ক্রিকেটের স্কোরারস বা ক্রিকেট খেলার ৪ নম্বর আইন – বিষয়ে আমাদের আলোচনা। এই পর্বটি আমাদের খেলাধুলার নিয়ম বা আইন নিয়ে নিয়মিত আয়োজনের অংশ।
Table of Contents
ক্রিকেটের স্কোরারস [ ক্রিকেট খেলার ৪ নম্বর আইন ]
১। রান লিপিবদ্ধ করা
খেলায় যে সব রান স্কোর করা হয়েছে তার জন্য নিযুক্ত স্কোরারের দ্বারা লিপিবন্ধ করা হবে। যেখানে দু’জন স্কোরার রয়েছেন সেখানে তারা বারবার স্কোর সীট মিলেছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পরীক্ষা করে দেখবেন।
২। সংকেতগুলির প্রাপ্তি-স্বীকার
স্কোরাররা আম্পায়ারের দেয়া সব আদেশ এবং সংকেতগুলি গ্রহণ করবেন এবং তৎক্ষণাৎ প্রাপ্তি স্বীকার করবেন।
জ্ঞাতব্য বিষয়
ক্রিকেট খেলায় স্কোরারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেলার যাবতীয় পরিসংখ্যানগত দায়িত্ব থাকে তাঁর উপর। স্কোরিং যদি সুষ্ঠু ত্রুটিহীনভাবে সম্পন্ন করা হয় তাহলে শুদ্ধ ফলাফলে উপনীত হবার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হয় না। কিন্তু এই স্কোরিং- এর কাজ নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে গেলে স্কোরারকে ক্রিকেটের প্রতিটি আইনের খুঁটিনাটি সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত হতে হয়, নতুবা আম্পায়ারের সঙ্গে সংকেত বিনিময়ে অসুবিধা হয় ও সময় নষ্ট হয়। ফলে অযথা খেলায় বিঘ্ন ঘটে, এমন কি এতে খেলার চূড়ান্ত ফলাফলের ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটাও বিচিত্র নয়।
১৯৮০ সালে প্রবর্তিত ক্রিকেটের নতুন আইনের ৩.১৪ নং (স্কোরের বিশুদ্ধতা) এবং ২১.৬ নং ধারানুযায়ী (ফলাফলের বিশুদ্ধতা) স্কোরার ও আম্পায়ার উভয়েরই দায়িত্ব বেড়ে গেছে। ফলে স্কোরারও আম্পায়ারের মধ্যে বোঝাপড়া অত্যন্ত আবশাক। আম্পায়ারদের যদি হাতে-কলমে স্কোরিং-এর অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে স্কোরের সুবিধা- অসুবিধাগুলি তারা ভালভাবে বুঝতে পারবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ খেলায় সেই অভিজ্ঞতা তাদের অনেক কাজে লাগবে। ঠিক একইভাবে স্কোরারদেরও আম্পায়ারদের সঙ্কেতগুলি গ্রহণ করার তৎপরতা প্রদর্শন করা উচিত।
এজন্য স্কোরারদের মাঠে এমন একটি জায়গা বেছে নিতে হয় যেখান থেকে খেলা দেখার ও আম্পায়ারদের সঙ্গে সঙ্কেত বিনিময়ের সবচেয়ে সুবিধা হয়। স্কোরাররা সাধারণত একটি নিশানের সাহায্যে আম্পায়ারের সঙ্কেতের প্রাপ্তি স্বীকার করে থাকেন। এই বিষয়ে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। ইংল্যান্ডে একটি খেলায় কোন এক বিরতির সময় আম্পায়ার স্কোরারকে ঠাট্রা করে বলেছিলেন, ‘অত্যন্ত বন্ধুভাবাপন্ন হয়েও আপনি দয়া করে ভবিষ্যতে আমার সঙ্কেতগুলির সঠিক প্রাপ্তি স্বীকার করবেন। স্কোরার সঙ্গে সঙ্গে জোর গলায় বললেন, ‘নিশ্চয়ই, যদি আপনি ঠিকমত আমাদের দিকে সন্ধের দেন । এতক্ষণ তো আপনি আমাদের উল্টোদিকে যে দিকে বিয়ার বিক্রি হচ্ছে সেদিকে সঙ্কেত দিচ্ছিলেন। আপনি আগে জানুন যে স্কোরার কোথায় বসেছে, তারপর তো সঙ্কেত বিনিময়ের প্রশ্ন উঠছে।’
স্কোরিং-এর কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হলে স্কোরারকে প্রতিটি বলে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বলের গণনা যদি একবার ভুল হয়ে যায় তাহলে সেই ভুল জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে। এর ফলে পরবর্তী বলগুলিতেও ভুল এসে হাজির হয় এবং শেষ। পর্যন্ত স্কোর বইতে রান ও বলের হিসাব মেলাতে প্রচন্ড অসুবিধা হয়।
পরিসংখ্যানগত যাবতীয় প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদানের দায়িত্ব সরকারী স্কোরারের। ব্যাটসম্যান কতক্ষণ খেললেন, কটি বল খেললেন, ক’টি চার ও ছয় মারলেন, প্রতিটি বোলারের বোলিং বিশ্লেষণ (ওভার মেডেন-রান-উইকেট), অতিরিক্ত রান, ঘন্টা প্রতি ওভার ও রানের হার, অর্ধশতরান, শতরান বা দ্বিশতরান-সংক্রান্ত যাবতীয় দলগত ও ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানের হিসাব তাকে রাখতে হবে। এই সঙ্গে বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও খেলার প্রতিটি ওভারের শেষে এবং প্রতিটি উইকেট পতনের পর মিলিয়ে নেয়া দুই সরকারী স্কোরারের দায়িত্ব।
প্রথম শ্রেণীর খেলায় যে পেনাল্টি রানের প্রথা চালু আছে প্রতিটি খেলার প্রতিটি ইনিংসে তা সঠিকভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে কিনা তাও স্কোরারকে যথেষ্টও সচেতন থেকে দেখতে হবে। ম্যাচের শেষ ঘন্টায় যখন বাধ্যতামূলক ওভারের খেলা শুরু হয় তখন স্কোরারের দায়িত্ব বেড়ে যায়। তাকে ঐ বাধ্যতামূলক ওভারের জন্য নতুন করে ওভার গণনা শুরু করতে হয়।
আগেই বলা হয়েছে স্কোরার ও আম্পায়ারদের মধ্যে বোঝাপড়ার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য প্রতিদিনের খেলা শুরুর আগে উভয় পক্ষের মধ্যে নিজেদের সমস্যাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা দরকার। খেলা চলার সময়ে স্কোরারের মনে কোন বিষয়ে কোন প্রকার সন্দেহ সৃষ্টি হলেই সঙ্গে সঙ্গে মৌখিক বা লিখিতভাবে সেই সন্দেহ দূর করা উচিত। একজন ব্যাটসম্যান ‘এল. বি. ডবলিউ হলেন না “কট বিহাইভ” হলেন এ বিষয়ে স্কোরার ও আম্পায়ারদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হবার সম্ভাবনা রয়েছে । এছাড়া ভাল বোঝাপড়া না থাকলে আম্পায়ারদের ‘ডেড বল’ বা সঙ্কেত বাতিলের (রিভোক) বিষয়টিও স্কোরারকে সন্দেহের মধ্যে ফেলে দিতে পারে। স্কোরার যদি দেখেন যে আম্পায়ার ওভারের গণনায় বারবার ভুল করছেন, তা হলে এ ব্যাপারে আম্পায়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা তাঁর কর্তব্য।
কোন কোন ছোটখাটো খেলায় অনেক সময় দেখা যায় যে আম্পায়াররা তাদের মনোমত সংকেত ব্যবহার করছেন। কিন্তু তাদের এরকম করা কখনই উচিত নয়। কারণ, এতে স্কোরিং-এর কাজে ভুল হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে ।
এছাড়া সাধারণ নিয়ম কানুনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি প্রতিযোগিতার বিশেষ আইনগুলি সম্পর্কেও স্কোরারের বুৎপত্তি থাকা দরকার।
নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয় স্কোরারের বিশেষ করে জানা দরকারঃ
১। তাঁরা স্কোর লেখার সময় কয়েকটি ভাল পেনসিল, দুই বা তিন রংয়ের হলে ভাল হয়। ডটপেন, পেনসিল কাটা কল, রবার, ঘড়ি, আইনের বই (১৯৮০ কোড), পরীক্ষামূলক আইনের বই (বোর্ডের), একটি ছোট খাতা ও স্কোর বই ব্যবহার করবেন ।
২। স্কোরারদের আম্পায়ারের ‘ডেড বল” ডাকা ও তার সংকেত সম্বন্ধে বিশেষ ভাবে জানা প্রয়োজন আছে।
৩। যেহেতু রিভোকের কোন বিশেষ সংকেত নেই সেটি আম্পায়ারদের সাথে আলোচনা করে নিজেদের সুবিধার জন্য কোন ব্যবস্থা করে নেবেন।
৪। যদি কোন আম্পায়ার তাঁর সিদ্ধান্ত বদলাতে চান তবে তিনি যা নির্দেশ দেবেন। স্কোরারের সেটি পালন করা উচিত।
আরও দেখুনঃ