ক্রিকেটের রান আউট । ক্রিকেট খেলার ৩৮ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন
Table of Contents
ক্রিকেটের রান আউট । ক্রিকেট খেলার ৩৮ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন
১। আউট-রান আউট
রানের উদ্দেশে দৌড়ান অবস্থায় অথবা বলটির খেলার মেয়াদ থাকাকালীন দুই ব্যাটসম্যানের যে কোন একজন রান আউট হবেন-কেবল আইন নং ৩৯ এর অধীনে (স্টাম্পড আউট) অবস্থায় ব্যতিরেকে তিনি যদি নিজের জমির (পপিং ক্রীজ) বাইরে অবস্থান করেন এবং বিপক্ষ দল কর্তৃক তাঁর উইকেটটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। আবার যদি দৌঁড়ান অবস্থায় কোন ব্যাটসম্যান তাঁর জমিতে (পপিং ক্রীজ) পৌঁছবার পরবর্তী পর্যায়ে আঘাত এড়ানোর উদ্দেশে উপরোক্ত জমির বাইরে দাঁড়ান এবং তাঁর উইকেটটি ভাঙ্গা হয় তবে সেই ব্যাটসম্যান রান আউট হবেন না।
২। নো বল ডাকা হলে
যদি কোন নো বল ডাকা হয় যতক্ষণ না স্ট্রাইকার রান সংগ্রহে উদাত হন সেই বলে ট্রাইকারকে রান আউট দেয়া হবে না।

৩। কোন ব্যাটসম্যান আউট হবেন
যদি ব্যাটসম্যানদ্বয় রান করার সময় পরস্পরকে অতিক্রম করে থাকেন তা হলে যে দিকের উইকেটটি ভাঙ্গা হয়েছে সেই উইকেটের দিকে ধাবমান ব্যাটসম্যানই রান আউট হবেন এবং যদি তাঁরা অতিক্রম করে না থাকেন, তবে যে দিকের উইকেটটি ভাঙ্গা হয়েছে, সেই নিকের পরিত্যাগকারী ব্যাটসম্যান রান আউট হবেন। আবার যদি কোন ব্যাটসম্যান তাঁর উইকেটের জমিতে (পপিং ক্রীজের ভিতরে) অবস্থান করেন বা সেখানে ফিরে আসেন এবং অপর ব্যাটসম্যান তাঁর সঙ্গে মিলিত হন তবে শেষোক্ত ব্যাটসম্যান রান আউট হবেন, যদি তাঁর (পূর্ব অধিকৃত) উইকেটটি ভেঙ্গে দেয়া হয়।

৪। রান স্কোর করা
কোন ব্যাটসম্যান রান আউট হলে কেবল যে রানটি নেয়া হচ্ছিল সেই রানটি স্কোরে অন্তর্ভুক্ত হবে না। কিন্তু যদি আহত স্ট্রাইকার নিজেই রান আউট হন কোন রানই লিপিবদ্ধ হবে না । আইন ২.৭ দেখুন (আহত ব্যাটসম্যান ও পরিবর্ত রানারের আইন লঙ্ঘন ।
টীকা
(ক) বিপরীত দিকের উইকেটে খেলা বল আঘাত করলে যদি ব্যাটসম্যানের দ্বারা খেলা কোন বল বিপরীত প্রান্তের উইকেটে আঘাত করে তবে কোন ব্যাটসম্যানই রান আউট হবেন না, যদি না বলটি উইকেট ভাঙ্গার পূর্বে একজন ফিল্ডসম্যান কর্তৃক স্পর্শ করা হয় ।
(খ) স্কোর বইয়ে সংযোজন
এই আইন অনুযায়ী স্ট্রাইকারকে আউট দেয়া হলে স্কোর বইয়ে সঠিক সংযোজন হবে, রান আউট এবং এর ফলে বোলার এই উইকেটের কৃতিত্বের অধিকারী হতে পারবে না।
জ্ঞাতব্য বিষয়
এই আইনটি আম্পায়ারদের ভাল করে আয়ত্ত করতে গেলে স্টাম্পড আউট-এর সঙ্গে রান আউটের মূল পার্থক্য কি তা জানা উচিত। কারণ অনেক সময় দেখা গেছে আম্পায়াররা স্ট্রাইকারকে ঐ প্রান্তের উইকেটে স্টাম্পড আউটের বদলে রান আউট দিয়েছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আম্পায়ারদের স্টাম্পড আউট (আইন নং ৩৯) ও রান আউট (আইন নং ৩৮) সাথে আরও দুটি আইন নং ২৮ (উইকেট ইজ ডাউন) ও আইন নং ২৯ (ব্যাটসম্যান আউট অফ হিজ গ্রাউন্ড) ভাল করে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে। এই রান আউট স্ট্রাইকার ও ননস্ট্রাইকার উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। দুই পপিং ক্রীজের মধ্যে (৫৮ ফুটের ভিতর) স্ট্রাইকার বা ননস্ট্রাইকার যে আউট হয়েছেন তা বিচার করার দায়িত্ব আম্পায়ারদের উপর ন্যাস্ত থাকে এবং বলের খেলার মেয়াদ থাকাকালীন অবস্থায়ই ব্যাটসম্যানের আউট কোন দিকে হবে নির্ভর করে থাকে।
এই বিষয়টি দুজন ব্যাটসমান যখন দৌড়ে পরস্পর পরস্পরে অতিক্রম করছেন, সেই অবস্থান। থেকেই বিচার্য হয়ে থাকে ও যে কেউ দৌড়াতে গিয়ে নির্দিষ্ট দিকের ক্রীজে। পৌঁছতে অক্ষম হলে সেই উইকে যদি বিপক্ষ দলের কোন ফিল্ডার ভেঙ্গে দেন তাহলে ব্যাটসম্যান রান আউট হবেন। তবে এই আইনে ভাল করেই বলা আছে, যদি কোন ব্যাটসম্যান একবার ক্রীজে পৌঁছন এবং তারপর যদি তিনি কোন থ্রো থেকে আঘাত পাবার ভয়ে বাঁচবার জন্য লাফিয়ে ওঠেন ও সেই অবস্থায় বিপক্ষ দল তাঁর উইকেট ভেঙ্গে দেয়, তখন তিনি রান আউট বলে গণ্য হবেন না। তবে এই ঘটনাটি আম্পায়াররা দেখবেন যেন সেই ব্যাটসম্যান ঐ আঘাত পাবার বিষয়ে কোন চালাকি বাজ ভান না করেন।

একজন স্ট্রাইকার ওয়াইড বলে রান আউট ও স্টাম্পড আউট দুই হতে পারেন, কিন্তু নো বল এ তিনি কেবল মাত্র রান আউটই হবেন। এই আইনের ২ নং উপধারায় বর্ণনা করা হয়েছে, যে যতক্ষণ না স্ট্রাইকার রান নেবার চেষ্টা করছেন ততক্ষণ তিনি নো বলে রান আউট হবেন না। আরো বলা আছে যে সেক্ষেত্রে উইকেটরক্ষক স্ট্রাইকারকে কোন ফিল্ডারের সাহায্য ছাড়াই রান আউট করতে পারবেন ।
যদি স্ট্রাইকার একটি বল হিট করেন এবং সেটি ননস্ট্রাইকারের উইকেট সরাসরি ভেঙ্গে দেন ও সেই অবস্থায় ননস্ট্রাইকার পপিং ক্রীজের বাইরে অবস্থান করেন তবে তিনি রান আউট হবেন না, যদি না একজন ফিল্ডার সেটিকে উইকেট ভাঙ্গার আে স্পর্শ করেন ।
আবার একজন বোলার তার রান আপে বা বল করার সময় ননস্ট্রাইকারকে আই করতে পারেন। কারণ বলের খেলার মেয়াদ শুরু হয় বোলার যখন বল দেবার জন্য দৌড় আরম্ভ করেন। ব্যাটসম্যানরা পরস্পর পরস্পরকে অতিক্রম করার সময়ও তাঁদের উপর দুই আম্পায়ারই তীক্ষ্ণ নজর রাখার অভ্যাস করবেন। সাধারণত দুজন ব্যাটসম্যানের যে কেউ যখন বল খেলার মেয়াদ থাকে তখন যদি তাঁরা দৌড়ে রান নিতে যান বা পপিং ক্রীজের বাইরে অবস্থান করেন তাহলে বিপক্ষ দলের যে কোন ফিল্ডার উইকেট ভেঙ্গে দিয়ে রান আউট করতে পারেন।
বলের খেলার মেয়াদ থাকাকালীন কিন্তু স্টাম্প আউট না হওয়ার পর যদি কোন ফিল্ডার বল ধরার বা স্পর্শের পর উইকেটরক্ষক উইকেট ভেঙ্গে দেন তাহলে স্ট্রাইকার যার ক্রীজের ভিতর থাকা উচিত ছিল তিনি রান আউট হবেন। যদি বোলার বল করতে গিয়ে দেখেন, ননস্ট্রাইকার ক্রীজের বাইরে অবস্থান করছেন, তখন তিনি যে কোন বিধি, সংগতভাবে বল হাতে নিয়ে বেল ফেলে বা বল ছুঁড়ে তাঁকে রান আউট করতে পারেন । তবে বলটি ছোঁড়ার পর সেটি যদি স্টাম্পে না লেগে বাউন্ডারি হয় ৪ রান নো বলে অতিরিক্ত হিসাবে যোগ হবে আর বোলার একটি অতিরিক্ত বল করবেন। এছাড়া বলটি ওভারে গণনা হবে না।

