আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফ্রান্সের ছন্দপতন: ফুটবল বিশ্বে এক বড় নাম ফ্রান্স। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ফ্রান্স। তবে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সময়টা ভালো যাচ্ছে না ফ্রান্সের। ডেনমার্কের কাছে ২-১ গোলে হারের পর ক্রোয়েশিয়ার সাথে ড্র, এমনকি অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ অস্ট্রিয়ার সাথে জিততে পারেনি দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।
বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে হোঁচট খেয়েই চলেছে ফ্রান্স জাতীয় ফুটবল দল। নেশনস লিগে এখনও জয়ের মুখ দেখতে পারল না দিদিয়ে দেশঁর দল। নেশনস লিগে গ্রুপ এ ১ পয়েন্ট তালিকায় ফ্রান্স এখন সবার নীচে। ক্রোয়েশিয়ার কাছে ১ গোলে হেরেও ডেনমার্ক রয়েছে এই পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। তাদের ঝুলিতে ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট। অস্ট্রিয়া ও ক্রোয়েশিয়া ৩ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট করে নিয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে। ফ্রান্স রয়েছে ৩ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে।

[ আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফ্রান্সের ছন্দপতন ]
অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে প্রথমার্ধেই ০–১ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল ফ্রান্স। ৩৭ মিনিটে আন্দ্রেয়াস ওয়েইম্যান গোলটি করেছিলেন। ৮৩ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপের গোলে সমতা ফেরায় ফ্রান্স। ওয়েইম্যানের গোলে যখন ফ্রান্স পিছিয়ে পড়ে তখন ডাগআউটে বসা এমবাপের অভিব্যক্তিতে হতাশার ছাপ ছিল স্পষ্ট। দ্বিতীয়ার্ধে গোলের সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন কিংস্লে কোম্যান।
গোল করার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েও তিনি বল বাইরে মেরে বসেন। পরিবর্ত হিসেবে নেমে এমবাপে ফ্রান্সকে সমতা ফেরাতে সাহায্য করেন। ভাগ্য ভালো থাকলে তিনি জয়সূচক গোলটিও করতে পারতেন। সেই গোলটি করতে না পারার হতাশা রয়েছে এমবাপের। এমবাপের প্রয়াস ক্রসবারে প্রতিহত হয়।

ফ্রান্স নেশনস লিগে ডেনমার্কের কাছে হেরে গিয়েছিল। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ড্র করে। এবার অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধেও পিছিয়ে পড়ে ড্র। সোমবার ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ফের ম্যাচ রয়েছে। ক্রোয়েশিয়া ৬৯ মিনিটে করা মারিও পাসালিচের গোলে হারিয়ে দিয়েছে ডেনমার্ককে। ফলে ফ্রান্সের সামনে লড়াই বেশ কঠিন।
এমবাপে বলেন, কোচ আমার প্রয়োজন বোধ করলে আমি নিজের সেরাটা দিতে প্রস্তুত। ছুটির আগে ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ জিতলে আমাদের কিছুটা সুবিধাও হবে। উল্লেখ্য, ক্রোটদের বিরুদ্ধে খেলার পর ফ্রান্সের পরবর্তী ম্যাচ থাকবে সেপ্টেম্বরে অস্ট্রিয়া ও ডেনমার্কের বিরুদ্ধে।
তবে দলের এই পারফরম্যান্স বিশ্বকাপের আগে অস্বস্তিতে রাখছে না কোচ দিদিয়ে দেশঁকে। তিনি বলেন, আমরা যেভাবে খেলছি তাতে আমি সন্তুষ্ট। অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধেও আমরা ভালো খেলেছি। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতেই ছিল। এবারের কাতার বিশ্বকাপে ফ্রান্সের গ্রুপেই রয়েছে ডেনমার্ক। এই গ্রুপের বাকি দলগুলি হলো তিউনিশিয়া এবং পেরু বা নিউজিল্যান্ড (যারা যোগ্যতা অর্জন করবে)।
এছাড়া, এর আগের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষেও পূর্ণ পয়েন্ট অর্জন করতে পারেনি ফ্রান্স। প্যারিসের ন্যাশনাল স্টেডিয়াম, দুদিন আগে যেখান থেকে এমবাপ্পের সামনে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে নিয়ে গিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এবার সেই একই মঞ্চে ডেনমার্কের সামনে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে কিলিয়ান। যদিও দিন শেষে তা ছিল বড্ড মলিন। ম্যাচের প্রথম গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল অতিথিরা। যদিও ফরোয়ার্ডের ভুলে জালে যায়নি বল। বেঁচে যায় ফ্রান্স।
পাল্টা আক্রমণের সুযোগ আসে ফরাসিদের সামনেও। কিন্তু ক্লাবের বেনজামার সঙ্গে জাতীয় দলের বেনজামার যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। বলটাকে প্রতিপক্ষের গায়ে মেরে হতাশ করেন সমর্থকদের। পরে আবার গোলও করেছিলেন তিনি, যদিও তা বাতিল হয়ে যায় অফসাইডে।

নিজেদের মাঠে ম্যাচজুড়ে দাপট, করিম বেনজেমার দুর্দান্ত গোলও জেতাতে পারল না ফ্রান্সকে। পিছিয়ে পড়েও শেষ দিকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে উয়েফা নেশন্স লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে দিয়েছে ডেনমার্ক। শুক্রবার (৪ জুন) প্যারিসের স্তাদে ফ্রান্সে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ২–১ গোলের জয় পেয়েছে ডেনিশরা। সফরকারীদের হয়ে দুটি গোলই করেন আন্দ্রেয়াস কর্নিলিউস।
ম্যাচজুড়ে দাপট দেখিয়েছে ফ্রান্স। বল দখলের পাশাপাশি আক্রমণেও এগিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে করিম বেনজেমারা। গোলের উদ্দেশ্যে নেওয়া মোট ১৯ শটের ৬টি লক্ষ্য ছিল ফরাসিদের। অন্যদিকে, ডেনমার্কের ৮ শটের পাঁচটিই ছিল লক্ষ্য।
এরপরই ম্যাচের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সামনে পড়তে হয় দিদিয়ের দেশমকে। আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন কিলিয়ান এমবাপ্পে। গোলশূন্য অবস্থাতেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।
বিরতি থেকে ফিরে আর গোলের জন্য কষ্ট করতে হয়নি স্বাগতিকদের। ৫১ মিনিটেই দলকে এগিয়ে দেন কারিম বেনজামা। এনকুকুর সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়া এবং ফুটবলীয় স্কিলের অসাধারণ এক প্রদর্শনী দেখে ফরাসি সমর্থকরা।
গোল খেয়ে যে দমে যায় ডেনমার্ক, তা কিন্তু নয়। বরং দ্বিগুণ গতিতে হামলে পড়ে চ্যাম্পিয়ন শিবিরে। ৬৮ মিনিটে যার ফলও পেয়ে যায় তারা। অফসাইড ট্র্যাপ করতে গিয়ে ভুল করে বসেন ফরাসি ডিফেন্ডাররা। সুযোগ বুঝে স্কোর করেন কর্নিলিউস।
সমতায় থাকা ম্যাচটা জমে উঠে ৮০ মিনিটের পর থেকেই। দুই গোলরক্ষকের ওপর দিয়ে রীতিমতো ঝড় বইয়ে দেন ফরোয়ার্ডরা। কিন্তু স্মাইকেল আর লরিস ছিলেন অপ্রতিরোধ্য।
যদিও, ৮৮ মিনিটে ব্যর্থ হন হুগো লরিস। কর্নিলিউসের কোনাকুনি শটে স্তব্ধ হয়ে যায় স্তাদে দি ফ্রান্স। ২–১ এর স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ডেনিশরা। এমবাপ্পের ইনজুরির সঙ্গে হারের হতাশাও ভর করে ফরাসি শিবিরে।
আরও পড়ুন:
- ওয়েলসের ৬৪ বছর পর বিশ্বকাপে পদার্পণ
- মরিনহোর স্পেশাল ওয়ান হয়ে ওঠা
- মার্সেলোর অশ্রুশিক্ত বিদায়
- হ্যালান্ডের কাছে গোল করা খুব সহজ !
- রিকুয়েলমে; কোচের প্রভাবে যার ফুটবল ক্যারিয়ারের বলি!
- ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৫০, কেন খেলেনি ভারত?
- ফুটবল বিশ্বকাপে মাঠের মজার ঘটনা
- ফুটবল বিশ্বকাপের শুরু যেভাবে [ The way the football world cup started ]
- ফুটবলের যত কুসংস্কার [ The superstition in Football ]
- স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল : ফুটবল দিয়েই মুক্তিযুদ্ধ [ Shadhin Bangla Football Team, 1971]
- ফুটবল বিশ্বে স্বপ্নপূরণ এবং স্বপ্নভঙ্গের এক সপ্তাহ
- ফুটবল বিশ্বে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মুসলিমদের প্রতি সম্মান
- বৃষ্টির দিনের মন মাতানো ফুটবল
- ফুটবলকে বিদায় জানালেন কার্লোস তেভেজ
- রোনালদিনহো গাউচোঃ ফুটবল পায়ে ম্যাজিক দেখানো এক যাদুকর