দীনেশ কার্তিকের ফিরে আশা

দীনেশ কার্তিক, বর্তমান ভারতীয় টি টোয়েন্টি দলের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। বর্তমান ভারতীয় দলের সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় দীনেশ কার্তিক। তবে, নিজের ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে কখনো দলে নিয়মিত হতে পারেননি দীনেশ কার্তিক। নিজের ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে তেমন ঈর্ষনীয় রেকর্ডের অধিকারী না হলেও, দীনেশ কার্তিকের জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় কীভাবে কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতিতেও লড়াই করে এগিয়ে যেতে হয়।

দিনেশ কার্তিকের জন্ম ১ জুন, ১৯৮৫ সালে ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশের চেন্নাইয়ে। ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম ব্যাটসম্যান কার্তিক উইকেট-রক্ষকেরও দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ ব্রেক বোলিংয়েও পারদর্শী তিনি। দলের নিয়মিত সদস্য হিসেবে টেস্ট ম্যাচ, একদিনের আন্তর্জাতিক ও টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। দলের মধ্যে আসা যাওয়ার মাঝে থাকলেও দীর্ঘ ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বহু চড়াই উতরাই পাড় করেছেন।

আগস্ট, ২০০৪ সালে ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হিয় দিনেশ কার্তিকের নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যগণ রাহুল দ্রাবিড়কে বিকল্প উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রাখলে এবং অন্যতম উইকেট-রক্ষক পার্থিব প্যাটেলের অফ ফর্মই এর প্রধান কারণ। লর্ড’স ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত খেলায় তিনি কেবলমাত্র এক রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। ইংল্যান্ডের তৎকালীন অধিনায়ক মাইকেল ভনকে অনিল কুম্বলের বোলিংয়ে ক্যাচ ধরতে না পারলেও পরবর্তীকালে লেগ সাইডে ভনকে স্টাম্পিং করেছিলেন ও আরও একটি ক্যাচ ধরেছিলেন।

] ২০০৪ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রতিযোগিতার একটি খেলায় কেনিয়া ক্রিকেট দলের বিপক্ষে তিনটি ক্যাচ ধরেছিলেন। তারপরও রাহুল দ্রাবিড়কে ইংল্যান্ড সফরের অধিকাংশ সময়ই উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল।

একদিনের দলে মহেন্দ্র সিং ধোনি’র আগমন ঘটলে তিনি দল থেকে জায়গা হারান এবং  এপ্রিল, ২০০৬ সাল পর্যন্ত কোন ওডিআই খেলতে পারেননি। ২০০৬ সালে ভারতের টি টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বপ্রথম ম্যাচে নিজের ক্যামিওর মাধ্যমকে ভারতকে ম্যাচ জেতান কার্তিক। সেই ম্যাচের ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন কার্তিক।

২০০৭ সালে ভারতের ইংল্যান্ড সফরেও খেলেছেন, এছাড়াও সেই একই বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে সেঞ্চুরি করেন দীনেশ কার্তিক। ২০০৭ সালে, টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে শিরোপা জয়ী ভারত দলের সদস্যও ছিলেন কার্তিক।

২০০৯ সালে ভারতের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দলে ছিলেন কার্তিক। ২০১০ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাটিতে একটি আকর্ষনীয় ফিফটি হাকান কার্তিক যেটি পরবর্তীতে ভারতকে ম্যাচ জেতাতে সাহায্য করেছিল। ২০১০ সালে, উইন্ডিজে অনুষ্ঠিত টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে ওপেনিংয়ে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন কার্তিক। এছাড়াও, একই বছর ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং জিম্বাবুয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজেও ভারতীয় দলে হয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন কার্তিক।

দীনেশ কার্তিক পুনরায় ভারতীয় দলে ফিরেন ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। সেবার ঘরোয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি টি টোয়েন্টির সর্বোচ্চ আসর আইপিএলে দুর্দান্ত ফর্মের কারণে ভারতীয় জাতীয় দলে সুযোগ পান কার্তিক। এছাড়াও, একই বছর জিম্বাবুয়ে সিরিজেও মহেন্দ্র সিং ধোনির পরিবর্তে দলে ছিলেন তিনি।

২০১৯ বিশ্বকাপেও ভারত দলের হয়ে খেলেছিলেন কার্তিক। তবে, সেই বিশ্বকাপে তেমন কোনো অতিমানবীয় পারফর্মেন্স না থাকার কারণে,  আর জাতীয় দল সুযোগ হয়নি কার্তিকের। বেশিরভাগ ক্রিকেটবোদ্ধাই ধরে নিয়েছিলেন হয়ত আইপিএল মাতানোর সুযোগ থাকলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতীয় জার্সি গায়ে মাঠ মাতানোর সুযোগ আর নেই।

তবে, ২০২২ আইপিএলে নিজের ব্যাটিংয়ে অবিশ্বাস্য এক ট্রান্সফর্মেশনের মাধ্যমে আবারো ভারতীয় টি টোয়েন্টি দলে সুযোগ পেলেন কার্তিক। ফিরেই দক্ষিণ আফ্রিকার এক ফিফটি এবং কিছু আক্রমণাত্মক ধারাবাহিক রান করেছেন কার্তিক। চলমান উইন্ডিজের বিপক্ষে টি টোয়েন্টি সিরিজেও প্রথম টি টোয়েন্টিতে তার ১৯ বলে ৪২ রানের সুবাদে ভারত প্রথম ম্যাচ জয়লাভ করতে সমর্থ হয়।

ব্যক্তিগত জীবন ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত কার্তিক ২০০৭ সালে নিকিতা কার্তিকের সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু সতীর্থ খেলোয়াড় বিজয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার গুঞ্জনের ফলে তাদের মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্ক বিবাহ-বিচ্ছেদে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে নভেম্বর, ২০১৩ সালে তিনি ভারতীয় স্কোয়াশ খেলোয়াড় দীপিকা পল্লীকলকে বিয়ে করেন।

ক্রিকেটের বাইরে এক খিলাড়ী এক হাসিনা নামের নাচের অনুষ্ঠানে নিগার খানের সাথে জুটি বেঁধে অংশ নিচ্ছেন কার্তিক। রেকর্ড সবচেয়ে কম বল খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন দিনেশ কার্তিক । আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে (বোলিং না করে) এর আগে সর্বনিম্ন ৮ বল খেলে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ব্র্যাড হজ।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment