(৯) স্কোর বইয়ে শুদ্ধ লিপিবদ্ধের জন্য আম্পায়ারদ্বয়ই দায়ী থাকবেন।

(১০) কোন পক্ষ ম্যাচ চালাতে অনিচ্ছুক বা অস্বীকৃত হলে অপর পক্ষের অনুকূলে ম্যাচটি দিয়ে দেয়ার সময় আম্পায়ারদ্বয় যৌথ সিদ্ধান্ত নেবেন।

(১১) ম্যাচের শেষ ঘন্টায় ম্যানডেটারি ওভার শুরু করার নির্দেশের সময় দুই আম্পায়ার সিদ্ধান্ত নেবেন।

(১২) আইনের ৩১ নং ধারা অনুযায়ী নতুন ব্যাটসম্যানকে “টাইমড় আউট” এর নির্দেশ দেয়ার পূর্বে বিলম্বের কারণ অনুসন্ধানের দায়িত্ব নেবেন উভয় আম্পায়ার।

(১৩) উভয় আম্পায়ারই টসের পর পীচের ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ন্ত্রিত করবেন।

(১৪) ম্যানডেটারি ওভার চলাকালীন কোন বিরতি বা খেলায় ছেদ ঘটলে পরবর্তী ক্ষেত্রে ওভারগুলির হিসাব দুই আম্পায়ারই নির্ণয় করবেন।

(১৫) ইনিংস সমাপ্তির পর ওভারের হার নির্ণয় করা।

(১৬) পীচের আচ্ছাদন, বোলিং ও মোয়িং-এর তদারকি করা।

(১৭) ঝোড়ো বাতাসে ও মন্দ আবহাওয়ায় উইকেটের বেল দুইটির ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয়া।

(১৮) ম্যাচ শেষ হবার পর যোগ্য এবং যথাস্থানে এর বিষয় বিস্তারিত বিবরণ বা অভিযোগ জানানো উভয় আম্পায়ারের দায়িত্ব।

 

ক্রিকেটের আম্পায়ার । ক্রিকেট খেলার ৩ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন

 

জ্ঞাতব্য বিষয়

ক্রিকেট খেলায় সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে আম্পায়ারের ওপর। চরম নিরপেক্ষতা ও ক্রিকেটের আইন-কানুন সম্বন্ধে বিশেষ জ্ঞান এই দুই শর্ত তাঁকে কঠোরভাবে পালন করতে হয়। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট আইনের অধীনে থেকে এবং কোন রকম পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন না করে খেলা পরিচালনা করা আম্পায়ারদের প্রধান কর্তব্য। উপরন্তু প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ কোন দলের ঘনিষ্ট কোন ব্যক্তি যদি ঐ ম্যাচে আম্পায়ারিং করেন তবে পক্ষপাতিত্ব বা পক্ষপাতহীনতার দায়ে যাতে পড়তে না হয় সে জন্য তাঁকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।

এর জন্যে ক্রিকেটে এমন একটি ঘটনা আছে যে একজন ভাল টেস্ট আম্পায়ারের ছেলে কোন একটি টেস্ট ম্যাচে নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে তিনি আম্পায়ার হিসাবে সেই ম্যাচে নির্বাচিত হননি। ৩নং আইনের অধীনে আম্পায়ারদের করণীয় বিষয়গুলি আলোচিত হয়েছে। আম্পায়ারদের এই কর্তব্যগুলি এতই জটিল যে স্থির মস্তিষ্কে যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে সেগুলি পালন না করলে পরে নানা সমস্যার উদ্ভব হতে পারে।

প্রথমতঃ যে মাঠে খেলা হবে সেখানকার স্থানীয় রীতিনীতি, বউন্ডারির জন্য বরাদ্দ রান, মাঠের মধ্যে স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা (যথা গাছের ঝুলন্ত ডাল, বৈদুতিক বা টেলিফোনের খুঁটি বা তার প্রভৃতি। এবং দিনের শেষে আলোর অবস্থা বিষয়ে আম্পায়ারকে স্থানীয় কর্মকর্তা ও অধিনায়কদের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে। এ ছাড়া এম.সি.সি. কর্তৃক নির্দিষ্ট আইন ব্যতীত অন্য কোন বিশেষ নিয়ম ঐ খেলায় বা প্রতিযোগিতায় রয়েছে কিনা তা) জেনে নেয়াও আম্পায়ারদের একান্ত কর্তব্য ।

বিভিন্ন ম্যাচে খেলার সময়সূচি বিভিন্ন রকম। তাই খেলার সময়সূচি সম্পর্কে খেলা শুরুর আগেই অধিনায়কদ্বয়ের সঙ্গে আম্পায়ারদের বিশেষ আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। বিশেষতঃ ১৬ নং আইন অনুযায়ী বিরতির সময় ও স্থায়িত্ব সংক্রান্ত বিষয়টি তাঁদের ভালভাবে অবহিত হওয়া দরকার। অনেক সময়ে পানিপান বিরতি নিয়ে আম্পায়ার ও অধিনায়কদ্বয়ের মধ্যে দ্বিমত লক্ষ্য করা যায় এবং এইসব মতভেদ খেলা শুরুর আগেই দূর করে নেয়া দরকার।

আম্পায়ারদের কঠোর হয়ে খেলার সময়সূচি পালনের জন্য দায়িত্ব গ্রহন করা উচিত এবং কোন ঘড়ি বড় না ছোট হাত ঘড়ির দ্বারা পরিচালনা হবে সেটা অধিনায়কদ্বয়ের সাথে পূর্বেই সিদ্ধান্তে আসা কর্তব্য। আইনে বলা আছে যে প্রতিদল এক ইনিংস খেলা শেষ করলে আম্পায়াররা প্রান্ত বদল করবেন। ইতিহাসে দৃষ্টান্তও আছে, এই বিষয়টির অতীতে ভুল হয়েছিল সে জন্য তাঁরা যেন সজাগ থাকেন। দুই অধিনায়ক টস করেছেন কিনা আম্পায়ারদের তদারক করা উচিত। টসের পরে খেলা চলাকালীন অবস্থায় কোন বিতর্কমূলক পরিস্থিতিতে আম্পায়াররাই কেবল সমাধান করবেন।

তবে যদি কোন জটিল সমস্যায় তাঁরা ভিন্নমত পোষণ করেন, তাহলে যা যা অবস্থা তখন ছিল সেটাই থেকে যাবে। কোন ম্যাচে নতুন বল ব্যবহারের সময় আম্পায়াররা একমত হয়ে খেলার আগেই সেগুলিকে অনুমোদন করবেন। ক্রিকেট মহলে সকলেই জানেন যে, বাংলাদেশে সাধারণতঃ ৬ বলে ওভার ডাকার প্রচলন আছে, ৮ বলে নয়। উপরোক্ত বিষয়গুলি নিয়ে খেলার আগে শুধু অধিনায়কদ্বয় ও মাঠের কর্মকর্তাদের সঙ্গেই নয়, স্কোরারদের সঙ্গেও আম্পায়ারের আলোচনা করা উচিত। এর ফলে খেলা চলার সময় কোন বিঘ্ন বা মতানৈক্যের সৃষ্টি হয় না।

ইনিংসের জন্য টস হবার আগে আম্পায়ারদের অনেক করণীয় রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল পীচ ও মাঠের যাবতীয় পরিমাপ সংক্রান্ত কার্যাবলী তদারক বা পরীক্ষা করা ও এ বিষয়ে ত্রুটিহীনতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। এছাড়া খেলা শুরুর আগে অধিনায়কদ্বয়ের খেলোয়াড় মনোনয়ন এবং খেলোয়াড়দের তালিকা বিনিময়ের কাজে যাতে বিলম্ব না ঘটে সেদিকেও আম্পায়ারকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সর্বোপরি, সঠিক সময়ে যাতে ইনিংস মনোনয়নের জন্য টস করা হয় তা দেখা আম্পায়ারের প্রধান কর্তব্য। আইনে নির্দিষ্ট রয়েছে যে আম্পায়ারকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

সর্বোপরি, সঠিক সময়ে যাতে ইনিংস মনোনয়নের জন্য টস করা হয় তা দেখা আম্পায়ারের প্রধান কর্তব্য। আইনে নির্দিষ্ট রয়েছে যে আম্পায়ারদ্বয় প্রতিদিন খেলা শুরুর অন্ততঃ আধঘন্টা আগে মাঠে আসবেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খেলার আগে আম্পায়ারদের করণীয় বিষয়গুলি পরিমাণে এত বেশি যে তার পক্ষে আধঘন্টা সময় যথেষ্ট নয়। তাই তাদের খেলা আরম্ভের আরও অনেক আগে মাঠে উপস্থিত হওয়া দরকার ও তাঁদের স্বার্থেই এটা কর্তব্য ।

খেলা চলার সময়ে কার্যরত দুই আম্পায়ারকে সর্বদা তাঁদের মধ্যে বোঝাপড়ার বিষয়টি বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে। এই বোঝাপড়া এবং একজনের প্রতি আরেকজনের দৃঢ় আস্থা বহু জটিল সমস্যার সহজ সমাধানে সাহায্য করে। কোন কোন বলের খেলার মেয়াদ থাকাকালীন মাঠে এমন ঘটনা ঘটতেই পারে যা বোলার প্রাে আম্পায়ারের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে অপর আম্পায়ার তাঁর সতীর্থকে আলোচনা বা গোপন সঙ্কেতের দ্বারা সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে যতদূর সম্ভব সাহায্য করবেন।

বোলার প্রান্তের আম্পায়ারের অন্যতম দায়িত্ব হল নতুন ব্যাটসম্যানকে ভালভাবে গার্ড দেয়া। তিনি মাঝের স্টাম্পের পেছনে দাঁড়িয়ে ব্যাটসম্যানকে ‘গার্ড, (অর্থ স্ট্রাইকারের ইচ্ছানুযায়ী স্টাম্পের সামনে নির্দিষ্ট কোন অংশে ব্যাট রেখে তিনি খেলা শুরু করবেন) দেবেন। ‘গার্ড’ দেবার সময় তাঁকে ঠিক মাঝের স্টাম্পের পেছনে দাঁড়াতে হবে। ব্যাটসম্যান সাধারণতঃ “ওয়ান লেগ” বা ‘লেগ স্টাম্প গার্ড অথবা “টু’ লেগস” ব ‘লেগ অ্যান্ড মিডল স্টাম্প গার্ড” ও “মিডল স্টাম্প গার্ড” নিয়ে থাকেন। গার্ড নেবার পর আম্পায়ার তাঁকে মৌখিকভাবে বা আঙুলের সঙ্কেতের দ্বারা নিশ্চিন্ত করবেন যে সঠিক
গার্ড নেয়া হয়েছে। বোলার কিভাবে বল করবেন আম্পায়ার তা ব্যাটসম্যানকে জানাবেন। মুলতঃ সঠিক গার্ড’ পেলে ব্যাটসম্যানের পক্ষে বোলিং-এর মোকাবিলা করতে অনেক সুবিধা হয় এবং একটি বড় ইনিংস গড়ার পেছনে এই গার্ড নেবার গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।

 

ক্রিকেটের আম্পায়ার । ক্রিকেট খেলার ৩ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন

 

টস হবার পরই পীচের রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্ব ন্যস্ত হয় আম্পায়ারদের ওপর। এর সঙ্গে মাঠ, আবহাওয়া ও আলোর উপযুক্ততার বিষয়েও আম্পায়ারের দায়িত্ব রয়েছে। আইনের ৩ (৮) ধারায় এই বিষয়টি ভালভাবে আলোচিত হয়েছে। যদি আম্পায়ার মনে করেন যে মাঠ, আবহাওয়া বা আলোর অবস্থা খেলা চালানোর পক্ষে অনুপযুক্ত, তাহলে তাঁকে দু’দলের অধিনায়ক খেলা চালাতে বা আরম্ভ করতে রাজি হলে খেলা চালাতে বা আরম্ভ করতে হবে।

পীচ বা পীচের বহির্ভাগ খেলার উপযুক্ত কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা করার ও সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আম্পায়ারদের কোন খেলোয়াড় বা মাঠ কর্তৃপক্ষের সাহায্য নেবার প্রয়োজন নেই। মাঠ সংক্রান্ত সমস্যাগুলির মধ্যে প্রধান হল, যদি পাঁচ ভিজে থাকে বা পীচের কাছাকাছি কোন অংশ ভিজে থাকে বা মাঠে পানি থাকে তাহলে খেলা চালানো যাবে না। এটা নির্ভর করছে বোলারের রান আপ ডেলিভারি সাইড আর ব্যাটসম্যানের ফুটহোল্ড এবং পীচের কাছাকাছি ফিল্ডারদের চলা ফেরার সুবিধা অসুবিধার ওপর।

তবে সাধারণত পীচের ত্রিশ চল্লিশ গজ দূরে যদি মাঠ কেবল ভিজে থাকে তাহলে সাধারণত খেলা বন্ধ করার প্রয়োজন হয় না। মাঠ বা পীচের উপযুক্ততা বিষয়ে স্থানীয় মাঠ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিশেষ আলোচনা করে আম্পায়ারদের এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে যদি কখনও খেলা আরম্ভ হবার পর আম্পায়ার মনে করেন যে মাঠ বা আলোর অবস্থা খেলা চালাবার পক্ষে যথেষ্ট নয় তখন তিনি ক্রীজে অবস্থানকারী ব্যাটসম্যান ও ফিল্ডিং দলের অধিনায়কের মতামত নিতে পারেন

মাঠে আলো বা মন্দ আবহাওয়ার জন্য যখন খেলা বন্ধ থাকে তখন আম্পায়ারকে সজাগ থাকতে হয় এবং অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বারবার পরীক্ষা চালিয়ে যেতে হয়। তবে আলোর অবস্থা খেলার উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণ করা খুবই শক্ত। এই বিষয়টি নিয়ে প্রায়ই আম্পায়ারদের সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। আলোর উপযুক্ততা নিয়ে সমস্যা এড়াতে আজকাল সেই জন্য লাইটমিটারের প্রচলন হয়েছে যার দ্বারা সঠিকভাবে বোঝা যায় যে খেলা চালাবার মত যথেষ্ট আলো রয়েছে কিনা। ইংল্যান্ডে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সম্প্রতি পাকিস্তানেও এর ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে।

আলোর ব্যাপারে আর একটি কথা আম্পায়ারদের মনে রাখা দরকার, যদি অনুপযুক্ত আলো থাকা সত্ত্বেও ব্যাটসম্যান খেলতে রাজি হন তাহলে আম্পায়ারকে খেলা চালু রাখতে হবে । তবে তারপরে খেলা চলার সময় যদি আলোর আরো অবনতি ঘটে এবং তার দরুণ যদি ব্যাটসম্যান খেলা বন্ধের আবেদন করেন, তবে আম্পায়ারকে সেঃ আবেদন গ্রাহ্য করতে হবে। আর এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে আলো সংক্রান্ত কেন আবেদন যদি ফিল্ডিং পক্ষ থেকে করা হয় তবে আম্পায়ার তা গ্রাহ্য করবেন না। আলোর ব্যাপারে আম্পায়ারদের সাইটস্ক্রিন, গাছের অবস্থান এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থ প্রতি দৃষ্টি দিয়ে সিদ্ধান্তে আসা উচিত।

কখনও কখনও একটা ম্যাচ চলার সময়ে মাঝপথেই আম্পায়ার তা পরিতার ঘোষণা করতে বাধ্য হন। যেসব ঘটনা আম্পায়ারকে এরকম করতে বাধ্য করে তাদের মধ্যে রয়েছে মাঠে দর্শকদের অনুপ্রবেশ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অগ্নিসংযোগ, পীচের ক্ষতিসাধন প্রভৃতি। টেস্ট ক্রিকেট এর বহু উদাহরণ বিভিন্ন দেশের মাঠে ছড়িয়ে আছে। এ অস্বাভাবিক অবস্থায় দুই অধিনায়ক খেলা চালাতে রাজি হলেও, কেবল অনু পরিস্থিতি বিচার করেই আম্পায়ারদ্বয় যৌথ দায়িত্ব নিয়ে খেলা চালাবেন। আবার কখনও কখনও কোন দল একটি ম্যাচের মাঝেই হার স্বীকার করে নেয়। ফলে তখনই আম্পায়ার খেলাটি বন্ধ করতে বাধ্য হন। এই বিষয়টি ২১ নং আইনে ভালভাবে আলোচিত হয়েছে।

