হ্যান্ডবল খেলার আইন কানুন । খেলাধুলার আইন

হ্যান্ডবল খেলার আইন কানুন নিয়ে আজকের আলোচনা। হান্ডবল একটি অতি প্রাচীন খেলা। গ্রীক কবি হোমারের ওডিসি মহাকাব্যে এই খেলার উল্লেখ রয়েছে। প্রাক খ্রীষ্টীয় যুগে নীলনদের উপত্যকা ভূমিতে বল নিয়ে যে সব খেলা প্রচলিত ছিল, তার সব ক’টিই ছিল হাতের খেলা। দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতকে জার্মান গীতি কবিতায় ‘ক্যাচ বল’ (Catch Ball) জাতীয় খেলার উল্লেখ রয়েছে ।

কয়েক শতাব্দী হাতের খেলায় আজকের দিনের বলের অনুরূপ গোলাকার উপকরণ ব্যবহৃত হলে সেই খেলার সাথে আধুনিক কালের হ্যান্ডবল খেলার খুব বেশি সংযোগ রয়েছে বলে মনে হয় না। এই ধরণের অতীত-বর্তমান খেলার মধ্যে ঐতিহ্যগত সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বে বস্তুতঃ খেলার ধরণ পদ্ধতির দিক দিয়ে আজকের হান্ডবল খেলা জগতে সম্পূর্ণ নতুন একটি সংযোজন ।

 

হ্যান্ডবল খেলার আইন কানুন

 

হ্যান্ডবল খেলার আইন কানুন । খেলাধুলার আইন

আধুনিক আউটডোর হ্যান্ডবল খেলার জন্য কেউ কেউ জার্মানিতে মনে করেন। ১৯০৪ সালে ডেনমার্কের জনৈক ক্রীড়া শিক্ষক হোলজার নিয়েলসেন ‘হ্যান্ডরোল্ড’ (Handbold) নামে একটি খেলা প্রবর্তন করেন। ১৯১৭ সালে মহিলাদের ক্রীড়া- শিক্ষক বার্লিনের ম্যাক্স-হিসার মেয়েদের জন্যে অভিনব পদ্ধতির হ্যান্ডবল খেলার প্রবর্তণ করেন । এর দুই বৎসর পর বার্লিনের অপর একজন ক্রীড়া শিক্ষক ‘কালশিলেঞ্জ’ এই খেলায় তার নিজস্ব পদ্ধতি সংযোজন করে এর উৎকর্ষ সাধন করেন।

তিনিই সব প্রথম এই খেলায় ফুটবল খেলার কতিপয় পদ্ধতি সংযোজন করেন এবং খোলা মাঠে এই খেলা প্রচলন করেন। ১৯২০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি শিলেঞ্জ প্রবর্তিত পদ্ধতিতে বার্লিনে দুই দলের প্রতিযোগিতামূলক খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২৩ সালে ম্যাক্স হিসার প্রবর্তিত পদ্ধতিতে বার্লিন ও ড্রেসডেনের দুটি মহিলা দলের মধ্যে আন্তঃনগর হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

১৯২৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর হ্যালীস্যালীতে জার্মান ও অস্ট্রিয় দলের মধ্যে হ্যান্ডবলের প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় থেকেই হ্যান্ডবল খেলা একটি আন্তর্জাতিক খেলার মর্যাদা লাভ করে এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির লক্ষ্যে এই খেলার নিয়ম কানুন পুনর্বিন্যাস করা হয়।

 

হ্যান্ডবল খেলার আইন কানুন

 

১৯২৬ সালে জার্মান এ্যামেচার এ্যাথলেটিকস ফেডারেশন কমিশন কর্তৃক এই নিয়ম কানুন মঞ্জুরী লাভ করে। ১৯২৮ সালে আমস্টার্ডামে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, গ্রীস, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, সুইডেন, চোকোশ্লোভাকিয়া, জার্মানি এই ১১টি দেশের সমন্বয়ে ইন্টারন্যাশনাল এ্যামেচার হ্যান্ডবল ফেডারেশন (IAHF) গঠিত হয়। ১৯৩৬ সালে বার্লিনে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক খেলায় খোলা মাঠে হ্যান্ডবল খেলা প্রদর্শিত হয় । এতে ১০টি দেশ অংশ নেয়। শিরোপা জয় করে জার্মানি। দ্বিতীয় অস্ট্রিয়া তৃতীয় হয় সুইজারল্যান্ড।

খোলা মাঠে এই খেলার প্রসারের সাথে সাথে উত্তর ইউরোপে এটিকে ইনডোর খেলা হিসেবে জনপ্রিয় করে তোলা হয় । এদেরই প্রচেষ্টায় রূপলাভ করে নতুন পদ্ধতির হ্যান্ডবল খেলা- “হেলেন হ্যান্ডবল” বা ইনডোর হ্যান্ডবল। ১৯৪৬ সালে কোপেনহেগেনে নবগঠিত ইন্টারন্যাশনাল হ্যান্ডবল ফেডারেশন” (IHF) একে স্বীকৃতি প্রদান করে। এই সময় থেকেই হ্যান্ডবল খেলার দ্রুত প্রসার ঘটে এবং এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে ।

১৯৬৫ সালে মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির (IOC) সম্মেলনে ১৯৭২ সালে মিউনিখে অনুষ্ঠেয় বিংশতিতম অলিম্পিক খেলার কর্মসূচীতে হ্যান্ডবল খেলার অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ইউরোপে বরাবরই হ্যান্ডবল একটি জনপ্রিয় খেলা । ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ৯টি জাতীয় ফেডারেশনে এবং প্রায় দুই লক্ষ দল এবং ৪.৫ মিলিয়ন খেলোয়াড় আন্তর্জাতিক হ্যান্ডবল ফেডারেশনের (IHF) অন্তর্ভুক্ত হয়।

 

হ্যান্ডবল খেলার আইন কানুন

 

১৯৭৪ সালের দিকে হ্যান্ডবল খেলা এশিয়ায় জনপ্রিয়তা লাভ করে। ঐ বৎসর তেহরানে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমস উপলক্ষে সমবেত ক্রীড়ামোদীদের উদ্যোগে এশিয়ান হ্যান্ডবল ফেডারেশন’ (AHF) গঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে কুয়েতে ফেডরেশনের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠাকার্য সম্পন্ন হয়। কুয়েতে ফেডারেশনের সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশে প্রথম হ্যান্ডবল খেলার প্রচলন ঘটে ১৯৮২ সালের জুন মাসে। ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আয়োজিত ছেলেদের একটি প্রদর্শনী খেলার মাধ্যমে এদেশে হ্যান্ডবল খেলার উদ্বোধন ঘটে। ঐ বৎসর ১৭ই নভেম্বর প্রাক্তন হকি স্টেডিয়ামে প্রথম হ্যান্ডবল লীগ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে প্রথম জাতীয় মহিলা হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা এবং পৃথকভাবে পুরুষ ও মহিলাদের প্রথম বর্ষাকালীন হ্যান্ডবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয় ।

১৯৮৩ সালের ৮ই সেপ্টেম্বের জাতীয় ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ড ভবনে অনুষ্ঠিত ক্রীড়ামোদীদের এক সভায় ‘বাংলাদেশ হ্যান্ডবল এসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনে রূপান্তরিত হয়। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ হ্যান্ডবল রেফারিজ এসোসিয়েশন গঠিত হয়।

 

 

গুগুল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

বাংলাদেশে হ্যান্ডবল খেলার বয়স সবেমাত্র ১৩ বছর। কোন দেশে নতুন প্রবর্তিত খেলার প্রসারের ক্ষেত্রে এই সময়কাল নেহাত নগণ্য। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন ক্রীড়া-সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ক্লাবে এই খেলার শুভ উদ্বোধন ঘটেছে। তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে জাগ্রত হয়েছে এই খেলার প্রতি আশাতীত আগ্রহ। বাংলাদেশে হ্যান্ডবল খেলার জনপ্রিয়তার সাথে এর মানও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৯৩’র জুন মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় (IOC) অলিম্পিক সলিডারিটি হ্যান্ডবল প্রশিক্ষণ কোর্স ।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment