ক্রিকেটের রোলিং, সুইপিং ও মোয়িং পীচে পানি দেয়া এবং ক্রীজে পুনরায় দাগ দেয়া । ক্রিকেট খেলার ১০ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন

ক্রিকেটের রোলিং, সুইপিং ও মোয়িং পীচে পানি দেয়া এবং ক্রীজে পুনরায় দাগ দেয়া বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ক্রিকেট খেলার ১০ নম্বর আইনে। আজ ক্রিকেট খেলার দশ নম্বর আইন বা রোলিং, সুইপিং ও মোয়িং পীচে পানি দেয়া এবং ক্রীজে পুনরায় দাগ দেয়া নিয়ে আলাপ করবো।

ক্রিকেটের রোলিং, সুইপিং ও মোয়িং পীচে পানি দেয়া এবং ক্রীজে পুনরায় দাগ দেয়া । ক্রিকেট খেলার দশ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন

ক্রিকেটের রোলিং, সুইপিং ও মোয়িং পীচে পানি দেয়া এবং ক্রীজে পুনরায় দাগ দেয়া । ক্রিকেট খেলার ১০ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন

১। রোলিং

ম্যাচের প্রথম ইনিংস ছাড়া ম্যাচ চলার সময়ে প্রত্যেকদিন খেলা আরম্ভের আগে ব্যাটিং দলের অধিনায়কের অনুরোধে প্রত্যেকটি ইনিংস আরম্ভের আগে পীচ রোল করতে পারা যাবে। অবশ্যই তার জন্য ৭ মিনিটের বেশি সময় দেয়া হবে না। উপরন্তু টসের পরে ও ম্যাচের প্রথম ইনিংসের আগে খেলা শুরু হতে যদি দেরি হয়, তখন ব্যাটিং দলের অধিনায়কের পীচ রোল করার অধিকার থাকবে, তবে তা যেন মিনিটের বেশি না হয়।

ম্যাচ চলার সময়ে অন্য কোন ক্ষেত্রে পীচ রোল করা যাবে না।

কোন দিনের খেলা শুরু হবার আগে ৭ মিনিটের রোলিং অনুমোদিত, তবে তা খেল শুরুর আধঘন্টা আগে করতে হবে, তার আগে নয়। তবে ব্যাটিং দলের অধিনায়ক ইচ্ছা করলে সেই রোলিং খেলা শুরুর ১০ মিনিট আগ পর্যন্ত দেরি করতে পারেন।

যদি কোন অধিনায়ক পুনরায় খেলা শুরু হবার ১৫ মিনিট কম সময়ের আগে তার ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করেন এবং এরজন্য তার বিপক্ষ অধিনায়ক ৭ মিনিটের রোলিং করার মনোনয়নের অধিকার থেকে বাধাপ্রাপ্ত হন কিংবা অন্য যে কোন কারণে। বাধাপ্রাপ্ত হন তাহলে সেই রোলিং-এর সময় সাধারণ খেলার সময় থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হবে।

ক্রিকেটের রোলিং, সুইপিং ও মোয়িং পীচে পানি দেয়া এবং ক্রীজে পুনরায় দাগ দেয়া । ক্রিকেট খেলার দশ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন

২। পীচ সুইপিং

ম্যাচ চলাকালীন যদি পীচ সুইপিং- এর দরকার হয় তা হলে তা করা যাবে। তবে উপরোক্ত ১নং এ প্রদত্ত ৭ মিনিট পীচ রোলিং এর সময় যেন লঙ্ঘন না করা হয়।

৩। পীচ মোয়িং

(অ) মাঠ কর্তৃপক্ষ এবং আম্পায়ারের দায়িত্ব

ইনিংসের জন্য টস করার আগে যে সব মোয়িং হয়ে থাকে তার দায়িত্ব মাঠ কর্তৃপক্ষের উপর বর্তাবে। তারপর সেগুলি আম্পায়ারদের তদারকে কার্যকরী হবে।

(আ) প্রাথমিক মোয়িং

যে নির্দিষ্ট দিনে খেলা শুরু হবার কথা কিংবা বিলম্বে শুরুর ক্ষেত্রে যেদিন খেলা শুরু হবে আসা করা যায় সেদিন খেলা শুরু হবার আগে পীচ মোয়িং করা হবে।

(ই) দুই বা তার বেশি দিনের খেলায় পরবর্তী মোয়িং

দুই বা তার বেশি দিনের ম্যাচে খেলা শুরু হবার আগে প্রতিদিন পীচে মোয়িং করা হবে। তবে যদি এই মোয়িং আবহাওয়া, বিশ্রামের দিন বা অন্য কারণগুলির জন্য করা না হয় তবে সেই পীচ প্রথমদিনে যেদিন আবার খেলা শুরু হবে, সেদিন মোয়িং হবে।

(ঈ) দু’দিন বা তার বেশি দিনের ম্যাচে পীচের বহির্ভাগ মোয়িং

উভয় দল যাতে মাঠের অবস্থা খেলার জন্য যতটা সম্ভব সমভাবে পায় সেটা নিশ্চিত করার জন্য সাধারণত পীচের বহির্ভাগ প্রতিদিন ম্যাচ শুরু হবার আগে মোয়িং করা হবে। অবশ্য যদি মাঠ বা আবহাওয়াও অবস্থা অনুমোদন যোগ্য হয়। এই আইনের টীকা (খ) দেখুন ।

 

ক্রিকেটের রোলিং, সুইপিং ও মোয়িং পীচে পানি দেয়া এবং ক্রীজে পুনরায় দাগ দেয়া । ক্রিকেট খেলার দশ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন

 

৪। পানি দেয়া

ম্যাচ চলার সময় পীচে পানি দেয়া যাবে না।

৫। ক্রীজগুলিতে পুনরায় দাগ দেয়া

যখন সম্ভব হবে তখন ক্রীজগুলিতে আবার দাগ দিতে হবে।

৬। ফুটহোল রক্ষণাবেক্ষণ

ভিজে আবহাওয়ায় আম্পায়ারদ্বয় যখনই মনে করবেন যে খেলার সুবিধার জন্য বোলার ও ব্যাটসম্যানদের সৃষ্ট “ফুটহোল” পরিষ্কার করা বা শুকানোর দরকার আছে তখনই তারা তা নিশ্চত করবেন। দুই বা ততোধিক দিন ব্যাপী ম্যাচে যদি প্রয়োজন মনে হয় যে বোলারের ডেলিভারি স্ট্রাইডের জন্য সৃষ্ট পায়ের ‘ফুটহোল’ গুলি আবার ঘাসের দ্বারা পূরণ করতে হবে অথবা ঐ উদ্দেশে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় এমন কোন জমাটবাধা-বস্তু ব্যবহার করতে হবে, তাহলে আম্পায়াররা তা প্রতিদিনের খেলা শুরুর আগে অনুমোদন করবেন।

৭। ফুটহোলগুলি রক্ষা করা এবং পীচ পরিচর্যা করা

খেলা চলার সময় আম্পায়ারদ্বয় যে কোন ব্যাটসম্যানকে তার ব্যাট দিয়ে পীচ ঠুকতে এবং কাঠের গুঁড়া দিয়ে ‘ফুটহোলগুলি’ রক্ষা করতে অনুমোদন করেন। তবে এই শর্তে যে ঐ কারণে পীচের কোন ক্ষতি না হয় এবং আইন নং ৪২ (অসঙ্গত খেলা) লঙ্ঘন করা না হয় ।

টীকা

(ক) ঘাসহীন পীচ

উপরোক্ত আইন নং ১০ ঘাসের পীচগুলির ব্যাপারে প্রযোজ্য হবে। বহুদেশ নানা স্তরে ঘাসহীন পীচগুলিতেও ক্রিকেট খেলা হয়ে থাকে। যদিও এই কৃত্রিম পীচে খেলার পরিচালন ব্যবস্থা সবসময় ক্রিকেটের আইন অনুযায়ী হবে। তবুও এটা স্বীকৃত যে, গভর্নিংবডিদের পক্ষে কি রকম ঘাসহীন পীচ তাদের দেশে ব্যবহার করা হয় তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিশেষ নিয়মাবলী তৈরি করা কখনও কখনও প্রয়োজন হতে পারে। সফরকারী দেশের বিরুদ্ধে খেলাগুলিতে আগেই দুটি দলকে খেলার কোন বিশেষ নিয়মাবলী সম্পর্কে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে।