 

ক্রিকেটের আম্পায়ার । ক্রিকেট খেলার ৩ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন

 

৩ নং আইনে নির্দিষ্ট করে বলা আছে, আম্পায়ারদ্বয় এমন জায়গায় দাঁড়াবেন যেখানে থেকে তাঁরা সবচেয়ে ভালভাবে খেলাটির উপর দৃষ্টি রাখতে পারেন। বোলার প্রান্তের আম্পায়ার বোলার উইকেটের পেছনে এমনভাবে দাঁড়াবেন যাতে বোলার রান আপ বা স্ট্রাইকারের দৃষ্টি বাধাপ্রাপ্ত না হয়। স্ট্রাইকার প্রান্তের আম্পায়ার সাধারণত স্ট্রাইকারের লেগ সাইডে অর্থাৎ স্কোয়ার লেগ অঞ্চলে দাঁড়ান।

কিন্তু অনেক সময় আহত ব্যাটসম্যানের রানার বা কোন ফিল্ডারের উপস্থিতি বা অস্তগামী সূর্যের আলো তাঁর দৃষ্টিতে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে পপিং ক্ৰীজ দেখায় অসুবিধা হয়। সেই সময় তাঁর লেগ সাইড থেকে অফ সাইডে এসে দাঁড়ানো উচিত। স্ট্রাইকার প্রান্তের আম্পায়ার স্টাম্পড আউট, হিট উইকেট তাঁর প্রান্তে শর্টরান, রানআউট এবং বোলারে থ্রো, উইকেটরক্ষকের আইন লঙ্ঘন এবং পপিং ক্রীজের পিছনে দুইয়ের অধিক ফিল্ডারের অবস্থান বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন।

অপরদিকে বোলার প্রান্তের আম্পায়ার বোল্ড আউট, অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড, রিটায়ার আউট, তাঁর প্রান্তের রানআউট ও শর্টরান, বাউন্ডারি, নো বল, ওয়াইড বল, বাই, লেগবাই রান এবং ফিল্ডারের পীচে অনধিকার প্রবেশের বিষয় সম্পর্কে যাবতীয় সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। ওভার থ্রো থেকে কৃত রান নতুন বল নেয়া হল কি না এবং ব্যাটসমান কীভাবে আউট হলেন তা স্কোরারকে জানানো তাঁর কর্তব্য। এছাড়া প্রতি ইনিংসের শুরুতে বা খেলার যে কোন পর্যায়ের শুরুতে ‘প্লে’ ডাকা খেলার, যে কোন পর্যায়ের শেষে ‘টাইম’ ডাকা এবং প্রতিটি ওভারের বল গণনার কাজও বোলার প্রান্তের আম্পায়ারকে করতে হয়।

সর্বোপরি খেলা পরিচালনার জন্য স্কোরারের পরিপূর্ণ সহযোগিতা অপরিহার্য। প্রতিটি ম্যাচেই আম্পায়ারদ্বয় ও স্কোরারের নিখুঁত বোঝাপড়ার মাধ্যমে একটি দ হিসাবে কাজ করা উচিত । ৩.১৪ নং আইনে বলা যায় যে খেলা চলার সময়ে ও খেলার শেষে আম্পায়ারদ্বয় ম্যাচের স্কোর ও ফলাফলের সমন্ধে সন্তুষ্ট হবেন। স্কোরাররা যদি নিখুঁত ও যথাযথভাবে স্কোরিং-এর দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তবে আম্পয়ারদ্বয়-এর উপরোক্ত আইনটি অনুসরণে যথেষ্ট সুবিধা হয়। কারণ ম্যাচের ফলাফল সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হবার সম্পূর্ণ আম্পায়ারের দায়িত্ব।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment