হ্যান্ডবল খেলার রেফারি । হ্যান্ডবল খেলার আঠারো নম্বর আইন । খেলাধুলার আইন

হ্যান্ডবল একটি দ্রুতগতির ও কৌশলনির্ভর দলগত খেলা। এই খেলায় রেফারিদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের উপরই নির্ভর করে পুরো ম্যাচের সুষ্ঠু ও ন্যায্য পরিচালনা। খেলাধুলার নিয়ম অনুযায়ী, হ্যান্ডবলের আঠারো নম্বর আইন রেফারিদের দায়িত্ব, কর্তৃত্ব ও মাঠ পরিচালনার নির্দেশনা নির্ধারণ করে দেয়।

👥 রেফারির সংখ্যা ও সহকারীরা

১। প্রতিটি খেলায় সমান ক্ষমতাসম্পন্ন দুইজন রেফারি থাকবেন।
২। তাদের সহযোগিতায় থাকবেন একজন সময়রক্ষক (Timekeeper) ও একজন স্কোরার (Scorer)

🧾 রেফারিদের প্রাথমিক দায়িত্ব

৩। খেলার পূর্বে রেফারিদ্বয়:

  • মাঠ, গোলপোস্ট, বল, স্কোরশীট, খেলোয়াড় ও তাদের জার্সি পরীক্ষা করবেন।

  • বল নির্বাচনের ক্ষেত্রে মতবিরোধ হলে, যার নাম স্কোরশীটে আগে লেখা থাকে—তাঁর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

  • খেলোয়াড় ও কর্মকর্তার সংখ্যা নিশ্চিত করবেন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিষয়ে অবহিত থাকবেন।

  • প্রয়োজনে যে কোনও অসুবিধা সমাধানে পদক্ষেপ নেবেন।

🎯 খেলা শুরুর আনুষ্ঠানিকতা

৪। প্রথম রেফারি (সাধারণত বেশি অভিজ্ঞ বা স্কোরশীটে প্রথম নামকৃত) টস পরিচালনা করবেন এবং দুই দলনেতা ও দ্বিতীয় রেফারির উপস্থিতিতে জয়ী দল নির্ধারিত করবে কে প্রথম থ্রো অফ নেবে।

৫। খেলা শুরু হলে:

  • দ্বিতীয় রেফারি ‘কোর্ট রেফারি’ হিসেবে বল পাওয়া দলের পেছনে দাঁড়িয়ে প্রথম বাঁশি বাজান।

  • প্রথম রেফারি থাকেন গোল লাইন রেফারি হিসেবে।

  • খেলার সময় উভয় রেফারি প্রয়োজন অনুযায়ী স্থান (Side) পরিবর্তন করবেন।

📜 রেফারিদের ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত

৬। উভয় রেফারি সমানভাবে আইন প্রয়োগ করবেন, অপরাধ শনাক্ত করবেন এবং শাস্তি দেবেন।
যদি কোন কারণে একজন রেফারি খেলা পরিচালনায় অক্ষম হন, অন্যজন একাই খেলা পরিচালনা করবেন।

৭। রেফারিদের বাঁশি বাজানোর নিয়ম:

  • কোর্ট রেফারি: সাধারণ থ্রো, টাইম আউট, খেলা শুরু ও গোল হওয়ার সময়।

  • গোল লাইন রেফারি: গোল হলে, খেলা শেষ হলে (যদি সময়রক্ষক বা ঘড়ির সংকেত না থাকে)।

৮। যদি উভয় রেফারি একই সঙ্গে বাঁশি বাজান এবং শাস্তির ধরনে মতানৈক্য হয়, তবে তুলনামূলক বড় অপরাধের শাস্তি কার্যকর হবে।

৯। যদি একই সময়ে রেফারিরা ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন, তবে কোর্ট রেফারির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং খেলা তাঁর বাঁশির নির্দেশে পুনরায় শুরু হবে।

📝 নথিভুক্তকরণ ও রিপোর্টিং

১০। উভয় রেফারি:

  • প্রতিটি গোল, হুঁশিয়ারি, সাময়িক ও চূড়ান্ত বহিষ্কার নোট করবেন।

  • স্কোরশীট পূরণে সময়রক্ষক ও স্কোরারের কাজ নিরীক্ষা করবেন।

১১। খেলা আরম্ভ ও বন্ধ করার সিদ্ধান্ত রেফারিদের থাকবে। সময় নিয়ে মতানৈক্য হলে প্রথম রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।

১২। খেলা শেষে স্কোরশীট সঠিকভাবে পূরণ হয়েছে কিনা তা উভয় রেফারিকে নিশ্চিত করতে হবে।

⚖️ রেফারির সিদ্ধান্ত ও আপিল

১৩। মাঠে রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত
তবে, যদি কোনও আইনবহির্ভূত সিদ্ধান্ত হয়, সে ক্ষেত্রে দল আপিল করতে পারে।
খেলা চলাকালীন কেবলমাত্র দলনেতা (Captain) রেফারির সঙ্গে কথা বলতে পারবেন।

১৪। উভয় রেফারিই খেলা সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার ক্ষমতা রাখেন, তবে খেলা চালিয়ে যাওয়ার সব সম্ভাবনা খোঁজার পরই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

🧥 রেফারিদের পোশাক

১৫। রেফারিদের জন্য নির্ধারিত পোশাক হলো কালো রঙের জার্সি। এ পোশাক রেফারিদের চিহ্নিত করতে এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়।

রেফারিরা কেবল খেলাধুলার আইন প্রয়োগকারী নন, বরং খেলাটির সুষ্ঠুতা ও সৌন্দর্য রক্ষাকারী। হ্যান্ডবলের আঠারো নম্বর আইন রেফারিদের যে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব দিয়েছে তা খেলার গতি, নিয়ম, শৃঙ্খলা এবং খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, একজন দক্ষ রেফারি মানেই একটি নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক খেলা—যা খেলোয়াড় ও দর্শক উভয়ের জন্যই উপভোগ্য।

Leave a Comment