বিশ্বের অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ [ Franchise League ] এর তুলনায় আইপিএলেই বাংলাদেশীরা অবহেলিত

বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের এক অনবদ্য অংশ হয়ে উঠেছে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ [ Franchise League ] গুলো। ২০০৮ সালে , ভারতে আইপিএল শুরু হওয়ার মাধ্যমে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়। এখন শুধু ভারতেই নয় , বরং বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া,  উইন্ডিজ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা , আফগানিস্তান এমনকি হিমালয়ের দেশ নেপালেও বসছে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের পসরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি-লিগেই বিভিন্ন বাংলাদেশি ক্রিকেটার সুযোগ পেয়েছেন, পেয়েছেন প্রাপ্য সম্মানও। তবে, অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ [ Franchise League ] এর তুলনায় আইপিএলেই বাংলাদেশি ক্রিকেটারেরা অনেক বেশি অবহেলিত।

পাকিস্তান সুপার লিগ:

পাকিস্তান সুপার লিগ, পিএসএলে বাংলাদেশি অনেক ক্রিকেটার অংশগ্রহণ করেছেন। তামিম ইকবাল [ Tamim Iqbal ], সাকিব আল হাসান [ Shakib Al Hasan ] , মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ [ Mahmudullah Riyad ], মুশফিকুর রহীম [ Mushfiqur Rahim ], মোস্তাফিজুর রহমান [ Mustafizur Rahman ] এর মতো তারকা ক্রিকেটারদের পাশাপাশি সাব্বির রহমান  এবং আনামুল হক বিজয়ের মতো তরুণ ক্রিকেটারেরাও খেলেছেন পিএসএলের মঞ্চে। তামিম পিএসলের পেশাওয়ার জালমির হয়ে দুই মৌসুম এবং লাহোর কালান্দার্সের হয়ে এক মৌসুম খেলেছেন।

বিশ্বের অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের তুলনায় আইপিএলেই বাংলাদেশীরা অবহেলিত
পেশাওয়ার জালমির হয়ে ব্যাট করছেন তামিম ইকবাল

তামিম ইকবাল ছাড়াও, টি টোয়েন্টি ফরমেটের  সাবেক বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান পিএসএল ফ্র্যাঞ্চাইজি কারাচি কিংস এবং পেশাওয়ার জালমির হয়ে খেলেছেন। বাংলাদেশের সাবেক উইকেটকিপার ব্যাটার মুশফিকুর রহিমও পিএসএলে খেলেছেন কারাচি কিংসের হয়ে।

এছাড়া, সাইলেন্ট কিলার খ্যাত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও পিএসএল খেলেছেন কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে যেখানে, তিনি তার ব্যাটিং এবং বোলিং উভয়ের নৈপুণ্যই প্রদর্শন করে গেছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের আগের নিয়মিত মুখ, হার্ডহিটার ব্যাটার খ্যাত সাব্বির রহমানও পিএসএল ফ্র্যাঞ্চাইজি পেশাওয়ার জালমির হয়ে খেলেছেন।

এছাড়াও, সর্বপ্রথম পাকিস্তানের মাটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া পাকিস্তান সুপার লিগ ফাইনালে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে ফাইনালে খেলেন ব্যাটার আনামুল হক বিজয়। এছাড়াও, বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানও পিএসএলে লাহোর কালান্দার্সের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন।

ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ :

ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ , সিপিএলেও বেশকিছু বাংলাদেশি খেলোয়াড় অংশগ্রহণ  করেছেন। তামিম ইকবাল , সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এমনকি তরুণ তুর্কি লিটন দাসও ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে অংশগ্রহণ করেছেন। তামিম ইকবাল সর্বপ্রথম ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে অংশগ্রহণ করেছেন ২০১৩ সালে, সেন্ট লুসিয়া জুকসের হয়ে।

বিশ্বের অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের তুলনায় আইপিএলেই বাংলাদেশীরা অবহেলিত
সিপিএলে, ব্যাট করছেন তামিম ইকবাল

তবে, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন সাকিব আল হাসান। সাকিব আল হাসান এখন পর্যন্ত জামাইকা তালহওয়াস এবং বারবাডোস ট্রাইডেন্টসের হয়ে খেলেছেন সিপিএলে। আরেক বাংলাদেশি অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলেছেন। তিনি জামাইকা তালাহওয়াস এবং সেন্ট লুসিয়া জুকসের হয়ে খেলেছেন ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ছাড়াও, বাংলাদেশি উদীয়মান ব্যাটার লিটন দাসও ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলেছেন জামাইকা তালাহওাসের হয়ে। এছাড়া, অফস্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজও সিপিএলের দল ত্রিনিবাগো নাইট রাইডার্সের দলে ছিলেন, যদিও একটিও নাইট রাইডার্সের হয়ে একটি ম্যাচেও মাঠে নামা হয়নি তার।

এছাড়াও, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ [ Franchise League ], এসএলপিলে বহু বাংলাদেশি ক্রিকেটার অংশগ্রহণ করেছেন। বর্তামানে, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড পরিচালিত লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে বাংলাদেশের বোলার আল আমিন হোসেনসহ বহু ক্রিকেটার দল পেয়েছেন।

বিশ্বের অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের তুলনায় আইপিএলেই বাংলাদেশীরা অবহেলিত
সিপিএলে, ব্যাট করছেন সাকিব আল হাসান

যদিও, আল আমিন হোসেন ছাড়া বাকি ক্রিকেটারদের বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ খেলার ছাড়পত্র পায়নি। বিশ্বের যেকোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি-লিগেই বাংলাদেশি  ক্রিকেটারদের তাদের যোগ্যতা বিবেচনা করে দলে নেয়া হয় এবং নিয়মিত  সুযোগ দেয়া হয়, তাদের নিজেদের প্রমাণ করার জন্য।

কিন্তু, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ আইপিএলে, বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের তেমনভাবে রেট করা হয় না। এর পেছনের কারণ হিসেবে অনেকে বাংলাদেশিদের প্রতি তাদের অবহেলা  মনে করলেও ঠিক তেমনটা নয়।

একশো কোটিরও বেশি মানুষের বাস ভারতে। এখানে, সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা এই ক্রিকেটই। অনেকে তো ক্রিকেটকে নিজের ধর্মও মানেন সেখানে। কাজেই, ক্রিকেট ভারতীয়দের সর্বাধিক প্রিয় খেলা হওয়ার কারণে, সেখানে ক্রিকেটারদের সংখ্যাও অনেক। আর এ কারণেই, ভারতের সব অঞ্চল থেকেই অনেক ট্যালেন্টেড ক্রিকেটার উঠে আসছে যার কারণে, বর্তমানে বিদেশি খেলোয়াড়দের প্রতি নির্ভরতা কমিয়ে দিয়েছে আইপিএলের দলগুলো।

বিশ্বের অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের তুলনায় আইপিএলেই বাংলাদেশীরা অবহেলিত
লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে উইকেট পাওয়ার পর আল আমিন হোসেন

যুজবেন্দ্র চাহাল [ Yuzvendra Chahal ], কুলদীপ যাদব [ Kuldeep Jadhav ], রবীচন্দ্রণ অশ্বিন [ Ravichandran Ashwin ], রবীন্দ্র জাদেজা [ Ravindra Jadeja ] র মতো ওয়ার্ল্ড ক্লাস স্পিনারদের পাশাপাশি রোহিত শর্মা, ভিরাট কোহলি, আজিঙ্কিয়া রাহানের মতো অভিজ্ঞ স্টার ব্যাটাররা তো আছেনই। এছাড়াও, রিশাভ পান্ত, শ্রেয়াস আইয়ার, সুর্যকুমার জাদভের মতো উঠতি তারকারা তো আছেনই। সব মিলিয়ে ভারতীয় আনক্যাপড অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড়েরা তো আছেনই।

পুরো ভারতে এমন তারকা লোকাল খেলোয়াড়দের মিলনমেলা এই আইপিএলই। আইপিএলে ভারতীয় ওয়ার্ল্ডক্লাস ক্রিকেটারদের আধিক্যের কারণে, বিদেশি খেলোয়াড়েদের আধিক্য অনেক পরিমাণে কমেছে। যার কারণে, শুধু মাত্র বিশ্বের প্রথম সারির এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রভাব বিস্তার করা সেরা খেলোয়াড়েরাই আইপিএলে সুযোগ পেয়ে থাকেন।

এছাড়াও, আইপিএলে প্রত্যেক বছর প্লেয়ার্স ড্রাফটে টি টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট খেলোয়াড়ই আইপিএলের দলগুলো খুঁজে থাকে। কিন্তু, এতো বছরেও বাংলাদেশ টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে পিছিয়ে থাকার কারণে এবং বৈশ্বিক টি টোয়েন্টি আসরগুলোতে বাংলাদেশের অতিসাধারণ পারফর্ম্যান্স , আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের প্রতি এক উদাসীনতার জন্ম দিয়েছে এবং মূলত এ কারণেই আইপিএলে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের আধিক্য দেখা যায় না।

 

আরও পড়ুন [ Sports Gurukul, স্পোর্টস্ গুরুকুল ]:

আইপিএলে বিভিন্ন সময়ে টাইগারদের অংশগ্রহণ

Leave a Comment