কিন্তু বোলার যদি স্ট্রাইকারকে পপিং ক্রীজের বাইরে আসার জন্য রান আউট করতে তার উইকেটে ছোঁড়েন, তখন আম্পায়ার নো বল ডাকবেন ও সংকেত দেবেন। এই বিষয়ে আইন নং ২৪ উপধারা ৪ ও ৫ দেখুন। তবে যদি উভয় ব্যাটসম্যান বোলারের রান আপের জন্য রান চুরি করার চেষ্টা করেন ও ক্রীজ ছেড়ে বেরিয়ে যান তখন আম্পায়ার ডেড বল ডাকবেন ও সংকেত দেবেন, যখন তাঁরা পরস্পর পরস্পরকে অতিক্রম করে রান নেবার চেষ্টা করবেন।
ক্রিকেট খেলায় আম্পায়ারদের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিতে হয়। তার মধ্যে এই বাটসম্যানের যদি কোন পরিবর্ত রানার থাকে তবে এর সিদ্ধান্ত দেয়া জটিল হয়ে রান আউট সিদ্ধান্তটি হলো প্রথম। তার উপর কোন ওভার থ্রো হলে বা আহত পায়। বিশেষ করে দুটি ওভার থ্রো হলে তা খুবই জটিল হয়ে ওঠে। আম্পায়ারের পক্ষে দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে এল.বি.ডব্যু ও তৃতীয় সিদ্ধান্ত হলো উইকেটরক্ষকের থাকা উইকেটের পিছনে স্ট্রাইকারের ক্যাচ আউট হওয়া। শেষের দুটি হচ্ছে বোলার প্রান্তের আম্পায়ারের অধীনে এবং এই সকলের জন্য আম্পায়ারদের উচ্চমানের শারীরিক যোগ্যতার প্রয়োজন।

যতদূর সম্ভব আম্পায়ারেরা সিদ্ধান্ত দেবার জন্য পপিং ক্রীজের ঠিক সামনে এসে সমকোণে দাঁড়ান, যাতে ব্যাটসম্যানের হাতে ব্যাট বা দেহের কোন অংশ এই ক্রীজের পিছনের জমিতে যাচ্ছে কিনা বা আছে কিনা ভালভাবে দেখতে পারেন। আরও দেখা গেছে যে দক্ষ বোলার প্রান্তের আম্পায়াররা খুব তাড়াতাড়ি অন সাইডের দিকে ঘুরে যান। যাতে তিনি একটা সূক্ষ্ম রান আউটের সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। কখনো কখনো এমন হঠাৎ ব্যাটসম্যানেরা রান নেন যা ঠিক জায়গায় এসে সিদ্ধান্ত দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।

বোলার প্রান্তের আম্পায়ার যখন ‘প্লে” বলে খেলা শুরু করেন, তখন থেকেই তাঁর সতর্ক থাকার প্রয়োজন । কারণ বোলারের রান আপের সঙ্গে সঙ্গে বলের খেলার মেয়াদ আরম্ভ হয় । এই সময়ে মাঠে যে কোন ঘটনা ঘটতে পারে এবং স্ট্রাইকার ও ননস্ট্রাইকার হঠাৎ কোন রান নেবার সুযোগ নিতে পারেন। দুজন ব্যাটসম্যান যখন রান নিতে যাচ্ছেন এবং একজন কেবল দৌড়ালে ও অপর জনের ক্রীজের ভিতর প্রবেশ করলেন তখন যে ব্যাটসম্যান দৌড়ে এসেছেন তাঁর দিকের উইকেট কোন ফিল্ডার ভেঙ্গে দিলে তিনিই আউট হবেন ।
আর একটা ঘটনা বিশেষ করে জানা দরকার সেটি হলো যখন স্ট্রাইকার একটা বল খেলে পপিং ক্রীজের সামনে বা বাইরে কেবল দৌড়িয়ে থাকেন ও ননস্ট্রাইকার কোন এক বিশেষ বোলারকে না খেলার জন্য এড়িয়ে যেতে স্ট্রাইকারের উইকেটে গিয়ে পৌঁছে যান তাহলে এই অবস্থায় আম্পায়াররা দুই ব্যাটসম্যানের পপিং ক্রীজের দুইটির ভেতর পরস্পর পরস্পরকে অতিক্রম করেছেন বলে ধরে নেবেন, যদিও স্ট্রাইকার কেবলমাত্র পপিং ক্রীজের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, রান নেবার চেষ্টা করেন নি; এ ক্ষেত্রে যদি ননস্ট্রাইকারের উইকেট কোন ফিল্ডার ভেঙ্গে দেন তাহলে স্ট্রাইকারই রান আউট হবেন।

উপরোক্ত সমস্ত ঘটনাগুলি আম্পায়ারকে দেখতে গেলে তাঁকে খুব সজাগ ও চটপটে হতে হবে। এমন কি তিনি হঠাৎ কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে ব্যাটসম্যান বা ফিন্ডসম্যানের দ্বারাও বাধাপ্রাপ্ত হতে পারেন ও তাঁর দেখার অসুবিধা হতে পারে। সে জন্য আম্পায়াররা অসংগতভাবে উইকেট পতনের ক্ষেত্রে নিজেরা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন।
আরও দেখুনঃ