(খ) দুইদিন বা তার অধিক দিনের ম্যাচে পীচের বহির্ভাগ মোয়িং

মাঠ এবং আবহাওয়ার অবস্থা ছাড়া যদি অন্য কোন কারণে প্রতিদিনের এবং পূর্ণ মোয়িং সম্ভব না হয় তবে ম্যাচ চলাকালীন মোয়িং-এর জন্য কি পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে তা ইনিংসের জন্য টসের আগেই মাঠ কর্তৃপক্ষ আম্পায়ারদ্বয় ও দুই দলের অধিনায়ককে জানিয়ে দেবেন।

(গ) রোলার নির্বাচন

ব্যাটিং দলের অধিনায়কের রোলার নির্বাচনের ক্ষমতা থাকবে যদি একাধিক রোলার পাওয়া যায়।

 

ক্রিকেটের রোলিং, সুইপিং ও মোয়িং পীচে পানি দেয়া এবং ক্রীজে পুনরায় দাগ দেয়া । ক্রিকেট খেলার দশ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন

জ্ঞাতব্য বিষয়

মাঠ ও পীচ তৈরি করার জন্য তিনটি প্রধান ও প্রয়োজনীয় উপকরণ গ্রাউন্ডসম্যানের কাছে থাকা প্রয়োজন । (১) রোলার (২) মোয়ার এবং (৩) কাঠের ফ্রেম। যার সাহায্যে পীচের উপর ক্রীজগুলি সাদা চুন বা রঙ দিয়ে টানা হয়ে থাকে। অবশ্য মাঠ তৈরির আরও উপকরণ আছে, সেগুলির বিষয়ে এখানে বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই। রোলারের ওজন এই আইনে কোথাও বলা নেই। যদি বিবিধ ওজনের রোলার মাঠে পাওয়া যায় তবে অধিনায়কদ্বয় তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ইনিংস শুরু হবার আগে পাঁচ রোলিংয়ের জন্য সাধারণতঃ ১/২, ১ ও ১১/২ টন ওজন বিশিষ্ট রোলার মনোনয়ন করতে পারেন ।

ইনিংস মনোনয়নের জন্য টসের পূর্বে রোলার, মোয়ার ব্যবহারের সমস্ত দায়িত্ব মাঠ কর্তৃপক্ষের উপর। টস করার পর এই দায়িত্ব এসে পড়ে আম্পায়ারদের ও দুই অধিনায়কদের উপর। পীচে কোন রোলার কতক্ষণ ব্যবহার করা হবে তা নির্ধারণের দায়িত্ব হলো অধিনায়কদের, কিন্তু আম্পায়াররা রোলিং তত্ত্বাবধান করার জন্য উপস্থিত থাকবেন । পীচের উপর রোলিং করার তদারকীর ভার মাঠ কর্তৃপক্ষকে আগেই জানিয়ে দেবেন।

যদি কখনও পীচের উপর সুইপিং-এর প্রয়োজন হয় তাহলে এমনভাবে তার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে রোলিংয়ের সময়ের ব্যাঘাত না ঘটে। এমনকি দরকার হলে কোন ব্যাটিং দলের অধিনায়ক সুইপিং পরিত্যাগ পর্যন্ত করতে পারেন। মাঠ কর্তৃপক্ষের কাজ হচ্ছে, পীচ তৈরির জন্য কিছুটা পরিমাণ ভাল জমি পছন্দ করা। যার আয়তন হবে ৬৬×১০ফুট। জমির এই অংশটুকু মোরিং-এর দ্বারা ভাল করে মসৃণ এবং প্রয়োজনীয় রোলিং দ্বারা পীচ তৈরি করে প্রথম দিনে আম্পায়ারদের হাতে তুলে দেবেন।

যদি কখনও একটি ম্যাচ নির্দিষ্ট সময়সূচীর মধ্যে কোন কারণে শুরু না হয়ে টসের পর দেরিতে আরম্ভ হয় তবে রোলিং করার কাজও দেরিতে হবে এবং টসের দ্বারা ব্যাটিং দলের অধিনায়কের ইনিংস-সূচনার আগে যে রোলিং-এর নিয়ম আছে তাই প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ আগে পীচ সম্পূর্ণভাবে তৈরির পরও ব্যাটিং দলের অধিনায়ক ১০:১ আইন অনুযায়ী রোলিং-এর কাজ করতে পারেন, তবে তাকে খেলা শুরুর দশ মিনিট সময় বাকী থাকতে শেষ করতে হবে। কিন্তু সবসময় নজর রাখা উচিত যাতে ৭ মিনিট রোলিং-এর জন্য থাকে এবং ম্যাচটি সময়সূচী অনুযায়ী ঠিক সময়ে শুরু হয়। পীচ রোলিং বিষয়ে বহু তর্ক-বিতর্ক হবার পর স্থির হয় যে পীচের বিশেষ অংশ রোল করা যাবে না।

 

ক্রিকেটের রোলিং, সুইপিং ও মোয়িং পীচে পানি দেয়া এবং ক্রীজে পুনরায় দাগ দেয়া । ক্রিকেট খেলার দশ নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন

 

আগে পীচ একদিন অন্তর মোয়িং করা হত। কিন্তু এম. সি. সির ১৯৮০ সালের (কোড) আইন অনুযায়ী দুই বা ততোধিক দিনের ম্যাচে প্রতিদিন মোয়িং করার ব্যবস্থা হয়েছে। এই মোয়িং-এর কাজ টসের পর খেলা শুরুর আগে আম্পায়াররা তদারক করবেন। যদি কখনও আবহাওয়া, বিশ্রামের দিন বা অন্য কোন কারণে মোয়িং সম্ভব না হয় তবে যেদিন খেলা শুরু হবে সেই দিনই খেলার আগে আম্পায়াররা মোয়িং এর তত্ত্বাবধান করবেন । এই আইনের ৩নং উপধারা অনুযায়ী খেলার আগে পীচের বহির্ভাগ = (আউট ফিল্ড) মোয়িং প্রতিদিন করা যাবে। এটি করার উদ্দেশ্য হল, দুই দলই যেন পীচের বহির্ভাগের অবস্থা একরকম পায়।

যদি সম্ভব হয় খেলা শুরুর আগে প্রত্যেক দিন যেন মাঠের অবস্থা এরকম থাকে। কি ভাবে ব্যাটসম্যানের ‘ফুটহোলডস’ গুলি রক্ষণ ও জমাট করা যায় সেটিও লক্ষ্য করা উচিত। এছাড়া সব ক্রীজগুলিতে পুনরায় দাগ দেয়া হয়েছে কিনা তা দেখার প্রয়োজন আছে। কারণ নো বলের বর্তমান আইন অনুযায়ী বোলার প্রান্তের আম্পায়ারের পক্ষে বোলারের ডেলিভারি স্ট্রাইডে ফুট-ফন্ট লক্ষ্য করা বিশেষ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। শুধু তাই নয় তাদের পায়ের নিষ্পেষণে পপিং ক্রীজের ব্যাক এজের সাদা দাগ উঠে গিয়ে সেখানে ধুলিময় গর্তেরও সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে আম্পায়ারদেরও বোলারের সামনের পায়ের কোন অংশ পপিং-ক্রীজের ভিতরে আছে কিনা তা বিবেচনা করতে অসুবিধা ঘটে। তাই ক্রীজে বিরতির সময় পুনরায় দাগ দেয়া, ব্যাপারটি বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।

ব্যাটসম্যান ও বোলারের ফুটহোল্ড রক্ষার্থে সঠিক স্থানে (স্টাম্পের পিছনে) কাঠের গুঁড়ো রাখতে হবে। যাতে প্রয়োজনের সময় তা ব্যবহার করা যায়। ডেলিভারি স্ট্রাই পর্যন্ত বোলারের ফুটহোল্ড কাঠের গুঁড়ো ও ঘাসের চামড়ার সাহায্যে রক্ষা করা যেতে পারে। সবচেয়ে ইনিংস-এর শেষ দিকে ব্যাটিং দলের ব্যাটসম্যানরা যাতে আইন নং ৪২ ভঙ্গ করে পীচের ক্ষতিসাধনের দ্বারা তখনকার ফিল্ডিং-এর দল অর্থাৎ যারা পরে ব্যাট করতে আসবে তাদের বিপদের মুখে ঠেলে না দিতে পারে, সে বিষয়ে আম্পায়ারদের অবশ্যই সতর্ক ও সক্রিয় থাকতে হবে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment