নৌকা বাইচ খেলার আইন কানুন । খেলাধুলার আইন

নৌকা বাইচ খেলার আইন কানুন নিয়ে আজকের আলোচনা। নদী মাতৃক বাংলাদেশ। এ দেশের মানুষের জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে নদী-নালা, খাল- বিলের সযত্ন স্পর্শ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের হাসি- কান্না, আনন্দ-বেদনা ও আশা-নিরাশার মধ্যেও রয়েছে নদীর ছোঁয়া। আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য- সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় তাই রয়েছে নদ-নদীর প্রবল উপস্থিতি। আমাদের লোকালয় ও সংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ ফসল নৌকা বাইচ। নৌকা বাইচ বাংলাদেশের একটি বর্নাঢ্য ও নৈপুণ্যভাম্বর খেলা। আবহমান কাল থেকে গ্রামবাংলার মানুষের জীবনের সাথে নৌকা বাইচ ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে।

এ দেশের প্রত্যেকটা অঞ্চলেই কোন না কোন নদীর স্রোতধারা বয়ে গেছে। আমাদের দেশে নদ-নদীর আধিক্য হওয়ায় সারা দেশেই নৌকা বাইচ একটি অসম্ভব জনপ্রিয় খেলা। বিশেষ করে গ্রাম বাংলায় এ খেলার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। এ খেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামে তো রীতিমত মেলা বসে যায়।

নৌকা বাইচ কেবলমাত্র বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই এই খেলার প্রচলন রয়েছে। অলিম্পিকেও নৌকা বাইচ অন্তর্ভুক্ত।

 

নৌকা বাইচ খেলার আইন কানুন । খেলাধুলার আইন

 

নৌকা বাইচ খেলার আইন কানুন । খেলাধুলার আইন

নৌকা বাইচ প্রাচীন খেলার মধ্যে অন্যতম। আদিম যুগেও নৌকা বাইচের প্রচলন ছিল। বরফ যুগের পরেই নৌকা আবিষ্কৃত হয়। বলা যায় জীবনের তাগিদেই নৌকার আবিষ্কার। এক সময় বিনোদনের তাগিদেই শুরু হয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। কবে কোথায় প্রথম নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা শুরু হয় সে ইতিহাস আমাদের জানা নেই। কালের অতলে হারিয়ে গেছে সে ইতিহাস।

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে নৌকা বাইচ আমাদের দেশের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা। এই খেলার উন্নয়নের জন্যে রয়েছে বাংলাদেশ রোয়িং ফেডারেশন। ফেডারেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন এ খেলার উন্নয়নের জন্যে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশে এর কোন নিয়ম-কানুনের বই নেই।

বাংলাদেশ রোয়িং ফেডারেশনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারাও এ খেলার নিয়ম-কানুন জানার ব্যাপারে আশানুরূপ সহযোগিতা করতে পারেন নি। তবু খেলাধুলার আইন বইয়ের পাঠকদের জন্যে নৌকা বাইচের একটা সাধারণ নিয়ম নিচে তুলে ধরা হলঃ

 

নৌকা বাইচ খেলার আইন কানুন । খেলাধুলার আইন

 

(১) প্রতিযোগিতা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে স্থানীয় নিয়মানুসারে। টুর্ণামেন্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিযোগিতার আগেই অংশগ্রহণকারী দল সমূহকে নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অবহিত করবেন এবং অংশগ্রহণকারী দল সমূহ তা মানতে বাধ্য থাকবেন।

(২) প্রতিযোগিতার স্থান অবশ্যই নদীতে হবে। প্রতিযোগিতার দূরত্ব নির্ধারণ করতে হবে। জাতীয় প্রতিযোগিতায় এই দূরত্ব হয়ে থাকে ৬৫০মিটার। স্থানীয় এই দূরত্বের কম বা বেশি করতে পারেন প্রয়োজনে ।

(৩) কত মাঝির নৌকা বাইচ হবে তা আগেই নির্ধারণ করতে হবে। ২৫ অথবা ৫০ মাঝির নৌকা বাইচ হতে পারে। এর কম মাঝির বাইচও হাওয়া সম্ভব।

(৪) প্রত্যেক নৌকার জন্যে আলাদা লাইন থাকবে। এক নৌকা অন্য নৌকা থেকে ১০ মিটার দূরে অবস্থান করবে। বাইচের সময় এক নৌকা অন্য নৌকাকে স্পর্শ করতে পারবে না।

(৫) স্টাটিং পয়েন্ট থেকে ফিনিশিং পয়েন্ট পর্যন্ত প্রতি একশো মিটার পর পর নদী তীরে একটা করে পতাকা পোঁতা থাকবে। এবং তা যেন দাড়িগণ অবলোকন করতে পারে।

 

নৌকা বাইচ খেলার আইন কানুন । খেলাধুলার আইন

 

(৬) প্রতিযোগী দল অবশ্যই প্রতিযোগিতার কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে উপস্থিত হবেন এবং রিপোর্ট করবেন। দল অবশ্যই তাদের দাড়িদের নাম দাখিল করবেন। এরপর তারা শুরুর স্থানের দিকে অগ্রসর হবেন ।

(৭) রিপোর্টিং এর পর অংশগ্রহণকারী দল অফিসিয়াল কর্তৃক নৌকা এবং দাড়ি অনুমোদন করবেন। অফিসিয়াল কেবলমাত্র আহত দাড়ি বদল করার অনুমতি প্রদান করবেন।

(৮) প্রত্যেক নৌকাকে দাড়ি সহ প্রতিযোগিতা শুরুর ১০ মিনিট আগে নির্দিষ্ট স্থানে (যেখান থেকে প্রতিযোগিতা শুরু হবে) উপস্থিত হতে হবে। যে নৌকা যথা সময়ে উক্ত স্থানে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হবে তাকে ডিসকোয়ালিফাই ধরা হবে। পরে এ নিয়ে কোন আপত্তি করা যাবে না। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে যিনি শুরু করবেন তিনি অংশগ্রহণকারী দল সমূহকে একটি নির্দেশনা দেবেন। যা প্রত্যেক দল মানতে বাধ্য থাকবে।

(৯) দাড়ির নামের তালিকা দাখিল করার পর কমিটির অনুমতি নিয়ে তা রদ বদল করা সম্ভব। কমিটি অবশ্যই তা লিপিবদ্ধ করবেন।

(১০) যিনি প্রতিযোগিতা শুরু করবেন তিনি প্রথমে একবার রেডি বলবেন এবং একবার গুলি ছুঁড়ে প্রতিযোগিতা শুরু করবেন। কোন ফাউল হলে তিনি আবার পরপর দুইবার গুলি ছুঁড়বেন এবং নৌকাগুলি পুনরায় যথাস্থানে ফিরে আসবে। তিনি পুনরায় আবার গুলি ছুঁড়ে প্রতিযোগিতা শুরু করবেন।

 

নৌকা বাইচ খেলার আইন কানুন । খেলাধুলার আইন

 

(১১) কোন দল পরপর দুইবার ফাউল করলে তাকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেয়া হবে । ঐ দল ছাড়াই প্রতিযোগিতা শুরু হবে।

(১২) প্রত্যেক নৌকাকে তার নিজ লেনে চলতে হবে। কোন নৌকা কোন কারণে নিজ লেন ছেড়ে অন্য লেনে ঢুকে পড়লে ডিসকোয়ালিফাই হবে এবং তাকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেয়া হবে ।

(১৩) কোন কারণে যদি প্রতিযোগিতা শুরুর পর ১০০ মিটারের মধ্যে কোন নৌকা অপর নৌকার সাথে ধাক্কা খায় তাহলে আবার নৌকাগুলোকে ফিরিয়ে আনা হবে। এবং নতুন করে প্রতিযোগিতা শুরু হবে।

(১৪) প্রতিযোগিতার সময় যদি কোন নৌকা ইচ্ছাকৃত অন্য লেনে ঢুকে পড়ে এবং অপর নৌকার সাথে ধাক্কা লাগায় তবে কমিটি ঐ নৌকাকে ফাউল করার দায়ে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেবেন।

 

গুগুল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

(১৫) নৌকা আগে সমাপ্তি রেখা অতিক্রম করবে সে নৌকা বিজয়ী হবে। প্রতিযোগিতার বিচারক থাকবে। তারাই বিজয়ী নির্ধারণ করবেন। বিচারক কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে ধরা হবে।

(১৬) সকল ক্ষেত্রে টুর্নামেন্ট কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment