Site icon Sports Gurukul | ক্রীড়া গুরুকুল , GOLN

ফুটবলের যত কুসংস্কার [ The superstition in Football ]

ফুটবলের যত কুসংস্কার [ The superstition in Football ]

ফুটবলের যত কুসংস্কার [ The superstition in Football ]

ফুটবলের যত কুসংস্কার [ The superstition in Football ] : সাধারণত যেসব জিনিসের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই তাকে কুসংস্কার বলা হয়। খেলোয়াড়রা এই কুসংস্কার আরো বেশি বিশ্বাস করেন, বিশেষ করে ফুটবলাররা। মাঠে নামার সময় কিংবা মাঠে নামার আগে খেলোয়াড়রা এমন কিছু কাজ করেন যেগুলো তাদের জিততে কিংবা সাফল্য পেতে সাহায্য করবে বলেই তাদের বিশ্বাস।

ফুটবলের যত কুসংস্কার: 

ডান পা আগে দিয়ে মাঠে নামা:

ফুটবলে কুসংস্কার ওপেন সিক্রেট। অর্থাৎ কুসংস্কার যে আছে সেটা সবাইই জানেন, কিন্তু স্বীকার করেন খুব কম ফুটবলার। ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী তারকা ফুটবলার রোনালদোরও ছিল এমন কুসংস্কার। প্রথমে ডান পা দিয়ে মাঠে নামার কুসংস্কার ছিল ‘দ্য ফেনোমেনন’ এর। এমনকি আরেক রোনালদো, পর্তুগাল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও ডান পা দিয়েই মাঠে প্রবেশ করতেন। ফুটবল মাঠে বিখ্যাতদের কুসংস্কারের গল্প থাকছে এই লেখায়।

গ্যারি লিনেকার এর বিশ্বাস:

বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক সাবেক স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার। অদ্ভুত এক কুসংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। সেটা হলো, অনুশীলনে তিনি কখনোই গোলে শট নিতেন না। তার বিশ্বাস ছিল, এতে আসল খেলার সময় তার গোল করার সম্ভাবনা কমে যাবে। তবে তার এই বিশ্বাস কিন্তু কাজেও দিত, তা না হলে কি বিশ্বকাপে ইংলিশদের সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পারতেন।

একই বাতিক ছিল রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি মেক্সিকান তারকা হুগো সানচেজের। তিনিও অনুশীলনে গোলে শট নিতে চাইতেন না। তারও বিশ্বাস ছিল, এতে শটের অপচয় হয়!

ববি মুরের বাতিক:

ইংলিশ ফুটবল কিংবদন্তি ববি মুরের আবার ছিল ভিন্ন বাতিক, তিনি সবার শেষে ড্রেসিং রুম থেকে বের হতে চাইতেন।এর কারণ হিসেবে ববি মুর জানিয়েছিলেন, তিনি তার শর্টস পরতেন সবার শেষে। যাতে ভাঁজ পড়ে না যায়। আরেক ইংলিশ খেলোয়াড় পল ইন্সও ড্রেসিং রুম থেকে বেরুতেন সবার শেষে। তিনি বেরিয়েই মাঠের দিকে দৌড় দিতেন এবং ওই দৌড়ের মাঝেইপরে নিতেন নিজের জার্সি। এছাড়া আইভরি কোস্টের কোলো তুরেও সবার শেষে মাঠে নামতেন। এ নিয়ে রয়েছে মজার একটি ঘটনাও।২০০৯ সালে আর্সেনালের হয়ে লিগে খেলার সময় তাকে উইলিয়াম গালাসের বদলি হিসেবে নামানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি মাঠে ঢোকেন দুই মিনিট পর। ঐ যে সবার শেষে ড্রেসিংরুম থেকে বেরোতেন সবার শেষে!

ডিফেন্ডার জন টেরি’র কুসংস্কার :

ইংলিশ সাবেক ডিফেন্ডার জন টেরি, ইংল্যান্ডের হয়ে কোনো ট্রফি জিততে না পারলেও চেলসির হয়ে সম্ভাব্য৬ সকল শিরোপাই জিতেছেন। তিনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপা লিগ- সবই জিতেছেন। চেলসিতে খেলার সময় টেরি অকপটে স্বীকার করেছিলেন তার কুসংস্কারপ্রবণতার কথা। তিনি নাকি বেশ কয়েকটি কুসংস্কার মেনে চলতেন।

যেমন প্রতিদিন টিম বাসে একই সিটে বসা, একই গান শোনা, মোজায় টেপ প্যাঁচিয়ে খেলতে নামা। এমনকি ড্রেসিংরুমে প্রতিদিন একই বাথরুম ব্যবহার করতেন। ডানদিকে একেবারে শেষ মাথার বাথরুমটাই তার সবচেয়ে প্রিয় ছিল।
বাথরুমের বাতিক ছিল জার্মান ফুটবলার মারিও গোমেজেরও। তবে তিনি টেরির মতো ডানদিকের নয়, ব্যবহার করতেন বাঁ দিকের বাথরুমটি।

টয়লেট সংক্রান্ত কুসংস্কার:

টয়লেট সংক্রান্ত কুসংস্কারে বিশ্বাস করতেন আরেকজন, তিনি আর্জেন্টিনার সাবেক গোলরক্ষক সার্জিও গয়কোচিয়া। তবে বাথরুমে নয়, তিনি প্রস্রাব করতেন মাঠে! তাও শুধুমাত্র পেনাল্টির সময়! আর কাজটি তিনি এমনভাবে করতেন যাতে কেউ বুঝতেই না পারে। ভাবতে পারেন যে জিনিসটা নিয়ে বাঙালি মজা নেয়, সেই জিনিসটাই একজনের কাছে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। মূলত গয়কোচিয়ার এই বাতিকের শুরুটা হয়েছিল ১৯৯০ বিশ্বকাপে। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে যুগোস্লোভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ে অমীমাংসিত থাকায় খেলা গড়ায় ট্রাইবেকারে। প্রচুর পানি পান করায় ট্রাইবেকার শুরু হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তেই বাথরুমে যাওয়ার দরকার পড়েছিল গয়কোচিয়ার, তবে যেতে পারেননি! মাঠেই কাজ সারেন!

ম্যাচ শেষে গয়কোচিয়া জানিয়েছিলেন, সেদিন টয়লেটে যাওয়ার সময় ছিল না। তাই তিনি মাঠের মধ্যেই প্রস্রাব করেছিলেন। পরে ম্যাচটি ট্রাইবেকারে জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। পরবর্তীতে ঐ বিশ্বকাপেই সেমিফাইনালে ইতালির বিপক্ষে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা। সেদিনও খেলা গড়ায় ট্রাইবেকার। তবে ট্রাইবেকারের আগে আগের দিনের মতো মাঠেই প্রস্রাব সেরে নেন গয়কোচিয়া। সেদিনও ট্রাইবেকার জয় পায় আর্জেন্টিনা। এরপর থেকে ট্রাইবেকার বা পেনাল্টি হলেই এই কাজ করতেন তিনি।

ইকার ক্যাসিয়াস এর কুসংস্কার:

সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলরক্ষকদের শর্ট লিস্টে অনায়াসে ঢুকে যাবেন স্প্যানিশ কিংবদন্তি ইকার ক্যাসিয়াস। কী জেতেননি তিনি? বিশ্বকাপ, ইউরো, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে শুরু করে সব শিরোপান জিতেছেন। যদি বলি এইসবই তিনি জিতেছেন কুসংস্কারে বিশ্বাস করে, অবাক হবেন? স্প্যানিশ গণমাধ্যম তো তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কুসংস্কারাচ্ছন্ন খেলোয়াড় বলেও অভিহিত করেছিল। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক এই গোলরক্ষকের কুসংস্কার ছিল প্রতি খেলার আগে মাঠে চিহ্ন দিয়ে রাখা। এখানেই শেষ নয়, জার্সির হাত কেটে বাদ দেওয়া, এমনকি মোজা উল্টো করে পরার বাতিকও ছিল তার।

রেনে হিগুইতার পাগলামি:

আরেক গোলরক্ষক কলম্বিয়ার রেনে হিগুইতারও ছিল কুসংস্কারে বিশ্বাস। কলম্বিয়ার এই সাবেক তারকা গোলরক্ষক বিশ্বাস করতেন নীল রঙের অন্তর্বাস পরে মাঠে নামলেই তারা জয় পাবেন। ১৯৮০ সালের দিকে রেনে হিগুইতার দল অ্যাটলেটিকো ন্যাসিওনাল যাতে মিলোনারিওসের বিপক্ষে জয় পায়, সে জন্য এক নারী গণকের কাছে যান তারা। সেই নারী গণকের দেওয়া টোটকা মেনেই নীল রঙের অন্তর্বাস পরে মাঠে নামেন তারা। তারপরই তাদের ব্যর্থতা ঘুচতে শুরু করে, তারা শেষমেশ কাপও জিতে নেয়। এরপর থেকে নীল রঙের অন্তর্বাস ছাড়া তারা মাঠেই নামতেন না!

তবে সবাইকে ছাপিয়ে জেনারো গাতুসো,ইতালি ও এসি মিলানের সাবেক এই তারকা মিডফিল্ডার খেলার আগে করতেন এক বিচিত্র কাজ। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে রুশ লেখক ফিওদর দস্তয়েভফস্কির বই পড়তেন তিনি।শু ধু তা-ই নয়, বিশ্বকাপে চেক প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষে মাঠ নামার আগে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গুছিয়ে রেখেই খেলতে নেমেছিলেন। পরবর্তী সময়ে টুর্নামেন্ট চলাকালীন সব ম্যাচেই একই কাণ্ড ঘটান তিনি।

আরও পড়ুন:

Exit mobile version